বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
অমৃতকথা
 

কর্ম্ম

হে বীর, সর্ব্বব্যাপক আমাকে তুমি তোমার সমস্ত অন্তর্বাহ্য ব্যাপারের বিষয় কর; বায়ু যেমন আকাশের সমস্ত অঙ্গে মিশিয়া আছে, তেমনি তুমি সর্ব্ব কর্ম্মে আমারি মধ্যে অবস্থান কর; বেশী কি বলা যায়? আপনার মনকে শুধু আমারি মন্দির (একায়তন) কর, আর কান ভরিয়া শুধু আমারি কথা শ্রবণ কর; আত্মজ্ঞানে বিশুদ্ধ যে সব সন্তজন আমারি প্রতিমূর্ত্তি হইয়াছেন, তোমার দৃষ্টি তাঁহাদের উপর তেমনি প্রেমসহকারে পড়ুক, যেমন কামিনীর দৃষ্টি তাহার পতির উপর পড়ে; আমিই সর্ব্ব বস্তুর আবাসস্থল, আমার নির্ম্মল নাম তোমার জিহ্বায়, লাগাইয়া (নিরন্তর উচ্চারণ করিয়া) তাহাকে জীবিত রাখ; হস্তের কৃত্য, পায়ের চলন যাহাতে আমারি জন্য (অনুষ্ঠিত) হয় তাহাই কর; হে পাণ্ডব, যে সব কর্ম্মদ্বারা আপনার (স্বজনের) বা পরের উপকার করিবে, সেই সব যজ্ঞে তুমি আমারি উত্তম যাজ্ঞিক হইবে; এক এক করিয়া আর কত শিখাইব? তুমি আপনার অঙ্গে সেবকভাব ধরিয়া (সেবকরূপে) অন্য সবাইকে মদ্রূপ কল্পনা করিয়া তাহাদের সেবা কর; ইহাতে ভূতদ্বেষ দূর হইবে, এবং সর্ব্বত্র (সর্ব্বভূতে) একমাত্র আমাকেই নমস্কার করিবে,—এইভাবে আমার মধ্যে আত্যন্তিক (পূর্ণভাবে) আশ্রয় প্রাপ্ত হইবে; তখন এই ভরা জগতের মধ্যে তৃতীয়ত্বের কোনও ব্যাপার (আভাস) না থাকায় তুমি ও আমি একান্তে মিলিব (‘একান্ত হইয়া থাকিব’); তখন, যে অবস্থাই হউক না কেন, আমি তোমাতে, ও তুমি আমাতে, পরস্পর ঐক্য উপভোগ করিব—এইভাবে আমাদের সুখ বাড়িবে; আর, সেই অবস্থায় তৃতীয়ত্বের (জগদাভাসের) বাধা দূর হইলে, তুমি মদ্রূপ হইয়া অন্তে আমাকেই প্রাপ্ত হইবে; জলের নাশ হইলে (জল শুকাইলে) জলের মধ্যের প্রতিবিম্ব বিম্বে মিলাইবে, ইহাতে প্রতিবন্ধক কি আছে? বায়ু আকাশে মিশিবে, তরঙ্গ সাগরে মিলাইবে,—ইহাতে কে বাঁধা দিতে পারে? দেহধর্ম্মের জন্যই তোমাকে ও আমাকে স্বতন্ত্র দেখায়, দেহের ‘বিরাম’ (নাশ) হইলে, তুমি মদ্রূপ হইয়া যাইবে; আমি যাহা বলিতেছি, তাহাতে কোনও সন্দেহ করিও না—ইহাতে যদি অন্যথা কর, তবে তোমার শপথ! পরন্তু, তোমাকে তোমারি শপথ দিলে আত্মস্বরূপকেই স্পর্শ করিবে,—প্রীতির ধরণই এই যে লজ্জা ভুলাইয়া দেয় (লজ্জার কথা স্মরণ করিতে দেয় না); নতুবা, যিনি প্রপঞ্চকে আচ্ছাদন করিয়া আছেন, যাঁহার সত্তায় এই বিশ্বাভাস সত্য মনে হয়, যাঁহার আজ্ঞার ‘নটনৃত্য’ (প্রতাপ) কালকে জয় করে; যিনি পিতার ন্যায় জগতের হিতাকাঙ্ক্ষী—সেই যে সত্যসঙ্কল্প ভগবান ‘আমি’—আমাকে শপথের আক্ষেপের (ঝঞ্চাটের) মধ্যে কেন যাইতে হইবে? পরন্তু, হে অর্জ্জুন, তোমার প্রেমে আমি আমার দেবত্বের সংজ্ঞা (প্রতিষ্ঠা) ত্যাগ করিয়া অসম্পূর্ণ (অর্দ্ধেক) হইয়াছি, আর তুমি (মদ্রূপ হইয়া) সম্পূর্ণ হইয়াছে; হে ধনঞ্জয়, নিজের কার্য্যসিদ্ধির জন্য রাজাকে যেমন স্বয়ং আপনার শপথ গ্রহণ করিতে হয়, ইহাও তেমনি হইয়াছে”; তখন অর্জ্জুন বলিলেন—“হে দেব, আপনি এই প্রকার অসম্ভব কথা বলিবেন না,—কেবল আপনার নাম স্মরণ করিলেই আমার কার্য্যসিদ্ধি হয়; আপনি আমাকে উপদেশ দিতে বসিয়াছেন, আর কথা বলিতে বলিতে শপথ দিতেছেন, আপনার কৌতুকপূর্ণ লীলার কি পার আছে?” 
গিরীশচন্দ্র সেন অনুদিত ‘জ্ঞানেশ্বরী’ থেকে

19th     January,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ