সপরিবারে অদূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে আনন্দলাভ। কাজকর্মে কমবেশি ভালো। সাহিত্যচর্চায় আনন্দ। ... বিশদ
র্ঘমেয়াদি মহাকাশ যাত্রার ক্ষেত্রে মহাশূন্যে অক্সিজেনবিহীন পরিবেশে অক্সিজেন উৎপাদন অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। অক্সিজেন ছাড়া মহাকাশযানের ভিতরে এবং মহাকাশ স্টেশনে কোনও কাজই করতে পারবেন না মহাকাশযাত্রীরা।
মহাকাশযানে অভিযোজিত সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য একটি গাছের নাম হল ক্লোরেলা। এটি এক ধরনের শৈবাল। এর দেহটি মূল, কাণ্ড ও পাতায় ভাগ করা নয়। তাই এর নাম থ্যালাস উদ্ভিদ। ছোট এই গাছটির একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হল প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারে। অত্যন্ত হালকা এবং সহজে চাষযোগ্য এই গাছটির কদর বহুদিন থেকেই। এই গাছটি সালোকসংশ্লেষের সময় মহাকাশযানের ভিতরে থাকা কার্বন-ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। সেই অক্সিজেন আবার যাত্রীরা শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যবহার করে থাকেন। এই শৈবাল ছাড়াও অন্যান্য গাছও মহাশূন্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
২০১০ সাল থেকে মহাকাশে স্থায়ী বসতি স্থাপনের জন্য চেষ্টা শুরু করেছে অনেক দেশই। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনগুলিতে গাছ লাগানো হচ্ছে। মাইক্রোগ্র্যাভিটি বা প্রায় ওজনশূন্য অবস্থায় গাছ কীভাবে অভিযোজিত হবে, তা নিয়েই চলছে গবেষণা। ১৯৮৩ সালে কলম্বিয়া স্পেস শাটলে বিজ্ঞানী অ্যালান এইচ ব্রাউন গাছের উপর ঘূর্ণনের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেন। এছাড়াও মহাকাশযানে সূর্যমুখী গাছ রেখে তার ওপর পৃথিবীর ঘূর্ণনের প্রভাব লক্ষ করা হয়েছিল। নাসা, ইসরো, ইউরোপিয়ান মডিউলার কাল্টিভেশন সিস্টেম ও কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি প্রত্যেকে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে গাছ লাগানো, তাদের বৃদ্ধি ও বংশ বিস্তারের উপর কাজ করে চলেছে। আইএসএস বা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে লেটুস শাক চাষ ও তাদের বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। সব মিলিয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে মহাকাশযানে খাদ্য এবং অক্সিজেনের সমস্যা না হয়।
তবে রাসায়নিক পদ্ধতিতেও অক্সিজেন উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের অক্সিজেন যুক্ত যৌগকে ভেঙে অক্সিজেন উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। এইরকম একটি রাসায়নিক পদ্ধতির নাম হল ইলেক্ট্রোলাইসিস। এখানে তড়িৎ শক্তিকে ব্যবহার করে জলকে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনে বিশ্লেষিত করা হয়। বিজ্ঞানীরা অক্সিজেন উৎপাদনকারী একটি ফোটোইলেকট্রোকেমিক্যাল বা পিইসি ডিভাইস তৈরি করেছেন। নতুন আবিষ্কৃত এই ডিভাইসটি ওজনে হালকা এবং অক্সিজেন যেমন তৈরি করতে পারে, ঠিক সেইরকম কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। ফলে মহাকাশযানের ভিতরে বাতাসকে অনেকখানি পরিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে। তবে মনে রাখা প্রয়োজন, মহাকাশযানের মধ্যে পৃথিবী থেকে প্রচুর পরিমাণে জল নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই এই পদ্ধতি দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায় না। সোডিয়াম ক্লোরেট বা লিথিয়াম পারক্লোরেট ইত্যাদি থেকেও রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে অক্সিজেন তৈরি করা হয়।
তবে এই নিয়ে প্রতি প্রতিমুহূর্তে গবেষণা চলছে। যেমন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ মঙ্গলে অক্সিজেন উৎপাদন পদ্ধতির জন্য আবিষ্কার করেছে ‘মার্সস অক্সিজেন ইনসিটু রিসোর্স ইউটিলাইজেশন এক্সপেরিমেন্ট’ বা মক্সি। এই মক্সি মঙ্গলে অবস্থিত কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে সরাসরি অক্সিজেনে রূপান্তরিত করবে। এই প্রক্রিয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। মঙ্গল ও চাঁদের মাটি থেকেও অক্সিজেন নিষ্কাশনের চেষ্টা চলছে।
এছাড়াও মহাকাশচারীদের ব্লিদিং এক্সারসাইজ বা শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের উপর রীতিমতো ট্রেনিং নিতে হয়। অর্থাৎ প্রযুক্তির যেমন উন্নতি প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনেরও, যা স্বল্প অক্সিজেনযুক্ত পরিবেশে অভিযাত্রীদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।