উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
মূলত কৃষি শ্রমিক সঙ্কটের কারণেই সুন্দরবন এলাকার কৃষকরা ধান চাষে ক্রমেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বলে দাবি স্থানীয় কৃষি আধিকারিকদের। সেকারণেই চাষে খরচ কমানোর পাশাপাশি কৃষি শ্রমিক ছাড়াই ধান চাষের লক্ষ্যে যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। সন্দেশখালি ২ নম্বর ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা সজল পতি জানিয়েছেন, তাঁর এলাকায় কৃষি শ্রমিকের মারাত্মক সমস্যা। সেখানকার বেশিরভাগ শ্রমিক কাজের সন্ধানে কেরলে চলে যান। ফলে ধান রোয়া করা বা কাটার সময় শ্রমিক পাওয়া যায় না। সেকারণে চাষিরা ধান চাষের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিলেন। কৃষি শ্রমিক না পাওয়ায় অনেক জমি যেমন ফাঁকা পড়ে থাকত, তেমনই বহু কৃষক ধানের জমি মাছ চাষের জন্য লিজে দিয়ে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের আবার ধান চাষে উৎসাহ জোগাতে প্যাডি ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের সাহায্যে ধান রোয়া করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্রযুক্তি তাঁদের এলাকায় নতুন। সেজন্য ধীরে ধীরে এর প্রসার ঘটানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, আমনে ‘শ্রেয়া’ বা জিরে কাঠি প্রজাতির ধান চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সন্দেশখালি ২ নম্বর ব্লকের বেশিরভাগ চাষি। এই জাতটির চাল সরু এবং লম্বা। ফলে বাজারে কৃষক এই চালের বেশ ভালোই দাম পাবেন বলে আশাবাদী। তাছাড়া সুন্দরবন এলাকায় এই ধানটির ফলন বেশ ভালোই। কিছু কৃষক পরীক্ষামূলকভাবে এই ধানের চাষ করে তার প্রমাণ পেয়েছেন। ফলে ফলন নিয়ে অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়েই কৃষকরা জিরে কাঠি ধান চাষে নামতে চলেছেন। এই ধানটি নিচু জমিতেও চাষ করা সম্ভব। কৃষি আধিকারিক সজলবাবু জানিয়েছেন, যন্ত্রের সাহায্যে ধান রোয়া করার পাশাপাশি মেশিনের সাহায্যে ধান কাটার ব্যবস্থা করারও চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। কৃষি দপ্তর থেকেই চাষিরা ধান রোয়া ও কাটার মেশিন পাবেন। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রাইস প্লান্টার ২ ধরনের হয়। একরকম যন্ত্র, যেটি হেঁটে চালানো যায়। অন্যটি মেশিনের উপর বসে চালাতে হয়। দু’ধরনের যন্ত্রই ইঞ্জিন চালিত। হেঁটে চালানো যায় যে যন্ত্রটি, তার পিছনে হ্যান্ডেল রয়েছে। সেটি ধরে সামনের দিকে ঠেলে নিয়ে যেতে হয়। মেশিনের উপর বসে যে যন্ত্রটি চালাতে হয়, সেটিতে স্টিয়ারিং রয়েছে। এই যন্ত্রের মূলত তিনটি পার্টস থাকে। মোটর, রানিং গিয়ার ও ট্রান্সপ্লান্টিং ডিভাইস। এই ডিভাইসের মধ্যে সিডলিং (চারা) ট্রে, সিডলিং ট্রে শিফ্টার এবং চারা রোপণের ফর্ক থাকে। এই ফর্কগুলি আঙুলের মতো ধরে চারাকে মাটিতে পুঁতে দিতে সাহায্য করে। সিডলিং ট্রেতে ধানের চারার ম্যাট সাজিয়ে রাখা হয়। সিডলিং ট্রে শিফ্টারের মাধ্যমে চারা রোপণ ফর্কের কাছে পৌঁছে যায়। হেঁটে চালানো মেশিনে একসঙ্গে ৪-৬টি সারিতে রোপণ করা যায়। বসে চালানো মেশিনে একসঙ্গে ৬-৮টি সারিতে রোয়া করা যেতে পারে। এই যন্ত্রের সাহায্যে ধান বুনলে সারি থেকে সারির দূরত্ব নির্দিষ্ট থাকে। সারিতে গুছির দূরত্ব, গুছিতে চারার সংখ্যা, রোপণের গভীরতা কমানো বা বাড়ানো যায়। প্রতি গুছিতে সাধারণত ৪-৬টি চারা থাকে। যন্ত্রের সাহায্যে ধান বোনার জন্য ট্রে বা পলিথিন শিটের উপর বীজতলা করতে হবে। এক একর জমিতে ধান রোয়ার জন্য জাত ভেদে সাড়ে সাত থেকে দশ কেজি বীজ লাগে। এর জন্য প্রয়োজন ৭০-৮০টি ট্রে। পলিথিন শিট লাগবে ১৮০-১৯০ বর্গফুট।
কৃষি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এখন শুধুমাত্র একটি ফোন। অর্ডার করলেই কৃষকের জমিতে পৌঁছে যাবে রেডিমেড ধানের চারা। কৃষি শ্রমিকেরও প্রয়োজন নেই। যন্ত্রই নিমেষের মধ্যে বুনে দেবে সেই চারা।
এতে একদিকে যেমন শ্রমিক নির্ভরতা কমানো যাবে, তেমনই অর্থের সাশ্রয় হবে। ফলে প্যাডি ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের সাহায্যে ধান রোয়া করার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কৃষি আধিকারিকদের বক্তব্য, শ্রমিক দিয়ে এক একর ধান রোয়া করতে খরচ প্রায় আড়াই হাজার থেকে চার হাজার টাকা। যেখানে যন্ত্রের সাহায্যে ধান রোয়া করতে খরচ পড়ে দেড় হাজার থেকে দু’হাজার টাকা। যন্ত্র ব্যবহারে দ্রুত ধান রোয়া করা যায়। একদিনে এক থেকে দুই হেক্টর জমির ধান রোয়া করা যায়। সব ধান একসঙ্গে পাকে। প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় ৪০-৫০ শতাংশ বীজধান কম লাগে। অল্পবয়সী চারা রোপণ করা যায়।