পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
প্রথম ঘটনা: ছয় বছরের রিয়া। কলকাতার নামী স্কুলের পড়ুয়া। এমনিতে সব ভালো। শুধু বাড়ির খাবারে যত সমস্যা! ভাত, রুটি নয়। ফাস্ট ফুড খাওয়া নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই জেদ ধরা। প্রথম প্রথম বাবা-মা কিনে দিলেও পরে আরও জেদ দেখে বকাঝকা করেছিলেন তাঁরা। তাতে রিয়ার জেদ তো কমেইনি, উলটে বেড়েছে।
দ্বিতীয় ঘটনা: ১৩ বছরের শৌভিক। বাড়ি চন্দননগরে। স্মার্টফোন কেনার দাবিতে সে দুনিয়া তোলপাড় করছে! বাড়িতে তুমুল অশান্তি। বাবা-মা কমদামি ফোন কিনে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে হবে না। ছেলের জেদ সামলাতে গায়ে হাত তুলেছেন। তাতে বাড়ির জিনিসপত্র ভেঙে রাগ মিটিয়েছে শৌভিক।
এরকম ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। ছোটদের মধ্যে, বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির শুরুর দিকের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অত্যধিক জেদ এখন বড় সমস্যা। সন্তানদের জেদের জন্য বাড়িতে অশান্তিও প্রায়ই চোখে পড়ে। এমনকী জেদের বসে ছোটরা হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছে, এমন ঘটনাও বিরল নয়। অনেকেই ভাবেন সন্তানদের বকাঝকা বা গায়ে হাত তুললেই সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু আদতে তা হয় না। সময় বদলেছে। মানসিকতাও বদলেছে। গায়ে হাত তুলে জেদ কমানো যায় না। সন্তানদের জেদ কমাতে বুঝতে হবে তাদের সমস্যা। আগে দেখা যাক, শিশু-কিশোরদের মধ্যে অতিরিক্ত জেদের কারণ কী। এখন বেশিরভাগ পরিবারই ছোট। যাকে বলে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। বাবা-মা দু’জনেই হয়তো কর্মরত। তাই সন্তানরা অনেক সময়ই পরিবারের সদস্যদের থেকে পরিচর্যা বা ভালোবাসা ঠিকমতো পায় না। আর তার ফলে ছোটদের মধ্যে জেদ বাড়তে থাকে। তবে শুধু পরিবার ছোট হলেই এরকম হবে, তা নয়। অনেক সময় বড় পরিবারেও একই সমস্যা দেখা যায়। এক্ষেত্রে দেখতে হবে, অভিভাবকদের ভূমিকা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাবা-মায়েরা নিজেরাই প্রচণ্ড জেদি। আর সেই প্রভাব সন্তানদের উপরেও পড়ে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, বাড়ির অন্য কোনও সদস্য খুব চেঁচিয়ে কথা বলেন। এমনকী আশপাশেও কেউ যদি খুব চেঁচিয়ে, উদ্ধত ভঙ্গিতে কথা বলে, তার প্রভাব শিশু-কিশোরদের উপর পড়ে। অনেক ক্ষেত্রেই বাবা-মায়েরা সন্তানদের কোনও কাজ করতে বারণ করে, নিজেরাই সেই কাজগুলি করে থাকেন বা সন্তানদের যে মূল্যবোধে মানুষ করতে চান, তা নিজেরা পালন করেন না। আর তার প্রভাব সন্তানের মনস্তত্বেও পড়ে। সেও একইভাবে পথ চলতে চায়। শুরু হয় জটিলতা।
সমস্যার সমাধান কীভাবে?
প্রথমেই মনে রাখুন, মারধর করে সন্তানের জেদ কমানো সম্ভব নয়। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির কিশোর-কিশোরীদের গায়ে হাত তোলা মোটেই উচিত নয়। এতে হিতে বিপরীত হবে। তাই আগেই মারধর করা থেকে সংযত হোন। অভিভাবকদের নিজেদের শান্ত আচরণ করতে হবে।
বাবা-মাকে চেঁচিয়ে কথা বলা, জেদ দেখানো বন্ধ করতে হবে। বাড়ির অন্য কেউ বা আশপাশের কেউ এই ধরনের আচরণ করলে তাকেও সতর্ক করা প্রয়োজন। সন্তানদের যেটা করতে বারণ করবেন, নিজেরাও সেটা মেনে চলার চেষ্টা করুন।
বাবা-মা দুজনেই কর্মরত হলে, ছোট সন্তানকে যার কাছে রেখে যাচ্ছেন, তার ব্যবহার কেমন লক্ষ্য রাখুন। টিভি বা মোবাইলের সামনে সন্তানকে বসিয়ে রেখে কাজ করবেন না। উদাহরণ তৈরি করুন। নিজেরা মোবাইল কম ব্যবহার করে তারপর সন্তানদেরও মোবাইল কম ব্যবহারের পরামর্শ দিন। সন্তানদের দামী সামগ্রী কিনে দিতে চাইছেন না, অথচ নিজেরা সেইসব ব্যবহার করছেন, এমন যেন না হয়।
ছোট থেকেই সন্তান যা কিছু কিনে দেওয়ার আবদার করছে তাই কিনে দেবেন না। তাহলে পরবর্তী সময়ে হঠাৎ কিনে দেওয়া বন্ধ করলে সমস্যা তৈরি হবে। তাকে ছোট থেকেই বোঝান যে, চাইলেই সব জিনিস পাওয়া যায় না। সব সময়ই, চেঁচামেচি না করে শান্তভাবে বোঝালে কাজ হয় বেশি। তাই সন্তান জেদ দেখালে পালটা না চেঁচিয়ে শান্তভাবে বোঝান। অনেক সময় মানসিক সমস্যা থেকেও বাচ্চারা জেদ করে। দেখা যায়, মাইল্ড অটিজম, সাইকো-বিহেভিরিয়াল ডিজঅর্ডারের কারণে জেদাজেদি করে তারা। সেক্ষেত্রে তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।