মানবেন্দ্র বিশ্বাস, ব্যবসায়ী: করোনা আক্রান্ত হলে ভয় পাওয়ারই কথা। কিন্তু দ্রুত নিজেকে সামলে নেবেন। আর যাবতীয় সাহস সঞ্চয় করে বলবেন, ‘সুস্থ হবই’। দেখবেন করোনা থাকবে না। রিষড়ার চারবাতি এলাকায় আমার দোকান। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছি এই দিন পনেরো হল। বুঝেছি, আত্মবিশ্বাসই হল এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করবার সেরা হাতিয়ার।
একটু পিছনপানে তাকাই। ২৯ জুলাই। রাতে যখন রিষড়া পুরসভার কর্মীরা এলেন, তখন ভালো করে ঘরদোর, ছেলে-বউকে দেখছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, আর যদি না ফিরি! তাই ভালো করে এ জীবনের অর্জন একটু দেখে যা‌ই। বুকের মধ্যে কে যেন ভীষণ জোরে ঢাক পিটছিল! সেই শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম কানে।
রিষড়া থেকে শ্রীরামপুরের করোনা হাসপাতালের পথটুকু কিছু ভাবতেই পারিনি। মাথা ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। হাসপাতালে যাওয়ার পর অনেকক্ষণ সেই ফাঁকা ব্যাপারটা ছিল। কিন্তু তারপরই ভেবে দেখলাম আসলে সর্দি-জ্বরের মতো একটা সংক্রমণ বই তো কিছু নয়, তাহলে এত ভয় কেন পাচ্ছি? সেই শুরু। কিছুক্ষণ পরেই মনে হল, ভয়টা একটু ভয় পেয়েছে। তারপরই নিজেকে মনে হচ্ছিল, ২২ গজে দাঁড়ানো বীরেন্দ্র সেওয়াগ! কে বোলার ভাবার দরকার নেই, ব্যাট ঠিক করে চালাও। তাতেই হবে কিস্তিমাত। ২৯ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হই। ৩ আগস্টই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরদিন দ্বিতীয়বার করোনা পরীক্ষা করানো হয়। সেই রিপোর্ট আসতে কিছুটা সময় লাগে। ৮ আগস্ট আমায় ছুটি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আপনাদের জানতে ইচ্ছা হতে পারে, সব সমস্যা কি চলে গিয়েছিল? বলব, নাহ্। ঩কিন্তু ৯৮ শতাংশ সমস্যাই ছিল না। এই সময়ে চিকিৎসকদের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। নিজেকে সাহস দিয়েছি। এমনকী বাড়ি থেকে স্ত্রী, ছেলে ফোন করলে আমিই ওঁদের উল্টে আশ্বাস দিতাম! ডাক্তারবাবুরা যেভাবে ভরসা দিতেন, তাতেই আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি। রিষড়ার ফেরিঘাটের বাড়িতে ফেরার পর মনে হচ্ছিল, ছুটি কাটিয়ে ফিরছি। বিশ্বাস করুন বা না করুন, আমার এখনও এমনটাই মনে হয়। আসল কথা হল, ‘যো ডর গয়া ও মর গয়া’। করোনা শুধু একটি না দেখা ভয়। আমি নিজে দেখে বুঝেছি, ভয়টাও তেমন ভয়াবহ নয়।