অমৃতকথা

খাদ্য

শ্রুতিতে একটি প্রসিদ্ধ বাক্য আছে, ‘আহারশুদ্ধৌ সত্ত্বশুদ্ধিঃ সত্ত্বশুদ্ধৌ ধ্রুবা স্মৃতিঃ’। যখন আহার শুদ্ধ হয়, তখন সত্ত্ব শুদ্ধ হয়, এবং সত্ত্ব শুদ্ধ হইলে স্মৃতি অর্থাৎ ঈশ্বর-স্মরণ—নিজ পূর্ণতার স্মৃতি অচল ও স্থায়ী হয়।... রামানুজ এই ‘আহার’ শব্দ খাদ্য-অর্থে গ্রহণ করিয়াছেন—এবং ইহাকে তিনি তাঁহার দর্শনের একটি প্রধান অবলম্বন ও স্তম্ভ করিয়াছেন।... শঙ্করাচার্য বলেন, ‘আহার’ শব্দের অর্থ—ইন্দ্রিয়দ্বারা মনে যে চিন্তা-রাশি অপহৃত হয়।... উভয়ই আবশ্যক।... তবে গোল এইটুকু দাঁড়াইয়াছে যে, বর্তমানকালে আমরা শঙ্করাচার্যের উপদেশ ভুলিয়া গিয়া শুধু ‘খাদ্য’ অর্থটি লইয়াছি। এইজন্যই যখন আমি বলি—ধর্ম রান্না-ঘরে ঢুকিয়াছে, তখন লোকে আমার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়া উঠে। কিন্তু যদি মাদ্রাজে যাও, তবে তোমরাও আমার সহিত একমত হইবে। এ-বিষয়ে তোমরা বাঙালীরা তাহাদের চেয়ে অনেক ভাল। মাদ্রাজে যদি কোন ব্যক্তি খাদ্যের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, তবে উচ্চবর্ণের লোকেরা সেই খাদ্য ফেলিয়া দিবে। তথাপি সেখানকার লোকেরা এইরূপ খাদ্যাখাদ্য বিচারের দরুন যে বিশেষ কিছু উন্নত হইয়াছে, তাহা তো দেখিতে পাইতেছি না। যদি কেবল এ- খাওয়া-ও-খাওয়া ছাড়িলেই, এর-তার দোষদৃষ্টি হইতে বাঁচিলেই লোকে সিদ্ধ হইত, তবে দেখিতে মাদ্রাজীরা সকলেই সিদ্ধপুরুষ, কিন্তু তাহা নহে।
শঙ্করাচার্য বলেছেন—আহার অর্থে ‘ইন্দ্রিয়-বিষয়’, আর শ্রীরামানুজস্বামী আহার অর্থে ‘খাদ্য’ ধরেছেন। আমার মত হচ্ছে— তাঁদের ঐ উভয় মতের সামঞ্জস্য করে নিতে হবে। কেবল দিনরাত খাদ্যাখাদ্যের বাদবিচার করে জীবনটা কাটাতে হবে, না ইন্দ্রিয়সংযম করতে হবে? ইন্দ্রিয়সংযমটাই মুখ্য উদ্দেশ্য বলে ধরতে হবে; আর ঐ ইন্দ্রিয়সংযমের জন্যই ভাল-মন্দ খাদ্যাখাদ্যের অল্পবিস্তর বিচার করতে হবে। শাস্ত্র বলেন, খাদ্য ত্রিবিধ দোষে দুষ্ট ও পরিত্যাজ্য হয়: (১) জাতিদুষ্ট—যেমন পেঁয়াজ, রশুন ইত্যাদি। (২) নিমিত্তদুষ্ট—যেমন ময়রার দোকানের খাবার, দশগণ্ডা মাছি মরে পড়ে আছে, রাস্তার ধুলোই কত উড়ে পড়ছে! (৩) আশ্রয়দুষ্ট—যেমন অসৎ লোকের দ্বারা স্পৃষ্ট অন্নাদি। খাদ্য জাতিদুষ্ট ও নিমিত্তদুষ্ট হয়েছে কিনা, তা সকল সময়েই খুব নজর রাখতে হয়। কিন্তু এদেশে ঐদিকে নজর একেবারেই উঠে গেছে। কেবল শেষোক্ত দোষটি—যা যোগী ভিন্ন অন্য কেউ প্রায় বুঝতেই পারে না, তা নিয়েই যত লাঠালাঠি চলছে। আমাদের ধর্মটা যে রান্নাঘরে ঢুকিয়া সেখানেই আবদ্ধ থাকিবে—এইরূপ এক আশঙ্কা রহিয়াছে। আমরা এখন বৈদান্তিকও নই, পৌরাণিকও নই, তান্ত্রিকও নই; আমরা এখন কেবল ‘ছুঁৎমার্গী’, আমাদের ধর্ম এখন রান্নাঘরে। ভাতের হাঁড়ি আমাদের ঈশ্বর, আর ধর্মমত—‘আমায় ছুঁয়ো না, ছুঁয়ো না, আমি মহা পবিত্র!’ যদি আমাদের দেশে আর এক শতাব্দী ধরিয়া এই ভাব চলে, তবে আমাদের প্রত্যেককেই পাগলা-গারদে যাইতে হইবে। আজকাল এই খাদ্যের বিচার লইয়া ও বর্ণাশ্রম লইয়া খুব রব উঠিয়াছে। আর এই বিষয়টি লইয়া বাঙালীরাই সর্বাপেক্ষা অধিক চিৎকার করিতেছেন।
স্বামী বিবেকানন্দের ‘জাতি সংস্কৃতি ও সমাজতন্ত্র’ থেকে
7Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা