রবীন্দ্রনাথের কথায় শুধু পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ নয়, তাদের ভালোর সঙ্গে প্রাচ্যের সংস্কৃতির যা কিছু ভালো তার মেলবন্ধন ঘটানোই প্ৰকৃত প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের মিলন। এমনই মিলন ঘটানোর প্ৰচেষ্টায় ব্রতী বঙ্গতনয়া সুকৃষ্ণা ইশি মজুমদার জাপানের মাটিতে তিলতিল করে গড়ে তুলেছেন ‘পরিবার’ সংস্থাটি।
প্রতি বছরের মতো ভারতবর্ষের আকাশবাণীর ২৪টি কেন্দ্রের সঙ্গে একই দিনে ও সময়ে কলকাতায় আকাশবাণী সঙ্গীত সম্মেলন ২০১৮ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহে। ১৯৫৪ সালে এই সম্মেলন প্রথম শুরু হয়েছিল।
সম্প্রতি আইসিসিআর-এ প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী প্রতীক চৌধুরীর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হল। দৈনন্দিন জীবনে কীভাবে আনন্দে থাকা যায় এবং সকলকে আনন্দে রাখা যায়, তা প্রয়াত শিল্পীর স্মৃতি-রোমন্থনে উঠে এল।
বাঙালির বাঙালিয়ানা উদ্যাপনের মাধ্যম এখন পয়লা বৈশাখ। এমনিতে বাংলা নববর্ষ, বাংলা মাস বা বছর নিয়ে আজকাল আর বিশেষ কেউ মাথা ঘামায় না। তবে পঁচিশ-তিরিশ বছর আগে বাঙালির নববর্ষ বললে স্মৃতিতে ভেসে ওঠে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই দূরদর্শনে ‘নববর্ষের বৈঠক’।
সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
আইটিসি সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমির ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে ‘আইটিসি সঙ্গীত সম্মেলন’ একাডেমির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হল । ভারতবর্ষের প্রথিতযশা শিল্পীরা ছাড়াও অনেক নবীন প্রতিভা ও আইটিসি স্কলার তাদের কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে কলকাতার সঙ্গীত পিপাসুদের মনোরঞ্জন করেন। মঙ্গলদ্বীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন প্রবীণ সেতারশিল্পী ও আইটিসি সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমির পশ্চিমাঞ্চল প্রধান অরবিন্দ পারেখ। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আইটিসি সঙ্গীত সম্মানে ভূষিত হলেন প্রবাদপ্রতিম সন্তুর শিল্পী শিবকুমার শর্মা। নবীন প্রতিভা শ্রীময়ী আচার্য প্রথম দিনের অনুষ্ঠানের সূচনা করেন ইমন রাগে খেয়াল ও তিলং-এ ঠুমরি গেয়ে। অরুণা সাইরাম কর্ণাটকী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে ত্যাগরাজ কৃতী,তানাম পল্লবী,থিল্লানা এবং জাগো দুর্গা গেয়ে চমক দেন। অনুষ্ঠানের শেষপর্বে শিবকুমার শর্মা প্রথমে রাগ ঝিঁঝোটিতে রূপক ও তিনতালে দুটি গৎ বাজিয়ে শোনান। শিল্পী এদিন স্বমহিমায় ছিলেন না। গান্ধার কম করে পঞ্চমের অধিক প্রয়োগ প্রশ্নাতীত নয়। পাহাড়ি ধুনটি সুখশ্রাব্য হয়। তবলায় শুভঙ্কর বন্দোপাধ্যায় বিশ্বস্ত সহযোগিতা করেন।
দ্বিতীয় দিনের সারারাত্রিব্যাপী অনুষ্ঠানের শুরুতে নবীন প্রতিভা অনুষ্টুপ ভট্টাচার্য্য সেতারে মারু বেহাগ পরিবেশন করেন। তবলায় সঞ্জয় অধিকারী যোগ্য সহযোগিতা করেন। উদয় ভাওয়ালকার ধ্রুপদে প্রথমে রাগ শুদ্ধ কল্যাণ ও পরে দুর্গা গেয়ে শোনান। শিল্পীর কণ্ঠমাধুর্য ও মেজাজ অতুলনীয়। আইটিসি স্কলার রুচিরা কেদার হাম্বির রাগে বিলম্বিত একতাল ও দ্রুত তিনতাল এবং একতালে তিনটি বন্দিশ গেয়ে শোনান। শেষের কাজরি ‘কাহানওয়া মানো ও রাধারানী’ বিশেষভাবে উল্লেখ্য। তবলায় পণ্ডিত সমর সাহা এবং হারমোনিয়ামে রূপশ্রী ভট্টাচার্য্য সহযোগিতা করেন। উস্তাদ রশিদ খান মধ্যরাতে তার সুললিত কণ্ঠে মালকোষ গেয়ে শ্রোতাদের মাতিয়ে দেন।
তবলায় তার বহুদিনের সঙ্গী শুভঙ্কর বন্দোপাধ্যায়, হারমোনিয়ামে অজয় যোগেলকর এবং সারেঙ্গিতে মুরাদ আলি খান প্রাণবন্ত সহযোগিতা করেন। শিল্পী প্রিয়মধুরঞ্জনীতে একটি কম্পোজিশন গেয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন। ফারুক্কাবাদ ও বেনারস ঘরানার দুই প্রবাদপ্রতীম তবলিয়া অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় ও কুমার বোস কলকাতায় প্রথমবার দ্বৈত তবলা লহরা পরিবেশন করেন। তিনতালে নিবদ্ধ প্রায় দেড় ঘণ্টায় আওচার -পেশকার , কায়দা, গৎ , বন্দিশ , তেহাই সবেতেই আমরা দেখি কিভাবে দুটি ঘরানা একে অপরের সঙ্গে মিলে একাকার হয়ে যায়। কৌশিকী চক্রবর্তী প্রথমে আভোগি ও পরে রাগ হিন্দোল বাহার গেয়ে যথারীতি দর্শকদের আপ্লুত করেন। তবলায় যোগেশ শামসির ও সারেঙ্গিতে মুরাদ আলি খানের যথাযথ সঙ্গত বড় প্রাপ্তি। অ্যাকাডেমির প্রাক্তন ছাত্র বিশিষ্ট স্লাইড গিটার বাদক রতন ভারতী ভাটিয়ারের জাদুতে দর্শকদের মোহিত করে দেন। তবলায় সন্দীপ ঘোষ প্রাণবন্ত সহযোগিতা করেন। এদিনের অনুষ্ঠানের শেষ নিবেদনে জয়পুর অত্রউলি ঘরানার প্রথিতযশা শিল্পী উলহাস কাসালকার তিলওয়ারা তালে কোমল ঋষভ আশাভরী এবং বিভাস রাগে একটি দ্রুত তিনতাল বন্দিশ গেয়ে শোনান। সেই সুরের রেশ নিয়েই এদিনের ঘরে ফেরা। তৃতীয় তথা শেষ দিনের অনুষ্ঠান শুরু করেন শুভ্রা গুহ হোলিকে বিষয়বস্তু করে ছোট ছোট করে অনেকগুলি কম্পোজিশন রাগ শ্রী , দেশ, বাহার,বসন্ত বাহারে গেয়ে শোনান। কাফি রাগে হোরি, ঠুমরি গেয়ে শিল্পী তার অনুষ্ঠান শেষ করেন। প্রবীণ সেতারশিল্পী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মালগুঞ্জি রাগে আলাপ, জোড় ও ঝালার পর তিনতালে দুটি গৎ পরিবেশন করেন। তবলায় অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিমিত ও বুদ্ধিদীপ্ত সঙ্গত উল্লেখ্য। সঙ্গীত সম্মেলনের শেষ শিল্পী পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী রাগ দরবারী পরিবেশন করেন। গানের প্রতিটি পরতে শিল্পী রাগরূপকে বিকশিত করেন। মিশ্র পিলুতে বহুশ্রুত ঠুমরি ‘সাইয়াঁ গয়ে পরদেশ’ গেয়ে শিল্পী সঙ্গীত সম্মেলনের মধুরেণ সমাপয়েৎ করেন। পরিশেষে একটা কথা বলা প্রয়োজন যে সুষ্ঠভাবে এই বিশাল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার সাধুবাদ যেমন আয়োজকদের প্রাপ্য ঠিক তেমনই সমগ্র অনুষ্ঠানের শব্দ প্রক্ষেপণের গুণগত মানের তারতম্যের দায় ও তাদের। আশাকরি ভবিষ্যতে তারা এই বিষয়ে সচেতন হবেন।
অমিত চক্রবর্তী
