সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
গ্রেট বিয়ার
সন্তান হারানোর দুঃখে একবার এক এস্কিমো মহিলা নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে বরফের রাজ্যে এদিক সেদিক দিকভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে সে একটা নির্জন কাঠের বাড়িতে এল। কেউ কোথাও নেই। সদর দরজা খোলাই ছিল। মহিলা বাড়ির ভেতরে ঢুকল। দেখল, সারি সারি ভালুকের চামড়া ঝুলছে বাড়ির ভেতরে একটা আলনায়।
সেই বাড়ির মানুষজন আসলে মানুষরূপী ভালুক। ভালুকরা বাড়ি ফিরে সেই মহিলাকে দেখে অবাক হল। কিন্তু তার দুঃখের কথা শুনে তাকে তাড়িয়ে দিল না। সেখানেই থাকতে দিল।
তারা রোজ শিকারে যেত। মহিলা একা বাড়িতে তাদের অপেক্ষায় থাকত। তবে রোজই তারা কিছু না কিছু ধরে নিয়ে আসত। এভাবেই দিন কাটছিল। কিন্তু একদিন মহিলাটির বাড়ির জন্য খুব মন কেমন করতে থাকে। পরিজনদের খুব দেখতে ইচ্ছা করছিল ওই মহিলার।
ভালুক-কর্তা তাকে বাড়ি ফেরার অনুমতি দিল। কিন্তু সেই সঙ্গে বলে দিল, ‘ঘুণাক্ষরেও আমাদের কথা আপনার আত্মীয় পরিজনদের বলবেন না।’
মহিলাটি বাড়ি ফিরল। সবাই জিজ্ঞাসা করল, এতদিন কোথায় ছিলে? যা দেখেছিল তা বলার জন্য তার খুব ইচ্ছা করছিল। কিন্তু মুখ বন্ধ রাখল সে।
কিন্তু একদিন স্বামীকে বলে ফেলল, ‘জানো, আমি মানুষরূপী ভালুক দেখেছি।’
জানাজানি হওয়া মাত্র আশপাশের মানুষজন স্লেজ গাড়ি নিয়ে ভালুক শিকারে বেরল। শুরু হল হইহই, চিৎকার। এত মানুষ আসছে দেখে ভালুক-কর্তা ভয় পেয়ে গেল। কে তাদের আস্তানার ঠিকানা দিয়েছে, তা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল।
সেদিন রাতেই সে বিশ্বাসঘাতক মহিলাকে খুঁজে বের করল এবং তাকে উচিত শিক্ষা দিল। কিন্তু যখন সে পালাতে যাচ্ছে, তখন স্লেজ গাড়ির কুকুরগুলো জেগে গেল। কুকুরগুলি ছাড়া ছিল। তারা ভালুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ভালুকও তাদের মারতে উদ্যত হল। কিন্তু হঠাৎ ভালুক-কুকুর সবাই আশ্চর্যজনকভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠল এবং আকাশের তারা হয়ে গেল। সেই নক্ষত্রপুঞ্জের নাম হল ‘গ্রেট বিয়ার’। যেটা দেখতে একটা ভালুক এবং তার পাশে ঘেউ ঘেউ করা কুকুরের মতো দেখায়।
তারার দীর্ঘশ্বাস
একবার একজন এস্কিমো মাছ শিকারি দিগন্ত বিস্তৃত বরফের উপর করাত দিয়ে একটা গোলাকার দাগ কাটল। তারপর সেই গোল বরফ কেটে ফেলল। গোলাকার বরফের ঢাকনাটা তুলে ফেলতেই নীচে নীল জল দেখা গেল। সে সেই গর্তের পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল, কখন সিল মাছ শ্বাস নেওয়ার জন্য এই গর্তে উঠে আসে। তার হাতে হারপুন।
ওই অঞ্চলে একটি গিরিখাত ছিল। দু’পাশে উঁচু পাথরের পাহাড়। মাঝে বরফের নদী। সেই জমে যাওয়া নদীর উপরে কয়েকটি শিশু খেলছিল। শিকারির গর্তের মুখে যেই না একটা সিল মাছ উঠে আসছিল, বাচ্চারা খেলাচ্ছলে চিৎকার করে উঠতে সেটা ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল। শিকারি গেল বেজায় চটে।
শিকার হাত ফস্কে যাওয়ায় সে চিৎকার করে অভিশাপ দিল— ‘গিরিখাত বন্ধ হোক।’
আর সঙ্গে সঙ্গে দুটো পাহাড় ক্রমে কাছে এসে শিশুগুলি সহ জোড়া লেগে গেল। দূর থেকে এটা দেখে শিশুদের মা-বাবা চিৎকার করতে করতে দৌড়ে এল। তারা শিকারিকে মারতে উদ্যত হল। কিন্তু হঠাৎ সে উজ্জ্বল হয়ে উঠল এবং একটা তারা হয়ে আকাশে উঠে গেল। সেই তারার নাম ‘নালাউসারটোক’। সন্ধ্যাতারা। প্রতি সন্ধ্যায় উত্তর মেরুর উপরে সে ঝুলে থাকে আর গিরিখাত থেকে উঠে আসা দীর্ঘশ্বাস শোনে।