বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

ধ্যান

ধ্যানের অধিকারী কে? আচার্য শঙ্করের মতে গীতার ষষ্ঠাধ্যায় সন্ন্যাসীর জন্য অর্থাৎ সন্ন্যাসী না হলে ধ্যানের অধিকারী হওয়া যায় না। তাঁর প্রধান যুক্তি হচ্ছে এই যে, শ্রীকৃষ্ণ যে যুগে গীতা উপদেশ করেছিলেন, তখন বর্ণাশ্রম-ধর্ম সুপ্রতিষ্ঠিত; গৃহস্থরাই তখন কর্মযোগী, সন্ন্যাসীরা সর্বকর্ম ত্যাগ করে ধ্যানযোগী। গীতার ষষ্ঠাধ্যায়ের ‘আরুরুক্ষোর্মুনের্যোগং’ ইত্যাদি তৃতীয় শ্লোকটির তাৎপর্যই তাই। এছাড়া, ‘একাকী ধ্যান করবে’, ‘নির্জনে ধ্যান করবে’ ইত্যাদি শ্রীভগবানের নির্দেশগুলিও শঙ্কর স্বপক্ষ-স্থাপনে যুক্তিরূপে উপস্থাপিত করেছেন। ভাগবতের একাদশ স্কন্ধের চর্তুদশ অধ্যায় শঙ্করের হাতে পড়া যদি সম্ভব হ’ত— ভাষাতত্ত্ববিদদের মতে অসম্ভব— তাহ’লে সেখানেও ‘স্ত্রীণাং স্ত্রীসঙ্গিনাং সঙ্গং ত্যক্ত্বা দূরতঃ’ ইত্যাদি যে-সব কথা রয়েছে, তাতে শঙ্কর যে ঐ ধ্যানযোগ অধ্যায়টিও ভগবান সন্ন্যাসীদেরই জন্য বলেছেন, নিঃসন্দেহে এই মত ব্যক্ত করতেন—বিশেষতঃ সব উপদেশের শেষে যখন তিনি উদ্ধবকে বদরিকাশ্রমে তপস্যার জন্য পাঠালেন। এখন কথা এই যে, বর্ণাশ্রমধর্ম তো এখন আর নেই। যুগপ্রয়োজনে সন্ন্যাসীরাও এখন কর্মযোগী—শুধু শমদমাদি সহায়ে আত্মধ্যান নিয়েই তারা বসে নেই। প্রাচীনকালে গৃহস্থরা ঈশ্বরার্পণ—বুদ্ধিতে যে সব লোকহিতকর কর্ম করতেন, বর্তমানকালে সন্ন্যাসীরাও সেগুলি করছেন। সুতরাং কালচক্রে গার্হস্থ্য ও সন্ন্যাসের সীমারেখাই যখন পরিবর্তিত, তখন গীতা ও ভাগবতের ধ্যানযোগ শুধু সন্ন্যাসীদেরই জন্য, এ কথার স্বার্থকতা বর্তমান যুগে আছে কি? ঈশ্বরার্পণ বুদ্ধিতে লৌকিক কর্ম করেও সন্ন্যাসীরা যদি ধ্যানের অধিকারী হতে পারেন, তাহলে ঐভাবে কর্মব্য পৃত থেকে গৃহস্থদেরও ধ্যানযোগী হতে অনতিক্রমণীয় অন্তরায় আছে কি? আসল কথা, অন্তরে সন্ন্যসী হতে হবে। ঈশ্বরলাভ ছাড়া অন্য কোনও বাসনা ভেতরে থাকলে ধ্যান হবে না। বিষয়ের আকর্ষণ মনকে বহির্মুখ করবেই। যতদিন পর্যন্ত না বিষয়ে বৈরাগ্য হচ্ছে, ততদিন ধ্যানের অধিকারী হওয়া যায় না। 
মহর্ষি পতঞ্জলীর মতে যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার ও ধারণার পর ধ্যানের অধিকারী হওয়া যায়। ধারণা ধ্যান ও সমাধি— এই ত্রয়ীকে মহর্ষি ‘সংযম’ আখ্যা দিয়েছেন। আমরা বলতে পারি ধ্যানেরই অধঃসীমা হচ্ছে ধারণা এবং ঊর্দ্ধসীমা হচ্ছে সমাধি। প্রত্যাহার ও-ধ্যানেরই প্রারম্ভিক অবস্থা। গীতার ষষ্ঠাধ্যায়ের ‘যতো যতো নিশ্চরতিমনশ্চঞ্চলম স্থিরম্‌’ ইত্যাদি শ্লোকই এ বিষয়ে প্রমাণ। আর বর্তমান যুগের যা অবস্থা, তা’তে প্রাণায়াম নিয়ে খুব বেশী ব্যস্ত হয়ে লাভ নেই। আসনে তো বসতেই হয়। সুতরাং দাঁড়াচ্ছে এই যে, যম-নিয়মটি থাকা চাই। যাঁর যম-নিয়ম আছে, তাঁর ধ্যানেরও অধিকার আছে। এর মানে এই নয় যে, আগে যম-নিয়মে প্রতিষ্ঠিত হয়ে নিই, তারপরে ধ্যান করবো।  যম-নিয়মে যে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠিত, তাঁর ভগবানলাভ নিশ্চয়ই হয়েছে। ভগবান-লাভ হলেই তবে ‘অহিংসা’, ‘সত্য’, ‘সন্তোষ’ ইত্যাদি দৈবী সম্পদে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব। সুতরাং যম-নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে সাধন করতে করতেই ধ্যানেরও অভ্যাস করতে হয়। যম-নিয়মের কথা যোগসূত্রের সাধনপাদের ৩০ ও ৩২-সংখ্যক সূত্রে বলা হয়েছে এবং যম-নিয়মে প্রতিষ্ঠিত হ’লে যে ফল লাভ হয় তা ৩৫-৪৫ সূত্রে উক্ত হয়েছে।
স্বামী ধ্যানানন্দের ‘ধ্যান’ গ্রন্থ থেকে

1st     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ