বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

মাতৃবোধন

উপাধ্যায়ান্দশাচার্য আচার্যাণাং শতং পিতা।
সহস্রন্তু পিতৃন্মাতা গৌরবেনাতিরিচ্যতে।।
সাধারণ শিক্ষক বা উপাধ্যায় থেকে আচার্যগণ দশগুণ শ্রেষ্ঠ, আচার্যগণ থেকে পিতা শতগুণে শ্রেষ্ঠ আর মাতা হলেন পিতার চেয়ে সহস্রগুণে শ্রেষ্ঠ। শ্রীরামকৃষ্ণ, জীবনে গর্ভধারিণী মায়ের প্রতি ঐকান্তিক শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালবাসা এই নীতিবাক্যকে আরও বলিষ্ঠতা দান করেছে নিঃসন্দেহে। যতই পর্যালোচনা করা যাবে ততই বুঝা যাবে শ্রীরামকৃষ্ণের মাতৃবোধন অভাবনীয় ও কল্পনাতীত। শ্রীরামকৃষ্ণের মাতৃবোধন অপার্থিব ও দিব্য। শ্রীরামকৃষ্ণের মাতৃবোধন অলৌকিক না হলেও অতিলৌকিক। তাঁর মাতৃবোধন ‘ন ভূতো ন ভবিষ্যতি’। কখনও হয়নি আর কখনও হয়তো হবেও না। বর্তমানে পুরুষশাসিত সমাজ। এই সমাজে পুরুষের স্ত্রী গ্রহণ কিসের জন্য? সে তো মুখ্যতঃ ইন্দ্রিয়বৃত্তির চরিতার্থতার জন্যই। স্ত্রী তো স্বামী তথা শ্বশুরালয়ের সকলের আজ্ঞাবাহী ‘দাসীবৃত্তির’ জন্য, থুড়ি, সেবা করার জন্যই জন্মেছে। এই তো সমাজপতিদের বিধান। ছায়ার মতো স্ত্রী পতির অনুগামিনী হবেন। তাকে দু’মুঠো খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখা হবে। কারণ স্বামীর নানাধরনের কাজের জন্য স্ত্রীকে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন। স্ত্রীকে বাঁচিয়ে না রাখলে পরিবারের হেঁসেল সামলাবে কে? কে করবে সন্তানধারণ? আর নিখরচায় তাদের পালনই বা করবে কে? পুরুষের প্রয়োজনে একজন দু’জন কেন স্ত্রীকে শতপুত্র এবং বাস্তবে সম্ভব না হলেও কল্পনাতেই সহস্রপুত্র ধারণের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ সে তো সন্তান ধারণের যন্ত্র হিসাবেই ঈশ্বর কর্তৃক নির্ধারিত, সমাজেরও এই তো চাহিদা! তা তাকে পূরণ করতে হবে। না হলে সে জীবনে ব্যর্থ। এ হেন বিকৃত সামাজিক মানসিকতা যদি ধর্মের গ্লানি না হয় তাহলে ধর্মের গ্লানি আর কী হবে? আর সে জন্যই প্রয়োজন হয়েছিল শ্রীরামকৃষ্ণের আবির্ভাবের। যুগগ্লানি দূর করার জন্য প্রয়োজন হয়েছিল এক প্রতিবিপ্লবের। প্রয়োজন হয়েছিল চৈতন্যের জাগরণের। কিন্তু এই প্রতিবিপ্লবের পদ্ধতি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। এ বিপ্লবে নাই কোন কোলাহল, নাই কোন সরব ধ্বনিযুক্ত ও রাজপথ অবরোধকারী মহামিছিল। এ বিপ্লব নীরব অথচ অব্যর্থ ও বলিষ্ঠ। ঘোর পৈশাচিক ও আত্মঘাতী ইন্দ্রিয়পরায়ণতা থেকে সমাজের গতিকে ফিরিয়ে তাকে অতীন্দিয়তায় নিয়োজিত করাই শ্রীরামকৃষ্ণের অবতরণের মূল উদ্দেশ্য। আর সে জন্যই তিনি অবতারবরিষ্ঠ। শ্রীরামকৃষ্ণ স্বীয় জীবনে আচরণ করে দেখিয়ে গেলেন স্ত্রী কেবল ভোগ্যা পণ্য নয়। স্ত্রী সাধনসঙ্গিনী, ইষ্টপথের সহায়িকা। দেহাতীত অতীন্দ্রিয় ঈশ্বরানুভূতিতে স্ত্রীর ভূমিকা অনন্য। স্ত্রী মানে কেবল নারী, তিনি ‘সম্রাজ্ঞী’। ঋক্‌সঙ্ঘিতায় আছে ‘সম্রাজ্ঞী শ্বশুরে ভব সম্রাজ্ঞী শ্বশ্রাং ভব।/নন্দাদরি সম্রাজ্ঞী অধিদেবেষু।।’ শ্বশুরালয়ের সর্বত্র স্ত্রী হলেন সম্রাজ্ঞী। শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে তিনি সাক্ষাৎ ‘আনন্দময়ী’, জগজ্জননী, জগন্মাতা। নিজের স্ত্রী সারদাদেবীর প্রতি তাঁর মনোভাব ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলছেন: যে মা এই শরীরের জন্ম দিয়েছেন, যে মা মন্দিরে পূজা নিচ্ছেন সে-ই মাতৃশক্তিই আবার স্ত্রীরূপে অসুস্থ শরীরের সেবা করছেন।
স্বামী জ্ঞানলোকানন্দের ‘প্রাণপ্রিয়’র দিব্যত্রয়ী প্রসঙ্গ থেকে

25th     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ