সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
আসলে গ্রহের অণু থেকে গ্রহাণু। আমাদের সৌরমণ্ডলের বাসিন্দা এগুলি। সাড়ে চারশো কোটি বছর আগে যখন গ্রহগুলি তৈরি হচ্ছিল, তখন থেকেই এগুলির অস্তিত্ব রয়েছে। অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানীরই ধারণা, সৃষ্টির সময় কোনও কিছুর ধাক্কায় কোনও একটি গ্রহ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়ার জন্য গ্রহাণু তৈরি হয়েছে। গ্রহাণুগুলি অন্য সমস্ত গ্রহের মতোই সূর্যের চারদিকে নিজস্ব কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে। বেশিরভাগ গ্রহাণু মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝখানের একটা অঞ্চলে থাকে। এই অঞ্চলটি প্রায় ৫৫ কোটি কিলোমিটার। সেখানে রয়েছে লক্ষ লক্ষ গ্রহাণু। সেগুলিকে একত্রে ‘গ্রহাণু বলয়’ বলা হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝে আরও একটি গ্রহ তৈরি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি মূলত দু’টি কারণে। ওই গ্রহাণুগুলির ভর অত্যন্ত কম। গ্রহাণু বলয়ের মোট ভর আমাদের উপগ্রহ চাঁদের থেকেও কম। আর তার উপর রয়েছে বৃহস্পতির মতো সুবিশাল গ্রহের প্রবল মাধ্যকর্ষণ শক্তি। এরজন্যই গ্রহাণুগুলি একে অপরের সঙ্গে মিলে একটা বামন গ্রহও তৈরি হতে পারেনি।
আর একটা বিষয় হল সৌরজগতে গ্রহ-উপগ্রহগুলি সাধারণত গোলাকার। কিন্তু গ্রহাণুগুলি এমন নয়। তাদের নির্দিষ্ট কোনও আকার নেই। এমনটা কেন হল? কারণ সেই মাধ্যকর্ষণ। এই বল শক্তিশালী না হওয়ায় সেগুলি সম্পূর্ণ গোলাকার হতে পারেনি। তবে কোনও কোনও গ্রহাণু প্রায় গোলাকার। এপর্যন্ত যে গ্রহাণুগুলির হদিশ পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড়টির নাম সেরেস। এর ব্যাস ৯৪০ কিলোমিটার। আর সবচেয়ে ছোটটি ১ কিমিরও কম। কোনও গ্রহাণু আবার পিঠে উপগ্রহ নিয়েও ঘুরে বেড়ায়। এদের কোনও বায়ুমণ্ডল থাকে না।
সর্বপ্রথম মানুষের চোখে গ্রহাণুর অস্তিত্ব ধরা পড়ে ১৮০১ সালের জানুয়ারিতে। যিনি এর হদিশ পেয়েছিলেন তিনি ইতালিয়ান যাজক তথা গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিউসেপ পিয়াজি। তাঁর আবিষ্কৃত গ্রহাণুর নামই ‘সেরেস’। গ্রহাণুগুলির মধ্যে অনেকগুলিই সম্পূর্ণভাবে পাথরের। আবার লোহা ও নিকেলের মতো ধাতু দিয়ে গঠিত ধাতব গ্রহাণুও রয়েছে। আরও গ্রহাণু রয়েছে যেগুলির মূল উপাদান কার্বন। এছাড়াও বলয়ের একেবারে প্রান্তে থাকা বেশ কিছু গ্রহাণু বরফ ও অন্য কঠিন পদার্থ দিয়ে তৈরি।
গ্রহাণু বলয় নিয়ে বিজ্ঞানীরা নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কাজেই ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন তথ্য সামনে আসবে। ছোট্ট বন্ধুরা, আমরাও পরে গ্রহাণু সম্পর্কে আরও বিস্তারিত আলোচনা করব।