বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

শ্রীভগবান্‌ উবাচ

শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রথম মন্ত্রটির মধ্যে একটি অভিনব তত্ত্বসন্দেশ পরিবেশিত হইয়াছে। বৈদিক যুগ হইতে আরম্ভ করিয়া গীতা পর্যন্ত কোথাও আর এ সন্দেশ দেওয়া হয় নাই। মন্ত্রটি এই—
“তং তথা কৃপয়াবিষ্টমশ্রুপূর্ণাকুলেক্ষণম্‌।
বিষীদন্তমিদং বাক্যমুবাচ মধুসূদনঃ।।”
ইহার মধ্যে সন্দেশটি দুইটি শব্দে বিঘোষিত। “উবাচ মধুসূদনঃ।” মধুসূদন কথা বলিলেন। অন্য কেহ নহেন, স্বয়ং মধুসূদন। এ পর্যন্ত আমরা “ঋষিরুবাচ,” “যাজ্ঞবল্ক্য উবাচ,” “ব্যাস উবাচ,” “বাল্মীকিরুবাচ” শুনিয়াছি; “মধুসূদন উবাচ” আর শুনি নাই। তাই বলিয়েছি—নূতন বার্তা। মধু শব্দের একটি অর্থ ইন্দ্রিয়-তৃপ্তি। তাহা যিনি নাশ করেন তিনিই মধুসূদন। যাঁহার সন্ধান পাইলে ইন্দ্রিয়-ভোগ্য বস্তুর প্রতি আর লালসা থাকে না সেই অতীন্দ্রিয় অধোক্ষজ বস্তুই মধুসূদন। উপরোক্ত শ্লোকটির পরেই আমরা পড়ি—“শ্রীভগবান্‌ উবাচ।” ঐ মধুসূদন শ্রীভগবান্‌ই। শ্রীভগবান কথা বলিতেছেন। সকলের সকল কথা যখন বলা শেষ হইয়া গিয়াছে তখন শ্রীভগবান্‌ কথা বলিতেছেন। মানুষের সকল চিন্তার, সকল ভাবনার সকল সাধনার সীমা যতদূর, ততদূর সে পৌঁছিয়া গিয়াছে, তবুও কিন্তু তাহার চরম জ্ঞান লাভ হয় নাই। এবার তাহাই শোনা যাইবে, তাই তো বক্তা শ্রীভগবান্‌ স্বয়ং। বেদ উপনিষদে “ভগবান্‌ উবাচ” দেখি নাই। মহাভারতের আদিপর্ব হইবে ভীষ্মপর্ব পর্যন্ত কয়েকবার “ভগবান্‌ উবাচ” পাইয়াছি বটে, কিন্তু সেই কথা ভগবানের আসন হইতে ভগবানের উক্তি নহে। সখা, মিত্র, রাজদূত, উপদেশক, মন্ত্রণাদাতা, সারথি প্রভৃতি অনেক ভূমিকায় তিনি কথা বলিয়াছেন। কিন্তু ভগবানের আসন হইতে ভগবদুক্তি এই সর্বপ্রথম। আচার্য শঙ্কর তো “শ্রীভগবান্‌ উবাচ” হইতে ভগবদ্‌গীতার ভাষ্য আরম্ভ করিয়াছেন। আচার্যপাদ যেন মানব-সমাজকে ডাকিয়া বলিতেছেন—“শুনিবে আইস, নূতন কথা শুনিবে আইস। শ্রীভগবান্‌ কথা বলিতেছেন। যাঁহাকে লক্ষ্য করিয়া লক্ষলক্ষ কথা বলা হইয়াছে, বলিয়া বলিয়া যে বলার অন্ত হয় নাই, যাঁহার সম্বন্ধে বাক্য প্রহৃত হইয়া মনের সঙ্গে ফিরিয়া আসিয়াছে, এবার তিনি স্বয়ং আসিয়া নিজ তত্ত্বকথা নিজের শ্রীমুখে ব্যক্ত করিতেছেন। শোন, শুনিবার মত কথা বটে।”
গীতা-শাস্ত্রকে উপনিষদ্‌-গাভীর দুগ্ধস্বরূপ বলা হইয়াছে। কেবল যে বেদোপনিষদের বাছা বাছা মন্ত্রের ভাব তাৎপর্য সমাবেশে গীতার অঙ্গ গঠিত বলিয়া ঐ উক্তি সার্থক, তাহা নহে। কেহ আজ শ্রুতির শ্রেষ্ঠ মন্ত্রসমূহের চয়নিকা করিলে তাহা যতই চমৎকার সংগ্রহ হউক, শ্রুতি-গোমাতার দুগ্ধরূপে গ্রহণ করতঃ সুধী ভোক্তা তাহা পান করিবেন না। ইহার কারণটি আমাদিগকে বুঝিতে হইবে। শ্রুতি ও গীতার গূঢ় সম্বন্ধটি কী তাহাই আলোচনা করিয়া আমাদিগকে দেখিতে হইবে। শ্রুতির দৃষ্টিতে ব্রহ্ম স্বতঃসিদ্ধ বস্তু। তাঁহার সত্তা কোনও প্রমাণসাপেক্ষ নহে। শ্রুতি তাই ভগবৎসত্তা প্রমাণ করেন নাই, কেবল তৎস্বরূপ নির্ধারণ করিয়াছেন। ব্রহ্মস্বরূপের দ্বিবিধ প্রকাশ ঋষির অনুভূতিতে ধরা দিয়াছে। একটি বাহিরে ও একটি অন্তরে। বাহিরে দৃশ্যমান জগতের মধ্যে ওতপ্রোতভাবে “সর্বব্যাপীরূপে।” আর ভিতরে ভাবময় ও কর্মময় রাজ্যের সকল প্রেরণার মূল উৎস “সর্বভূতান্তরাত্মা রূপে”।
মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর ‘গীতা-ধ্যান’ থেকে

28th     May,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ