বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

গীতা

গীতা হলো মহাভারতের একটি অংশ। আনুমানিক চৌদ্দশ খ্রীস্টপূর্বাব্দের ভারতের কাহিনী মহাভারতে রয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আধুনিক গবেষকদের। আর মহাভারতের রচনাকাল, তাঁদের মতে, আনুমানিক নয়শ খ্রীস্টপূর্বাব্দ। সঠিক সময় যাই হোক না কেন, এতে কোন সন্দেহ নেই যে এটি একটি অতি প্রাচীন গ্রন্থ। প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের সময়ানুক্রমিকতা অস্পষ্ট; বুদ্ধের সময় থেকেই প্রথম কিছুটা সময়ানুক্রমের সন্ধান মেলে, তার আগেকার সবই প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের অন্তর্গত। ধরা যেতে পারে যে, গীতার সৃষ্টি বুদ্ধের কয়েক শতক আগে। গীতায় অসাধারণ সব ভাব আছে, কিন্তু সাধারণ লোক তা ঠিক বুঝত না। তারপর বুদ্ধ এসে এইসব ভাবকে নতুন রূপ দিলেন যাতে লোকে এইসব প্রাচীন শিক্ষার সত্যকার মর্ম গ্রহণ করতে পারে। আমাদের দেশে যখনই কোন মহান ভাবের জন্ম হয়েছে, তখনই একটা যুগের সূচনা ঘটেছে এবং এইরকম প্রত্যেক যুগের নেপথ্যে থেকেছেন কোন এক বিশাল ব্যক্তিত্ব। জাতীয় জীবনের প্রত্যেক যুগ বস্তুত কোন এক মহৎ ভাবের বাস্তব রূপায়ণ, এবং দেখা যাবে যে প্রত্যেক যুগের প্রারম্ভে রয়েছেন একজন শক্তিমান যুগন্ধর ব্যক্তিত্ব যিনি জাতিকে ঐ মহৎ ভাব দান করেছেন। খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে আমরা পেয়েছি বুদ্ধকে এবং খ্রীস্ট-পরবর্তী অষ্টম শতকে পেয়েছি শঙ্করকে। আজও আমরা এই দুই মহান আচার্যের আলোকে আলোকিত হয়ে বেঁচে আছি। আধুনিক কালে এসে ঊনবিংশ শতাব্দীতে আমরা পেয়েছি এমন কয়েকজন ব্যক্তিত্বকে যাঁরা স্ব-মহিমায় সমুজ্জ্বল; আজ আমরা তাঁদের দ্বারা ও তাঁদের আদর্শের দ্বারা পরিচালিত। ভারতীয় ইতিহাসের যেকোন ছাত্রের কাছেই এই চমকপ্রদ ও অদ্বিতীয় সত্যটি পরিষ্কারভাবে ধরা দেয় যে, প্রত্যেক যুগের প্রারম্ভে জীবন ও চিন্তার ক্ষেত্রে একটি সুদৃঢ় আদর্শ গড়ে উঠেছে, যার পেছনে অনুপ্রেরণার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে থেকেছেন কোন এক বিশাল ব্যক্তিত্ব। আমাদের সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা ও নিত্য-সজীবতার পেছনে এই যে ঐতিহাসিক ঘটনা সত্য, তা একরকম অদ্বিতীয়। একমাত্র চীন ছাড়া আর কোথাও এই ঘটনা পাওয়া যাবে না। আমাদের পেছনে পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস আছে; আমরা সেই একই পুরাতন জাতি, এবং সেই একই অপরিবর্তিত প্রাচীন আদর্শ আজও আমাদের এগিয়ে নিয়ে চলেছে। কী সেই বিশেষত্ব যা বিশ্বরঙ্গমঞ্চে এই সংস্কৃতিকে শাশ্বত স্থান দিয়ে রেখেছে আবহমান কাল ধরে? বিশ্বের এই রঙ্গমঞ্চে কত শত সভ্যতা তো এল আর মিলিয়ে গেল—যেমন জলের ওপরে কখনো কখনো তিরতিরিয়ে ঢেউ ওঠে আবার মিলিয়ে যায়। এইসব অপসৃয়মাণ সভ্যতার মাঝে কেবল দুটি সভ্যতা চিরস্থায়ী—ভারত ও চীন। এই কারণে আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে যে আমাদের সংস্কৃতির জীবনীশক্তির উৎস কি বা কি-কি। একটা সময় ছিল যখন গ্রীস ও রোম বিশ্বরঙ্গমঞ্চে তাদের শক্তি ও স্ফূর্তি প্রদর্শন করেছে; তার অনেক আগে ছিল ব্যাবিলন ও ইজিপ্ট; হালে এসেছে ইংল্যাণ্ড, রাশিয়া ও আমেরিকা। যাদের একসময় শক্তিশালী ভূমিকা ছিল তারা আজ দৃষ্টির অন্তরালে চলে গেছে। দেশগুলো হয়তো তাদের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেঁচে আছে, কিন্তু তাদের সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা হারিয়ে গেছে, মহৎ উত্তরাধিকার হয়ে গেছে বিনষ্ট। অন্যদিকে, প্রাচীন গ্রীস ও রোমের সমসাময়িক কালে ভারতবর্ষ ছিল এবং ভারতবর্ষ আজও আছে বিশ্বরঙ্গমঞ্চের নতুন কুশীলবদের অভ্যর্থনা জানাতে; ভারতবর্ষ থাকবে তাদেরও জন্য ভবিষ্যতে এই রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ করবে। কিন্তু একটা ব্যাপার—ভারতবর্ষ নিজে বদলায় না। এ এক ঐতিহাসিক ঘটনা এবং ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে আমাদের কর্তব্য এই ঘটনার অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে এর মধ্যে যে মহৎ ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। এই বিশ্লেষণ আমাদের পৌঁছে দেবে আমাদের সংস্কৃতির উৎস ও প্রেরণার মূলে। 
স্বামী রঙ্গনাথানন্দের ‘শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতার রূপরেখা’ থেকে

26th     January,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ