উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে শুভ ফল পাবে। কর্মপ্রার্থীদের ... বিশদ
পুজোর ছুটিতে পিসির বাড়ি
পুজোর ছুটিতে প্রতিবারই গুড়াপে পিসির বাড়িতে বেড়াতে যাই। এবারও ষষ্ঠীতে চলে গিয়েছিলাম। পিসির বাড়ি আমার কাছে আবদার পূরণ হওয়ার ছাড়পত্র। দু’টো দিন আনন্দে কেটেছে। অন্য সময়েও পিসিবাড়ি যাই। কিন্তু পুজোর সময়গুলো অন্যরকম। সে এক হরেক মজার দেশ। বাড়ি ফিরে অষ্টমীতে ঠাকুর দেখতে গিয়েছিলাম মেমারিতে। এটাও প্রতিবারের রুটিন। চুঁচুড়াতে রাতে ভিড় ঠেলে প্রতিমা দেখার আনন্দ বলে বোঝাতে পারব না। মেমারি ও গুড়াপে যেতে যেতেও হরেক ঠাকুর দেখেছি। কিন্তু দশমীতে ফের সেই বরাবরের মন খারাপটা ঘিরে ধরেছিল। প্রতিবারই কেন যেন মনে হয়, পুজোটা বড় তাড়াতাড়ি চলে গেল!। এবারও তাই হয়েছে।
প্রিয়ম ভট্টাচার্য, ষষ্ঠ শ্রেণী
মামাবাড়ি ভারী মজা
মামাবাড়ি, সব পেয়েছির দেশ। ছোটবেলা থেকেই আমরা পুজোর সময় মামার বাড়িতে যাই। পিণ্ডিরায় মামার বাড়িতেই পুজো কাটে। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই দেখেছি মামার বাড়ি মানে পুজোয় বেলাগাম আনন্দ। একে পুজোর সময় তার উপরে মামাবাড়ি যাওয়া। ফলে, অফুরন্ত যা খুশি তাই করা। আর না চাইতেই রকমারি খাওয়াদাওয়া। প্রতিবারের মতো এবারও অষ্টমীতে অঞ্জলি দিয়েছি। ওই মুহূর্তটা একটা অদ্ভুত অনুভূতি ঘিরে ধরে। ঠিক কেমন তা বলা যাবে না। আর আছে নাটক। হ্যাঁ, পুজোর সময় পিণ্ডিরায় নাটকের আসর বসে। সে এক ভারী মজাদার ব্যাপার। এবারও নাটক দেখেছি।
অরিত্র চট্টোপাধ্যায়, অষ্টম শ্রেণী
জীবনের সেরা পুজোর ছুটি
এবারের পুজো আমার জমজমাট কেটেছে। আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম চারদিনের। দুগ্গাঠাকুরের কৃপা পরিকল্পনা মতোই সবটা করেছি। সপ্তমীর দিন স্কুলের পুজোতে কাটিয়েছি। আমাদের স্কুল বোধহয় রাজ্যে একমাত্র যাদের নিজেদের দুর্গাপুজো আছে। জমিদারি আমলের সেই ঠাকুর দালান আমাদের স্কুলের মধ্যেই আছে। পুজোর একটা দিন আমি সেখানেই কাটিয়েছি। প্রতিদিনের চেনা স্কুলটাকে সেদিন নতুন করে নতুন চোখে দেখতে পেয়েছি। এবারের পুজোয় এটা একটা বিরল অভিজ্ঞতা। বেদমন্ত্র উচ্চারণ, প্রাচীন এক জমিদারের ভগ্নদশার দেবদেউল, ধূপের ধোঁয়া, দেবী সিংহবাহিনী, সব মিলিয়ে চেনা স্কুলটাকে অচেনা মনে হচ্ছিল। অষ্টমীতে মামার বাড়ি ইনছুরে গিয়েছিলামা। সেখানে ফাঁক বুঝে একটু ঠাকুর দেখেছি। আর নবমী, দশমী কাটিয়েছি সমুদ্র সৈকতে। দীঘায় সে এক বর্ণময় সময় কেটেছে। সব মিলিয়ে এবারের পুজো আমার জীবনের সেরা পুজোর ছুটি হয়ে গিয়েছে।
অর্ণব দাস, দশম শ্রেণী
ইসকন মন্দিরে গিয়েছিলাম
এবার গ্রামের বাড়িতে থেকেই পুজো দেখেছি। বৈঁচিগ্রামের সব পুজোমণ্ডপে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখা, দুপুরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাটাই ছিল রুটিন। গ্রামের পুজোর একটা আলাদা মেজাজ আছে। ছোট থেকে বিষয়টি দেখেছি কিন্তু এবারই সেটাকে আলদা করে অনুভব করতে পেরেছি। আসলে শরৎ, দুর্গোৎসব বলতে বইপড়া জ্ঞানটাকে গ্রামের মাটিতেই বোধ হয় বেশি করে মেলানো যায়। পুকুর পাড়, মণ্ডপ থেকে ধূপের ধোঁয়া বা ঢাকের বাদ্যি, কাছেই মাথা দোলানো কাশের সারি বা পেঁজা তুলোর মতো মেঘবহুল আকাশ। নিজের অনন্য অনুভূতির কারণেই এবারের পুজো আমার কাছে একটি বিশেষ পুজো। একদিন বাইরে গিয়েছিলাম। নবমীর ভোরে বাবা-মায়ের সঙ্গে নবদ্বীপের ইসকন মন্দিরে গিয়ে সারাদিন ছিলাম। দুর্গাপুজোর মধ্যে বৈষ্ণবতীর্থ ভ্রমণও একটি অন্যরকম আস্বাদ বয়ে এনেছিল।
হিমেল মণ্ডল, নবম শ্রেণী
অনেক আনন্দ করেছি
কথায় বলে না পায়ের তলায় সর্ষে, এবারের পুজোতে যেন ঠিক তাই হয়েছিল। পুজো আসার আগে থেকেই মনটা উড়ি উড়ি করছিল। বিধিনিষেধের বেড়াজালও কেমন যেন রূপকথার গল্পের দৃশ্যের মতো আচমকা গায়েব হয়ে গিয়েছিল। আর তাই ‘মন মোর মেঘেরও সঙ্গী’ বলে দে ছুট। গোটা বৈঁচিগ্রাম চষে ফেলেছি এবারের পুজোয়। ঠাকুর আছে তাও সই না আছে তাও শুধু ঘোরা আর ঘোরা। বন্ধুদের সঙ্গেই ঘুরে বেড়িয়েছি। এ মণ্ডপে ধুনুচি নাচ তো ওই মণ্ডপে বোধনের স্বাদ নিয়েই আবার ছুট। এর মাঝে একদিন অবশ্য বাইরে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। মেমারিতে আমার দিদির বিয়ে হয়েছে। সেখানেই পরিবারের সঙ্গে সপ্তমীতে গিয়েছিলাম। সেখানেই খুব ঘুরেছি। তবে সেটা পরিবারের সঙ্গে।
অর্জুন সাঁতরা, দশম শ্রেণী
কলকাতায় প্রথম পুজো দেখা
এই প্রথমবার পুজোর কলকাতা দেখতে গিয়েছিলাম। একদিনই মহানগরীর পথে নামার সুযোগ হয়েছিল কিন্তু সেটাই একটি অমলিন স্মৃতির যাবতীয় রসদ জুগিয়ে গিয়েছে। সেই যাওয়ার আগে থেকে একটা উত্তেজনা কাজ করছিল। কথা ছিল নবমীর সকালে ট্রেনে চেপে যাব। অষ্টমীর রাত থেকেই ঘড়ি ছিল নিত্যসঙ্গী। প্রতি মুহূর্তে সময় দেখতে গিয়ে মনে হচ্ছিল যেন ঘড়ির ব্যাটারি হয়তো বা ফুরিয়ে এসেছে নইলে এত ধীরে কাঁটাগুলো নড়ে কেন? তারপর সকাল হতেই নিজে নিজেই তৈরি হয়ে গিয়েছিলাম। মহানগরীর পথে যখন দুপুরে ঘুরছি তখন মোহাবিষ্টের মতো পুজোর তাকলাগানো সৌন্দর্য দেখেছি। বাড়ি ফেরার পরই বিদায়ঘণ্টা বেজে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই আনন্দের প্রহর দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ার যন্ত্রণা তো থাকেই। তবে শুধু নবমী নয়, সপ্তমী, অষ্টমীতেও খুব আনন্দ হয়েছে। বৈঁচিতেই বন্ধুদের সঙ্গে খুব হুল্লোড় করেছি। একদিন মেমারিতেও ঠাকুর দেখতে গিয়েছিলাম।
কল্লোল সানা, অষ্টম শ্রেণী
বন্ধুদের সঙ্গে গল্পগুজব
সপ্তমী থেকে দশমী, চারদিনই নানা জায়গায় ঠাকুর দেখে বেড়িয়েছি। তবে সেসব ছিল রাতের বেলায়। আর দিনের বেলা গ্রামের প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে বন্ধুদের সঙ্গে চরকিপাক খাওয়াটাই ছিল পুজোর রোজনামচা। প্রতিবারের মতো এবারও একদিন কলকাতায় ঠাকুর দেখতে যাওয়া হয়েছিল। রাতের মহানগরীতে ভোরপর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে ঘুরে ঠাকুর দেখেছি। সেটা ছিল সপ্তমী। এরপর অষ্টমী আর নবমী চুঁচুড়া, ব্যান্ডেল, পাণ্ডুয়ায় ঠাকুর দেখা হয়েছে। কখনও পরিবারের সঙ্গে কখনও বন্ধুদের সঙ্গে পুজোর মণ্ডপে ঘোরা আর বাড়িতে নির্ভেজাল আড্ডায় চারদিন কেমন করে কেটে গিয়েছিল টেরই পাইনি। দশমীতে ভাসানযাত্রাও দেখতে গিয়েছিলাম। আর পুজোর আরও একটা মজার কথা না বললেই নয়। তা হল নানান পদের খাওয়াদাওয়া। সে কলকাতাই হোক আর চুঁচুড়া, ঘরে বাইরে বাহারি ভোজন হয়েছে এবার।
সৌম্যদীপ ঘোষ, নবম শ্রেণী
অসাধারণ ট্রেন সফর
পুজো মানে আমার কাছে নিয়মবিহীন কয়েকটা দিন। আর অবশ্যই নাড়ু, মুড়কি। ঘুরতে না পারলেও তেমন আপত্তি নেই। যদিও এবারের পুজোটা বেশ অ্যাডভেঞ্চারের মতো কাটিয়েছি। একদিন একাই গ্রামে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। সে এক অদ্ভুত মজা। আর একদিন বন্ধুদের সঙ্গে ট্রেনে চেপে আশপাশের গ্রামের ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলাম। সেই ট্রেন সফরের অভিজ্ঞতা আমার আজীবনের সম্পদ হয়ে থাকবে। এভাবে বন্ধুদের সঙ্গে হুল্লোড় করা যায়, নিজের মতো থাকা যায় বলেই পুজোটা আমার কাছে আকর্ষণীয়। আরেকদিন সপরিবারে মেমারির মশাগ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানে সারারাত ধরে ঠাকুর দেখেছি। দশমী পেরিয়ে যাওয়ার পরে আজও যখন সেসব কথা ভাবি স্বপ্নের মতো মনে হয়।
আশিক মণ্ডল, অষ্টম শ্রেণী
বৈঁচি বিহারীলাল মুখার্জি’স ফ্রি ইনস্টিটিউশন
প্রবীরকুমার কুমার, প্রধান শিক্ষক
বাংলার নবজাগরণের কালে এক বিরল মুহূর্তে বৈঁচি বিহারীলাল মুখার্জি’স ফ্রি ইনস্টিটিউশন শুরু হয়েছিল। আর সেই শুরুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে শিক্ষার আলোকবর্তিকা ব্যাপ্ত করার পথিকৃৎ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নাম। তাঁরই পরামর্শে অপুত্রক জমিদার বিহারীলালবাবু এই স্কুল শুরু করার জন্য উইল করেন। আনুমানিক ১৮৭৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এই স্কুল চালু হয়। বস্তুত বিহারীলালবাবুর মৃত্যুর পর তাঁর শিক্ষাব্রতী স্ত্রী কমলেকামিনীদেবীর উদ্যোগেই বিদ্যালয় চালু হয়েছিল। ১৯০৫ সাল থেকে বিহারীলালবাবুর বসতবাটীতেই স্কুল চলে আসে। সেই থেকে সেখানেই স্কুল চলছে। প্রথম থেকেই এই স্কুল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং ম্যাট্রিকুলেশান পড়ানো হতো। পরে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে। মহান বিহারীলাল, বিদ্যাসাগর ও কমলেকামিনীদেবীর পুণ্যস্পর্শই আজও আমাদের চলার পাথেয়।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরাবরই ব্লক ও হুগলি জেলার মধ্যে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বিদ্যালয়ের সাফল্য উল্লেখের দাবি রাখে। বিদ্যালয়ের বহু ছাত্র জাতীয় মেধা বৃত্তি গত কয়েকবছর ধরেই পেয়ে আসছে। আমরা ইতিমধ্যেই স্কুলে স্মার্ট ক্লাসরুম চালু করেছি। আমাদের একটি বহুমূল্য ও বিরল পুস্তক সংবলিত গ্রন্থাগার আছে। স্কুলে কমপিউটারের মতো আধুনিক শিক্ষা চালু করা হয়েছে। এরসঙ্গে আমরা ‘ভারত কে জানো’ নামে বিশেষ শিক্ষামূলক ভ্রমণ কর্মসূচি রূপায়ণ করি। পুরনো জমিদারি দরদালানের সঙ্গে আমাদের একটি নতুন বিল্ডিং তৈরি হয়েছে। আমরা আধুনিক শিক্ষার প্রতিটি চলনের দিকে নজর রেখে মানুষ গড়ার দায়িত্ব যথার্থভাবে পালনের প্রয়াস করে যাচ্ছি।