নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: ডাক্তারি প্রবেশিকা (নিট) পরীক্ষা পাশ করতে না পারায় মেয়ের মানসিক অবসাদ মারাত্মক বেড়ে গিয়েছিল। পড়াশুনো সহ নানান বিষয়ে মায়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত মনোমালিন্য লেগে থাকত। ডাক্তার দেখিয়েও বিশেষ লাভ হয়নি। জীবনের উপর তিতিবিরক্ত হয়ে দিন চারেক আগে মহিলা স্বামীকে বলেছিলেন, ‘মেয়েকে মেরে নিজেকে শেষ করে ফেলব। সব ঝামেলা একসঙ্গে মিটিয়ে দেব।’ বুধবার বাজার থেকে বাড়ি ফিরে ঠিক সেরকমই মৃত্যুর ঘটনা দেখে হতবাক হয়ে যান কৃষিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। তিনি দেখেন, মেয়ের দেহ পড়ে রয়েছে, স্ত্রীর মৃতদেহ ঝুলছে। আগরপাড়ার পীরতলার এই ঘটনায় অবাক বাসিন্দারাও। পুলিস জানিয়েছে, মৃতদের নাম মৌসুমি সান্যাল (৫৪) ও দিয়া সান্যাল (২০)। মৃত গৃহবধূর স্বামীর নাম  রজতেন্দ্র স্মরণ সান্যাল।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রজতেন্দ্রবাবু কৃষিদপ্তরের কর্মী ছিলেন। প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে পীরতলার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। এলাকায় কয়েকজনের সঙ্গে রজতেন্দ্রবাবু কথা বললেও তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে পাড়ায় কারও সঙ্গে সেই অর্থে মিশতেন না। বাড়ির জানালা ও দরজা সবসময় বন্ধ থাকত। বাড়িতে ঝামেলা বা ঝগড়ার আওয়াজও স্থানীয়রা কোনওদিন টের পাননি। বুধবার সকাল ১১টা নাগাদ বাড়ি থেকে ব্যাগ নিয়ে বাজারে যান রজতেন্দ্রবাবু। গ্রিলের দরজায় বাইরে থেকে তালা দিয়ে গিয়েছিলেন। আধঘণ্টা বাদে ঘরে ফেরেন। এরকিছু সময় পর তিনি ফের বাজারে গিয়ে পরিচিতদের জানান, তাঁর মেয়ের মৃতদেহ খাটে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে। স্ত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছে। পরিচিতরা খড়দহ থানায় খবর দেন। পুলিস মৃতদেহ উদ্ধার করে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রজতেন্দ্রবাবু পুলিসকে জানিয়েছেন, মেয়ে গতবার নিট পাশ করেনি। এবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তবে মেয়ে চরম মানসিক অবসাদে ভুগছিল। ডাক্তার দেখানো হয়েছিল। যে কোনও বিষয়ে মা ও মেয়ের ঝামেলা হতো। দিন চারেক আগে মেয়েকে মেরে তাঁর স্ত্রী আত্মহত্যা করার কথা বলেছিলেন। সত্যিই যে এমনটা ঘটবে, ভাবিনি। 
সমীর দাস নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বাজারে যাওয়ার পথে দাদা আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। দেখি হাতে ফল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে স্ত্রী-কন্যার মৃত্যুর কথা আমাদের জানান। পুলিস কমিশনার অলক রাজোরিয়া বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ভদ্রমহিলা মেয়েকে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হয়েছেন। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। -নিজস্ব চিত্র