ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ইতিহাসে এই প্রথম চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ না নিয়েই উত্তীর্ণরা বসল জয়েন্ট প্রবেশিকা পরীক্ষায়। গত এক বছর ধরে এদের ক্লাস হয়েছে অনলাইনে। হয়নি প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসও। কম্পিউটার ল্যাবেও অংশ নেয়নি এরা। বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রী হয়েও এদের সীমাবদ্ধ থাকতে হয়েছে কেবল তত্ত্বগত পড়াশোনার মধ্যেই। কিছু কিছু স্কুলে অবশ্য টেস্ট পরীক্ষা হয়েছে স্কুলের অভ্যন্তরেই। এর ফলে বহু অভিভাবকরাই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অসম্পূর্ণ শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষা বা গবেষণার ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়বে না তো? অথবা কেরিয়ারের লম্বা রাস্তায় এই মার্কশিট সুবিবেচিত হবে তো? এরই পাশাপাশি প্রশ্ন উঠে এসেছে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি নিয়েও। কীভাবে ক্লাস হবে? কীভাবে হবে ওয়ার্কশপ? ইন্টার্নশিপ, ইন্ডাস্ট্রি ভিজিটেরই বা কী হবে? সর্বোপরি রয়েছে প্লেসমেন্টের অবস্থা। এসব নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন বেশিরভাগ অভিভাবকেরাই।
প্রথম কথা হল, মহামারীর চেহারা যা-ই হোক না কেন, ইন্টারনেট বা টেলিসংযোগ ব্যবস্থার হাত ধরে সারা দেশেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে সচল রাখার জন্য সরকারি ও বেসরকারি তরফে সমস্ত ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে প্রথম প্রথম অস্বস্তি এবং অসুবিধা হলেও ধীরে ধীরে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের অভ্যস্ত করে তুলেছেন অনলাইন ক্লাসে। বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এই ক্লাসগুলি অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে পরিকাঠামোগত অসুবিধা রয়েছে, সেখানে এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। আবার এআইসিটিই, কেন্দ্রীয় শিক্ষাদপ্তর, বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে তৈরি হয়েছে লক্ষাধিক ভিডিও লেকচার। অবসর সময়ে সেই সমস্ত লেকচারগুলিকে বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা পোর্টালের সংরক্ষিত ই-লাইব্রেরি থেকে খুলেও পড়াশোনা করেছেন ছাত্রছাত্রীরা। এ সবই হয়েছে স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে।
সব ক্ষেত্রে না পারা গেলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে সাইমুলেশন সফটওয়্যার, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির সাহায্যে প্র্যাকটিক্যাল এবং ওয়ার্কশপগুলিও করানো হয়েছে।
এরপরে চিন্তা ছিল অনলাইন পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে। প্রোকটর ভিত্তিক পরীক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সে সমস্যা সমাধানও করা হয়েছে। এর ফলে ম্যাকাউটের অন্তর্গত বেসরকারি কলেজের পরীক্ষাগুলি যেমন নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়েছে, ঠিক তেমনই ফল প্রকাশও হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ে। ফলে যেমন কোথাও সেশন পিছিয়ে যায়নি, ঠিক তেমনই অসুবিধা বা জটিলতা তৈরি হয়নি ক্যাম্পাসিংয়ের ক্ষেত্রেও। এই জন্যই মহামারী সত্ত্বেও এ বছর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের প্লেসমেন্টের হার ভালোই। প্লেসমেন্টপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের নাম এবং বিস্তারিত তথ্যও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ওয়েবসাইটগুলিতে।
চাকরির পাশাপাশি গবেষণার কাজেও অনলাইনে গবেষণার কাজ চালিয়ে গিয়েছেন গবেষকরা। পনেরো মাসের এই অতিমারীকালে বহু শিক্ষক নতুন গবেষণার কাজ শুরু করেছেন।
তবে, এটা ঠিক যে, ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা ব্যবস্থা যেহেতু এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা এবং পুরোপুরি হাতেকলমে শিক্ষা ব্যবস্থার ওপরে নির্ভরশীল তাই ছাত্র-শিক্ষকের সামাজিক যোগাযোগ এখানে একান্ত জরুরি। এছাড়াও ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা ব্যবস্থা যেহেতু গণিত নির্ভর সেইজন্য ছাত্রছাত্রীদের মানসিক স্বাচ্ছন্দ্যের প্রশ্নটিও এই পড়াশোনায় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আবার এই অযাচিত অবস্থার মুখোমুখিও কখনও হননি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পড়ুয়া বা শিক্ষকেরা। অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতিও সাধারণ শিক্ষা পদ্ধতি থেকে সময়সাপেক্ষ।
এদিকে নজর রেখেই বিগত এক বছর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই যাতে ছাত্রছাত্রীরা যতদূর সম্ভব তাদের পড়াশোনার বহু কাজ সুষ্ঠভাবে করতে পারে।
কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের নির্দেশানুসারে আগামী অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম বর্ষের ক্লাস। এর আগেই মনস্থির করতে হবে ছাত্রছাত্রীদের। তবে জয়েন্ট প্রবেশিকার আগে সবিস্তারে খোঁজ খবর নিন কলেজ সম্বন্ধে, কোর্স সম্বন্ধে। পরিকাঠামো ও পরিবেশ সম্পর্কেও যাতে ভবিষ্যৎ তৈরির রাস্তায় আপনাকে দ্বিধাগ্রস্ত না হতে হয়।