করোনা-পর্বের শুরু থেকেই শুনে আসছি, চিকিৎসক, নার্সের মতো আমরা পুলিসকর্মীরাও এই যুদ্ধে প্রথম সারির যোদ্ধা। তাই আমাদের স্যারেরাও সেই কথা বলে সবসময় সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবু, অনেক সতর্কতা সত্ত্বেও করোনা হয়েই গেল। আমি থাকি শিবপুর থানার পুলিস ব্যারাকে। সেখানকার সবার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা নেওয়া হয় গত ২০ এপ্রিল। ২৪ এপ্রিল রিপোর্ট জানতে পারি আমার সঙ্গে বেশ কয়েকজন সহকর্মীর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। আমি গিয়ে ভর্তি হই গোলাবাড়ির বেসরকারি করোনা নার্সিংহোমে। আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকেই ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে প্রায় ১৬ দিন থাকার পর ১০ মে হাসপাতাল থেকে ছুটি হয়। তারপর ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়। তারপর ২৪ মে আবার কাজে যোগ দিই। এখন সুস্থ। স্বাভাবিকভাবে ডিউটি করে চলেছি।
শিবপুরের পুলিস বারাকে থাকলেও আমার বাড়ি বর্ধমানের কুলটিতে। কোভিড পজিটিভ হয়েছে শুনে বাড়ির লোকজন দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল। তবে আমি ভরসা দিয়ে যাচ্ছিলাম। আর আমাকে ভরসা ও সাহস জুগিয়েছেন আমার বিভাগের সহকর্মী, উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। ২৪ তারিখ যখন নার্সিংহোমে ভর্তি হই, তখন কোনও উপসর্গ মানে সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি ছিল না। কিন্তু ভর্তি হওয়ার তিন-চারদিন পর থেকে জ্বর আসতে শুরু করে। জ্বর এলেই ভীষণ মাথা ধরত। ডাক্তারবাবু ও নার্স দিদিরা খেয়াল রাখতেন। একটা ওষুধ দিয়েছিলেন, যেটা ঈষদুষ্ণ জলে দিয়ে দিনে তিন-চারবার গার্গল করতে হতো। ওভাবে গার্গল করলে স্বস্তি পেতাম। আবার ঈষদুষ্ণ জলে পাতিলেবুর রস দিয়ে তিন-চারবার পান করতে হতো। এছাড়া বেশ কয়েকটা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তবে এই সময় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাওয়াদাওয়া করতে পারলে উপকার মেলে। সঙ্গে আপেল, লেবু ইত্যাদি ফল খেতে পারলে ভালো। বলেছিলেন ডাক্তারবাবুরা।
টানা এতদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকিনি কোনওদিন। মাঝেমধ্যে একঘেয়ে লাগত। তবে ফোন কাছে থাকায় এবং কথাবার্তা বলতে পারার মতো শারীরিক অবস্থা থাকায় খারাপ বা বিরক্ত লাগলে বাড়ির লোক, আত্মীয়স্বজনকে ফোন করতাম। ভিডিও কলেও কথা বলতাম পরিজনদের সঙ্গে। আমাদের বড় সাহেবরা সেই সময় নিয়ম করে খোঁজখবর নিয়েছেন। তাছাড়া দু’তিনজন সহকর্মী তো একসঙ্গেই ভর্তি ছিলাম আমরা। করোনা থেকে সেরে উঠে আমার একটা জিনিস মনে হয়, এই রোগ নিয়ে অহেতুক আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। আমি যদি এই ৫৬ বছর বয়সে রোগ থেকে সম্পূর্ণ সেরে উঠে আবার পুরোদমে কাজ করতে পারি, তাহলে আপনিও পারবেন। সবাইকে বলব, পরিচিত কারও করোনা হলে তাঁর পাশে থাকুন মানসিকভাবে। তাঁর পরিবারের পাশেও থাকুন। মহামারীর বিরুদ্ধে আমাদের সকলের সম্মিলিত লড়াই জয়লাভ করবে, এই আশা রাখি।
বিশ্বজিৎ আচার্য সাব ইন্সপেক্টর  শিবপুর থানা  হাওড়া