সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
প্রথম কোথায় বাওবাব গাছের দেখা মিলেছিল? সম্প্রতি এ বিষয় গবেষণা করেছেন লন্ডনের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেন্সের ডঃ ইলিয়া লেইচ। জানা গিয়েছে, আজ থেকে প্রায় ২ কোটি ১০ লক্ষ বছর আগে মাদাগাস্কারে প্রথমবার বাওবাবের সন্ধান মেলে। তারপর সাগরের ঢেউয়ে ভাসতে ভাসতে আফ্রিকার মূল ভূখণ্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে গাছের বীজ। সেখান থেকেই জন্ম নিয়েছে বাওবাবের একাধিক প্রজাতি। আমাদের দেশেও কিছু জায়গায় এই অদ্ভুত গাছের সন্ধান পাওয়া যায়। যেমন মধ্যপ্রদেশের ধার অঞ্চল। সেখানে অবশ্য এই গাছ ‘মান্ডু কি ইমলি’ নামে বিশেষ পরিচিত। পৃথিবীর বুকে বাওবাবের মোট ন’টি প্রজাতি রয়েছে। তার মধ্যে ছ’টি রয়েছে মাদাগাস্কারে। এছাড়া আফ্রিকায় দু’টি এবং অস্ট্রেলিয়ায় একটি প্রজাতির সন্ধান মিলেছে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাদাগাস্কারের পাশাপাশি আফ্রিকার আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে এই ‘ট্রি অব লাইফ’। আফ্রিকার বাসিন্দাদের মধ্যে এই গাছকে নিয়ে একাধিক কিংবদন্তি রয়েছে। যেমন জামবেজি নদীর ধারে বসবাসকারী আদিবাসীদের বিশ্বাস, কোনও এক সময় তাঁদের আরাধ্য দেবতার খুব রাগ হয়েছিল। রাগের বশে গাছটিকে মাটি থেকে উপড়ে আকাশে ছুড়ে ফেলে দেন তিনি। তারপর থেকেই বাওবাবের এমন বিকট আকৃতি। আরও একটি কাহিনি বলছে, একবার ঈশ্বর একটি নেকড়েকে এই গাছ উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু গাছের এই বিকট চেহারা দেখে সেটিকে উল্টো অবস্থায় মাটিতে পুঁতে দেয় সে। এই কারণেই হয়তো বাওবাবের আরেকটি নাম ‘আপসাইড ডাউন ট্রি’।
মস্ত বড় কাণ্ডের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জল রাখতে পারে এই বাওবাব গাছ। যা মরুভূমির মতো শুষ্ক পরিবেশে তাকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। গাছের মোটা ছাল দাবানলের সময় সুরক্ষা প্রদান করে। আর মোটা শিকড় রক্ষা করে আমাদের পৃথিবীকে। কারণ এর সাহায্যে ভূমিক্ষয়ের প্রক্রিয়া প্রায় হয় না বললেই চলে। গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, বাওবাবের আয়ু প্রায় তিন হাজার বছর।
পৃথিবীতে থাকা বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদের মধ্যে সত্যিই বৈচিত্র্যময় এই বাওবাব। এই গাছের ফল পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ। কাণ্ডের নরম অংশ থেকে সুতো বানিয়ে দিব্যি দড়ি এবং কাপড় নির্মাণ করা যায়। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে বাওবাবের ডালে সুন্দর সাদা ফুল ফোটে। ঠিক যেন খোঁপা। সূর্য উঠলেই তা বন্ধ হয়ে যায়। এই ফুলের গন্ধের টানে দূর দূর থেকে ছুটে আসে বাদুড়। মধু পান করার পাশাপাশি ফুলের পরাগায়ণে সাহায্য করে তারা। ফুলের রেণু দিয়ে একধরনের আঠা তৈরি করা যায়। ফলের বীজ শুকিয়ে কফির মতো পানীয় তৈরি করেন স্থানীয়রা। যা অত্যন্ত সুস্বাদু। গাছের পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম। সব মিলিয়ে একটি বড় বাওবাব গাছ একটি গোটা বাস্তুতন্ত্রকে আশ্রয় দিতে পারে।