মনোমোহন ভট্টাচার্য  সচিব  পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ

১৫ আগস্ট জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিলাম। সারাদিন পরিশ্রম হওয়ায় শরীরও ক্লান্ত লাগছিল। রাতে জ্বরও এসেছিল। পরদিনও জ্বর কমেনি। সহকর্মীদের পরামর্শ মেনে করোনা পরীক্ষা করালাম। ১৮ আগস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ এল। তবে তখনও জ্বর কমেনি। করোনা হয়নি জেনে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু, জ্বরের উপসর্গ থাকায় সেই সপ্তাহে বাড়ি থেকেই অফিস করলাম। এই এক সপ্তাহের মধ্যেই শরীর আরও খারাপ হতে শুরু করল। স্বাদ চলে গেল। কিছুরই গন্ধ পাচ্ছিলাম না। তবে, জ্বর কমে যায়। আমি মেদিনীপুরে বার্জটাউন সরকারি আবাসনে থাকি। কোয়ার্টারে সংস্কারের কাজ হওয়ায় স্ত্রী, মেয়ে বাড়ি চলে গিয়েছিল। একাই কোয়ার্টারে রান্না করে দু’বেলা খেতাম।
২৪ আগস্ট জেলা পরিষদের কর্মীদের সকলের অ্যান্টিজেন পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। গত সপ্তাহে রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় বেশ উৎফুল্ল ছিলাম। নিজে উদ্যোগী হয়ে অনেক কর্মীর অ্যান্টিজেন টেস্ট করেছি। সহকর্মীরা আমাকে ফের পরীক্ষা করার জন্য বলেন। আমিও রাজি হয়ে যাই। অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ আসে। মুহূর্তের মধ্যে করোনার ভয় আমাকে চেপে ধরে। ২৪ তারিখ আর কোয়ার্টারে ফিরে যাইনি। সোজা অ্যাম্বুলেন্স করে শালবনী করোনা হাসপাতালে যাই। সেখানেই ভর্তি ছিলাম। বহুদিন ধরে আমি দু’বেলা প্রাণায়াম করি। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরও হাসপাতালের বেডে বসেই কখনও বেলুড় মঠের আরতির গান, কখনও আবার চৌরাশিয়ার বাঁশি মোবাইলে বাজিয়ে দু’বেলা প্রাণায়াম করতাম। বারেবারে গরম জল খেতাম। এই দুই অভ্যেসই আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করেছে। তবে, রাতের দিকে মাঝেমধ্যে শ্বাসকষ্ট হতো। খুব ভয় লাগত। হাসপাতালের চিকিৎসকরা এসে নাম জিজ্ঞাসা করতেন। জোরে নিজের নাম বলার জন্য বলতেন। আসলে কথা বলতে গিয়ে জিভ জড়িয়ে যাচ্ছে কি না, তা তাঁরা দেখতেন। অবশেষে হাসপাতালের চিকিৎসায় সেরে উঠি। ২৮ তারিখে অ্যান্টিজেন এবং পরে আরটিপিসিআর পরীক্ষা করি। দুটো রিপোর্টই নেগেটিভ আসে। ৩ সেপ্টেম্বর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়। বাড়িতে ফিরে আরও ১৪ দিন গৃহবন্দি ছিলাম। করোনাকে ‌জয় করে বুঝতে পারছি, ভয় না পেলেই জয় আসবে।