উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে শুভ ফল পাবে। কর্মপ্রার্থীদের ... বিশদ
একরাশ আনন্দ
আমার বাড়ি শিবরামপুরের বৈশাখী গার্ডেনে। বাড়ি থেকে কাছাকাছি স্কুল বলে অনেক সময় পাই পড়ার। বাবা ও মায়ের ইচ্ছেতেই ভর্তি হই এখানে। তবে যেদিন প্রথম স্কুলে আসি আমার খুব ভয় করছিল। স্কুলটা দেখতে কেমন হবে? সবাই বোধহয় ইংরেজিতে কথাবার্তা বলবে, আমি কিছুই বুঝতে পারব না। শিক্ষকরা কেমন হবে? সব কিছু মিলিয়ে প্রথম দিন আমার মন খারাপ ছিল। তবে স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলাম একরাশ আনন্দ নিয়ে। আর কোনও দিন মন খারাপ হয়নি প্রথম দিনের মতো।
সুভাষিণী দত্ত, চতুর্থ শ্রেণী
স্বপ্নের বাড়ি
সবার ভেতর একটা স্বপ্নের বাড়ি থাকে। আর বাড়িটা হল আমার স্কুলবাড়ি। মানে মিশ্র অ্যাকাডেমি। আর এখানে এসে আমি প্রথম দিন একটি উপহার পাই। সে আমার বন্ধু ঋতিকা গুপ্তাকে। ও সবসময় আমার সঙ্গে ছায়ার মতো থাকে। সময়ে-অসময়ে সাহায্য করে। ওরই সঙ্গে পড়াশোনা করি। একজন প্রকৃত বন্ধু আমার দরকার ছিল। আর সেটা আমি প্রথম দিন এই স্কুলে এসে পাই। একজন ভালো বন্ধু জীবনের অনেকটা পথ এগিয়ে নিয়ে যায়।
অ্যাঞ্জেল সিং, চতুর্থ শ্রেণী
ঝাঁ চকচকে স্কুল
আমি বেহালা বকুলতলার ব্লেস মেরি স্কুলে পড়তাম। আমার যাতায়াতে অনেকটা সময় লাগত। বাড়ির পাশে দেখতাম একটা স্কুল তৈরি হচ্ছে। তখন তো জানতাম না আমিই এ স্কুলের ছাত্রী হব। অল্প কিছু দিনের মধ্যে সুন্দর ঝাঁ চকচকে স্কুলের উদ্বোধন হল। বাবা-মাকে বলল, আমাদের মেয়েকে এই স্কুলে পড়ালে কেমন হয়। ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ভর্তি হলাম স্কুলে। ঘরের পরিবেশে আকৃষ্ট হয়েছিলাম। আর ভালো লেগেছিল রুমা ম্যামের পড়ানোর ভঙ্গি। ক্লাসের সুন্দর পরিবেশ।
শ্রীরূপা চট্টোপাধ্যায়, ষষ্ঠ শ্রেণী
সুন্দরের ছোঁয়া
মা বলেন, ভালোবাসা থাকলে নাকি পরও আপন হয়। আগে কথাটার মানে বুঝতাম না। স্কুলের পরিবেশে একটা শাসন তো থাকেই। থাকে পড়ার চাপ। গুরু-গম্ভীর কথা ইত্যাদি। কিন্তু অনুশাসনের মধ্যে যদি একটা সুন্দর পরিবেশ ও নিজের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দেওয়া হয় তবেই তো ভালো লাগে স্কুলে যেতে, যেটা আমি অনুভব করিনি। কিন্তু এখানে পড়ার পাশাপাশি কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিতে জোর দেওয়া হয়। আর সেই সুন্দরের ছোঁয়া আমি প্রথম দিন থেকে পেয়েছি। স্কুলের শুরুর দিনে যে আদর্শ, নীতিবোধের কথা প্রিন্সিপাল ম্যাম বলেছিলেন, তা সারা জীবন মনে থাকবে।
অভিজিৎ দাস, পঞ্চম শ্রেণী
প্রথম দিনের স্মৃতি
আমার পছন্দের স্কুল মিশ্র অ্যাকাডেমি। প্রথম দিন স্কুলে পা দিয়ে ভালো লেগেছিল। আরও ভালো লেগেছিল বাড়িটার সুন্দর রং ও গোছানো দেখে। প্রথম দিনের ভালো লাগা কখন যেন ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে বুঝিনি। স্কুলের পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। প্রথম দিনেই আকাশ স্যার, অশোক স্যার, প্রিন্সিপাল আমাকে আদর করেছিলেন। একটুও ভয় পাইনি। তাই স্কুলের প্রথম দিনের স্মৃতি আমার সারাজীবন মনে থাকবে।
শুভশ্রী দত্ত, ষষ্ঠ শ্রেণী
একান্নবর্তী পরিবার
মা সবসময় বলেন, ‘সময়কে গুরুত্ব দাও। দেখবে সময়ই তোমাকে পথ দেখাবে। সুন্দর চিন্তা-ভাবনা করো, কোনও একসময় ওই সুন্দর তোমার কাছে ধরা দেবে।’ সত্যি মায়ের কথা যে এভাবে সত্যি হবে ভাবিনি। ভর্তি হলাম ক্লাস ফাইভে। প্রথম দিনেই একঝাঁক বন্ধু পেলাম। পেলাম রত্না ম্যাম সহ বহু শিক্ষিকাকে। প্রত্যেকের পড়ানো ও তা বুঝিয়ে দেবার ভঙ্গি খুব ভালো লেগেছিল। মিশ্র অ্যাকাডেমি আমার কাছে নিছক স্কুল নয়, সত্যিই একটি একান্নবর্তী পরিবার। যার পরতে পরতে শুধুই আনন্দ আর ভালোবাসার ছোঁয়া।
ঈশানী সাউ, ষষ্ঠ শ্রেণী
অভিজ্ঞতার ঝুলি
সকাল থেকেই মনের মধ্যে ছিল এক অজানা উত্তেজনা। যত বেলা বাড়ছিল ততই উত্তেজনার মাত্রা বাড়ছিল। মা স্নান করিয়ে স্কুল ড্রেস পরিয়ে দিলেন। নিজে হাতে ভাত খাইয়ে সাজালেন। বাড়ি থেকে বের হবার সময় ঠাকুমা বরণ করল চন্দনের ফোঁটা দিয়ে আর প্রদীপ জ্বালিয়ে। বাবা-মায়ের হাত ধরে স্কুলে এলাম। আমাদের শ্রেণী-শিক্ষিকা প্রত্যেকের নাম জিজ্ঞেস করলেন। সুন্দর সুন্দর গল্প বলে আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি করলেন। গল্প, কবিতা, নাচ, গানে ভরে উঠল ক্লাস রুম। অপূর্ব অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলাম। চিরদিন মনে থাকবে মিশ্র অ্যাকাডেমিতে পা দেবার প্রথম দিনটি।
শ্রেষ্ঠা সরদার, পঞ্চম শ্রেণী
প্রার্থনার সময়
মিশ্র অ্যাকাডেমি আমার সুন্দর নিশ্চিত আশ্রয়ের ঠিকানা। যেখানে আমার অনেকটা সময় কাটে। সবার ব্যবহার ও পড়ানোর পদ্ধতি আমার ভালো লাগে। কখনও মনে হয় না আমি বাড়ির বাইরে আছি। আর সেই স্কুলে যেতে প্রথম দিন আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। তবে প্রার্থনার সময় ম্যাম ও স্যারেদের ব্যবহার আমার খুব ভালো লেগেছিল। তারপর ক্লাসে ঢুকে
ভুলে গিয়েছিলাম আমি স্কুলে আছি না বাড়িতে?
স্নেহা ভট্টাচার্য, তৃতীয় শ্রেণী
মিশ্র অ্যাকাডেমি
শ্যামলী বসু রায়
প্রিন্সিপাল
বেহালা চৌরাস্তা থেকে শিবরামপুর ক্রসিং। ওখান থেকে জগন্নাথপুর মেন রোড হয়ে আশ্রমের দূরত্ব সাড়ে চার কিলোমিটার। মহেশতলার আশুতি টু গ্রাম পঞ্চায়েতের দীর্ঘদিনের সমস্যা একটি ভালো স্কুলের। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের পড়তে যেতে হতো অনেকটা দূরে। সেই সমস্যাটা বহুদিন আগেই অনুভব করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা অশোককুমার মিশ্র। পেশায় ব্যবসায়ী। ছোটবেলা কেটেছে বিহারের মধুবনিতে। ইচ্ছে থাকলেও ইংরেজি মাধ্যমে সেভাবে উচ্চশিক্ষার সুযোগ ঘটেনি। সেই যন্ত্রণাটা তাড়া করে ফিরত প্রতিনিয়ত। হঠাৎ একদিন টিভিতে দেখা একটি বিজ্ঞাপন বদলে দেয় তাঁর চিন্তার জগৎ। নিজেই ঘরে বসে শপথ নেন গড়ে তুলবেন তাঁর স্বপ্নের স্কুলবাড়ি। ২০১৭ সালের শেষের দিকে শুরু হয় স্কুল তৈরির কাজ। প্রায় ঝড়ের গতিতে গড়ে ওঠে পাঁচতলা বাড়ি।
২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি শুরু হয় পথচলা। ক্রমশই বাড়তে থাকে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা। বর্তমানে টডলার নার্সারি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত চালু আছে পঠন-পাঠনের কাজ। ইংরেজি মাধ্যমে তৈরি হওয়া স্কুলটি যে কোনও নামী স্কুলের সমকক্ষ। আধুনিক শিক্ষার কাঠামোটিকে ধরে রাখতে রয়েছে বহু অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষিকা। শেখানো হচ্ছে নাচ, গান, আবৃত্তি, অঙ্কন, ক্যারাটেসহ নানা ধরনের প্রশিক্ষণ। ভাবী প্রজন্মকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে দেওয়া হচ্ছে নীতিবোধ, মূল্যবোধ ও নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা। সংস্কৃতিমনস্ক করে গড়ে তুলতে পালিত হয় মনীষীদের জন্মদিন। আগামী দিনে স্কুলকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে রয়েছে বহু পরিকল্পনা। তবে অবিলম্বে প্রয়োজন স্কুলটির সরকারি স্বীকৃতির। এই স্বীকৃতিটুকু পেলেই শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ঠিকানা এই মিশ্র আকাদেমি।