অমৃতকথা

ধ্বনি

মন যখন যে স্তরে উঠছে তদনুযায়ী সে এই যে মহাকাশের বিরাট প্রণবধ্বনি আদি কাল থেকে অনাদি কাল পর্যন্ত ধ্বনিত হয়ে এসেছে তাকেই বিভিন্ন ভাবে পেতে থাকে। কখনো প্রথমে শুনছে মেঘের গর্জন, কখনও শুনছে নূপুরের ধ্বনি, কখণও শুনছে সমুদ্রের গর্জন। এরকম ভাবে শুনতে শুনতে যখন মন ত্রিকুটির কাছে এসে যাচ্ছে তখন সে শোনে সুন্দর বাঁশীর শব্দ। মহাকাশের ওঙ্কারেরই বিভিন্ন অভিব্যক্তি। আর ত্রিকুটি অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে ওই রকমের ওঙ্কারধ্বনি শুনতে থাকে আর যখন পরম শিব বা কৃষ্ণের কাছে এসে পৌঁছে যায় তখন আর কোনও ধ্বনি নেই। তখন নীরবতাই ধ্বনি, there is no expression। এই হ’ল সাধনার কতকগুলো গোপন দিক। এই ওঙ্কারেরই বিভিন্ন স্তর সাধক বিভিন্ন সময়ে শুনবে, তার গভীর সাধনার সময়ে, তার মধুর সাধনার সময়ে। এরই নাম কৃষ্ণের মুরলীধ্বনি। এই সুরেই সাধক পাগল হয়ে যায়, আরও ভেতরের দিকে ছোটে, তার রাধাভাব আরও পুষ্টিলাভ করে, সে দুর্দান্ত বেগে ছুটতে থাকে। “ছোটে যে জন বাঁশীর টানে/ সে কি তাকায় পথের পানে?” তখন আর সে ভাবে না কে কি বলল। সে ভাবে, আমি আছি আর আছে আমার ইষ্ট। এই অবস্থাটায় কুলকুণ্ডলিনী পাক খেয়ে আছে। সংস্কৃত ভাষায় ‘কুণ্ডলিনী’ শব্দের মানে হ’ল পাক-খেয়ে থাকা, serpentine noose। নামটা হচ্ছে serpentine coil. সংস্কৃত ভাষায় ‘কুণ্ডলিনী’ শব্দের আরেকটি মানে আছে—তা’ হচ্ছে জিলিপী। জিলিপীর পাক খাওয়া। কবি বিদ্যাপতি ঠাকুর বলেছেন: ‘হরি গেলা মধুপুরা হাম কুলবালা’। হরি আছে মধুপুরে অর্থাৎ সহস্রার চক্রে। বৈষ্ণবীয় তন্ত্রে এই সহস্রারকে বলা হয় মধুপুর। তা থেকে মধুরা/ মথুরা। মথুরা মানে শুধু উত্তর প্রদেশের একটি শহরই নয়, মথুরা মানে সহস্রার চক্রও। ‘হাম কুলবালা’ অর্থাৎ আমি হলুম কুলবালা অর্থাৎ আমি হলুম শেষ অস্থিতে স্থিত প্রসুপ্তা জীবশক্তি। এখানে কুলবালা মানে কোন ঘরের মেয়ে নয়। বিদ্যাপতি ঠাকুর বলছেন:
“নয়ানক নিঁদ্‌ গেল্‌, গয়ানক্‌ হাস্‌,
সুখ গেল পিয়াসঙ্গ, দুখ্‌ মেরা পাশ।”
হরি অনেক দূরে রয়েছেন, পরম শিব, পুরুষোত্তম অনেক দূরে, জীবভাব কত নীচে—lowest point. সুতরাং তার ঘুম নেই, সুখ নেই, কেবল দুঃখ, কেবল দুঃখ। কখন দুঃখ দূর হবে? —না, যখন জীবভাব শিবভাবের সঙ্গে মিলিত হবে। এটা হ’ল সাধনার চরম পরিসমাপ্তি—সাধনার মধুরতম পরিসমাপ্তি। জীবভাব তার পৃথক অস্তিত্ব রাখছে না। প্রকৃত জিনিসগুলো বুঝে নেওয়া দরকার। জীবের এই যে দুঃখ, দর্শনশাস্ত্রে একে বলে আধ্যাত্মিক দুঃখ। জীবের তিন রকমের দুঃখ আছে—আধিভৌতিক, আধিদৈবিক ও আধ্যাত্মিক। আধিভৌতিক দুঃখ হ’ল জড় জগতের যা দুঃখ, অন্ন-বস্ত্র-চিকিৎসা-শিক্ষা-বাসস্থান ইত্যাদি নিয়ে যা দুঃখ, তাকে বলি আধিভৌতিক দুঃখ। আমরা সমাজের স্ট্রাক্‌চারটা, সমাজের কাঠামোটা যদি পরিবর্তন করে দিই, এ দুঃখগুলো দূর হয়ে যাবে। আমাদের তা’ করতে হবে ও আমাদের তা’ করা উচিত।
আর আমরা যদি ঠিক ভাবে মনকে নিজেরা তৈরী করে নিই, তার ফলে এই যে সমস্ত চিন্তাগত দুঃখ, ভাবনাগত দুঃখ, মনের ত্রুটির ফলে আমরা যে দুঃখ ভোগ করি সেগুলো দূর হয়ে যাবে। এই দুঃখগুলোকে বলা হয় আধিদৈবিক দুঃখ। আর এই যে হরি আমার সব চেয়ে আপন জন, কৃষ্ণ সব চেয়ে আপন জন, অথচ কৃষ্ণ থেকে আমি রয়েছি অনেক দূরে, কৃষ্ণ রয়েছেন ঊর্ধ্বতম চক্র সহস্রার চক্রে, পিনিয়্যাল গ্ল্যাণ্ডে আর প্রসুপ্ত জীবশক্তি রয়েছে নিম্নতম চক্রে, মূলাধার চক্রে—এই যে ব্যবধান, এই যে দূরত্ব, এটাই হ’ল আধ্যাত্মিক দুঃখ। 
শ্রীআনন্দমূর্ত্তির ‘কৃষ্ণতত্ত্ব ও গীতাসার’ থেকে
10Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা