বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

ভগবান

তুমি ভগবানকে ডাক, কিন্তু তোমার এত ভেদ-বুদ্ধি কেন? মুসলমানের ভগবান, খ্রিষ্টানের ভগবান কি আলাদা? ভগবান তো অনেক নয়—এক; তার মধ্যে আবার ছোট-বড়, এর ভগবান, তার ভগবান—এ-সব কি বুদ্ধি? ও-রকম হীন বুদ্ধি থাকলে ভগবানকে পাওয়া যায় না। তোমার ইষ্ট তোমার কাছে বড়; তাদের ইষ্ট তাদের কাছে বড়; ইষ্ট কিন্তু এক, কেবল নামের তফাত—ভাব নিয়ে কথা। যে ভগবান তোমার ইষ্ট, সেই ভগবানই তাদের ইষ্ট; তারা এক নামে ডাকছে, তুমি আর এক নামে ডাকছ—এই তফাত। তবে ভেদ-বুদ্ধি কেন? যে ভগবানকে চায়, সে ভেদবুদ্ধি ত্যাগ করবে। তুলসীদাস, রামপ্রসাদ—এঁরা সব ইষ্ট-লাভ করেছিলেন; রামপ্রসাদের কত বৈরাগ্য, কেমন প্রেম—মাকালীকে ঠিক ঠিক মায়ের মতো ভেবে গালি দিচ্ছে, আবদার কচ্ছে। লোকে মানুষের কাছেই আবদার-জুলুম করে, কিন্তু তিনি মানুষ নন—অশরীরী, তবুও তাঁর কাছে আবদার-জুলুম কচ্ছে। কতখানি ভক্তি-বিশ্বাস হলে এমন করে। ইষ্টকে আপন হতে আপন ভাবতে হয়; তিনি আত্মা—আত্মীয়ের চেয়ে বড়, আরো কত আপন। কালী মহারাজ (স্বামী অভেদানন্দ) স্বামীজীর আদেশে বিলেতে গেল। যখন স্বামীজী লেকচার দিতে বললে, তখন ভয় পেয়ে বললে—‘‘আমি পারবো না; কি করে বলবো?’’ স্বামীজী বললে—‘‘আমি যাঁর মুখ দেখে বলেছিলাম, তুমিও তাঁর মুখ দেখে বল।’’ তখন আর ভয় রইল না—খুব ভাল বললে। সত্যভামার মহিষী হবার ইচ্ছা হয়, রুক্মিণীর মনে মনে হিংসা। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তা জানতে পারলেন। একদিন তিনি সভ্যভামার সঙ্গে বসে আছেন, এমন সময় দেখলেন হনুমান আসছেন। তখন সত্যভামাকে বললেন—‘‘তুমি শীঘ্র সীতারূপ ধর, আর আমি রামরূপ ধরি—হনুমান অন্যরূপ দেখবে না।’’ সত্যভামা সীতারূপ ধরতে পারলেন না। এমন সময় স্বয়ং লক্ষ্মী রুক্মিণী এসে সীতারূপ ধরলেন। হনুমান রামরূপ ছাড়া অন্যরূপ দেখতে ভালবাসতেন না। বলতেন—
শ্রীনাথে জানকীনাথে অভেদঃ পরমাত্মনি। 
তথাপি মম সর্বস্বঃ রামঃ কমললোচনঃ ।।
গুরু-বাক্য ছাড়তে নেই। লোকে যাই বলুক না কেন, কখনও সংশয় করবে না। স্বচক্ষে না দেখে কোন কথা বিশ্বাস করা ঠিক নয়, আর কারো উপর সংশয় করা ভুল। সাধু-মহাপুরুষরা সকলেই বলেছেন—‘গুরুর হুকুম নিষ্ঠার সহিত পালন করলে কল্যাণ হবে। গুরুবাক্যে নিষ্ঠা হলে তবে ইষ্টে নিষ্ঠা হয়। যার গুরুতে নিষ্ঠা নেই, তার ইষ্টে কোনকালই নিষ্ঠা হবার আশা নেই, আর তাই কল্যাণেরও আশা নেই। এ জগতে একমাত্র গুরুই ভরসা।’ ‘গুরু-বাক্য মূলাধার, গুরু পদ ভরসা।’ গুরুর ছবি পূজা করা যেতে পারে, তাতে শিষ্যের কল্যাণই হয়। সময় মত পূজা না করলে অকল্যাণ হয়। অসময়ে পূজো করার চেয়ে না করাই ভাল। আমার তো খুব ইচ্ছা পূজো করি, কিন্তু শরীর সুস্থ নয়, পারি না। তোর এটা মনে রাখা উচিত যে, ঠাকুর এখনও জল পর্যন্ত খাননি। এত বেলায় কি পূজো হয় রে? তুই ভোগ দিবি, তবে ঠাকুর খাবেন। তোর যেমন ক্ষুধা পায়, তাঁরও তেমনি পায়। প্রত্যক্ষ তিনি রয়েছেন—অন্নগ্রহণ করেন দেখেছি। তাঁকে কষ্ট দিলে ভুগতে হবে। উপলক্ষ্য না মানলে ভগবানও সন্তুষ্ট হন না; দেখ না দ্রৌপদীকে শ্রীকৃষ্ণ সখী বলে কতই ভালবাসতেন। তাঁরই বিপদের সময়—সেই বস্ত্র-হরণের সময় কতই তিনি অনাথ-নাথ, দীন-বন্ধু, বিপদ-বারণ, লজ্জা-নিবারণ ব’লে ডাকলেন, তিনি এলেন না। কিন্তু যেই দ্রৌপদী পাণ্ডব-নাথ, পাণ্ডব-সখা ব’লে ডাকলেন, তখনই তিনি এলেন। দৌপদী যতক্ষণ ‘উপলক্ষ্য’ পাণ্ডবগণের নাম না করলেন, ততক্ষণ এলেন না। যেই পাণ্ডবগণের নাম করা, অমনি হাজির। কাম দাবিয়ে রাখবে, বাড়তে দেবে না।
স্বামী অদ্ভুতানন্দের—সৎকথা (স্বামী সিদ্ধানন্দ সংগৃহীত) থেকে

14th     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ