উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে শুভ ফল পাবে। কর্মপ্রার্থীদের ... বিশদ
শুধু চার্চিল নয়, হোয়াইট হাউসে লিঙ্কনের ভূত অনেকেই দেখেছেন বলে মার্কিন মুলুকে কত গল্প। ভূত আছে না নেই তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। তবে ভয় পেতে বোধহয় আমরা একটু ভালোই বাসি। তাই ভয়ে দু’হাত দিয়ে চোখ ঢেকে আঙুলের ফাঁক দিয়ে হরর ফিল্মের সবচেয়ে ভয়ানক দৃশ্যটাও আমরা মিস করতে চাই না। তবে হরর ফিল্মে ভূত দেখা আর বাস্তবে কোনও ‘ভৌতিক’ ঘটনা প্রত্যক্ষ করার মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। যে ফারাকটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন হোয়াইট হাউসের বাসিন্দারা। হোয়াইট হাউসের আশপাশের অনেকেই আজও বলেন যে, লিঙ্কনের বেডরুমের বাতিগুলো মাঝে মাঝে হঠাৎ জ্বলে উঠত, কখনও বা দেখা যেত রুমটির তাপমাত্রা মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। অনেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট, ফার্স্ট লেডি, রাষ্ট্রীয় অতিথি, কর্তা-কর্মচারীও হোয়াইট হাউসে বিভিন্ন সময়ে ভূত দেখেছেন বলে দাবি করেছেন। সরাসরি ভূত না দেখলেও কেউ কেউ ভূতুড়ে আওয়াজ তো পেয়েছেনই। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ভূত আব্রাহাম লিঙ্কনই। লিঙ্কন রাষ্ট্রপতি থাকাকালীনই হোয়াইট হাউসে তাঁর ছেলে উইলি মারা যান। উইলির আত্মাকেও নাকি মাঝেমধ্যেই দেখতে পাওয়া যায় সেই ওয়াশিংটন ডিসির ১৬০০ পেনসিলভেনিয়া অ্যাভিনিউর বাড়িতে। আর এক প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের প্রিয় ঘর ছিল ‘রোজ রুম’। এই রোজ রুমেই নাকি জ্যাকসনের অট্টহাসি আর শ্বাস-প্রশ্বাসের আওয়াজ শুনেছেন কেউ কেউ। সেই কারণেই হয়তো প্রেসিডেন্ট হেনরি ট্রুম্যান স্ত্রীকে একবার বলেছিলেন, ‘আমি পৃথিবীর এক জঘন্য জায়গায় থাকি।’
হোয়াইট হাউসের দ্য ইয়েলো ওভাল রুম ছিল প্রেসিডেন্ট লিঙ্কনের ব্যক্তিগত লাইব্রেরি। এটি তাঁর বেশ পছন্দের ছিল। রুমটির জানালায় প্রায়ই লিঙ্কন দাঁড়িয়ে থাকেন। লিঙ্কনের ভূত প্রথম দেখেছিলেন প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজের স্ত্রী গ্রেস কুলিজ। প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনের স্ত্রী লেডি বার্ড জনসনও লিঙ্কনের ভূত দেখেছিলেন। তবে ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের সময়ই হোয়াইট হাউসে লিঙ্কনের আত্মার দাপাদাপি ছিল সবচেয়ে বেশি! ওই সময়টাতেই লিঙ্কনের ভূত দেখার ঘটনা সবচেয়ে বেশি বার ঘটে। লিঙ্কনের শোওয়ার ঘরটিকে পাঠকক্ষ বানিয়েছিলেন ফার্স্ট লেডি এলিনর রুজভেল্ট। একদিন সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করতে গিয়ে লিঙ্কনের ভূত দেখার অভিজ্ঞতা হয় তাঁর। লিঙ্কনের ভূত যে শুধু ফার্স্ট লেডিদের ব্যাপারে আগ্রহী ছিল, তা কিন্তু নয়। হোয়াইট হাউসের আতিথ্য নেওয়া নেদারল্যান্ডসের তখনকার রানি উইলহেলমিনার দরজায় টোকা মেরেছিলেন সেই বিখ্যাত লম্বাটে হ্যাট মাথায় দেওয়া প্রেসিডেন্ট! চার্চিলের ভূতদর্শনের কথা তো আগেই শুনেছিলেন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে ভয় না পেলেও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আর সে রাতে ওই রুমে থাকতে রাজি হননি।
১৭৯৭-১৮০১ সালের ঘটনা। মার্কিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে হোয়াইট হাউসে বসবাস করেছিলেন জন অ্যাডামস ও সেই সময়ের ফার্স্ট লেডি অ্যাবেগেইল অ্যাডামস। তখন ওয়াশিংটন ডিসি ছিল জলাবদ্ধ এক ছোট্ট শহর। হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুম ছিল জামাকাপড় শুকানোর জন্যে উপযুক্ত উষ্ণতম জায়গা। তাই অ্যাবেগেইল অ্যাডামস জামাকাপড় ধোয়ার পর হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে এসে সেগুলোকে শুকোতেন। কিন্তু ফার্স্ট লেডির মৃত্যুর পর এখনও অনেকেই তাঁকে ওইভাবে কাপড় শুকোতে দিতে ছুটোছুটি করে ইস্ট রুমের দিকে ভেজা কাপড়ের বালতি হাতে নিয়ে যেতে দেখেছেন। মাঝে মাঝে ভেজা কাপড়ের গন্ধ এবং সাবানের সুবাস ভেসে আসে বলে ওখানকার পরিচারিকাদের অভিমত। হোয়াইট হাউসে প্রথম সেই ভূতের দেখা পান প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ট্যাফট। হোয়াইট হাউসে প্রবেশের উত্তর-দ্বারে মাঝে মাঝে পাহারারত অবস্থায় এমন সব দারোয়ানদের দেখা যায় যারা নাকি বেঁচে নেই। এমন সব দারোয়ানের মধ্যে একজন হল অ্যানি স্যুরাট। যাকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যকবার দেখা গিয়েছে। ১৮৬৫ সালে লিঙ্কনের গুপ্তহত্যার সময় অ্যানি স্যুরাটের মা মারা যান। তাই স্যুরাটের ভূতকে উত্তরদ্বারে দেখা যায় তাঁর মায়ের মুক্তি প্রার্থনারত অবস্থায়। কী ভয়ঙ্কর ভাবুন?
উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বল্পতম সময়ের প্রেসিডেন্ট। কারণ, তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই নিউমোনিয়াতে ভুগে মারা যান। কথিত আছে যে, এখনও পর্যন্ত হ্যারিসনের ভূতের অস্তিত্ব মিলেছে ওভাল হাউসের উপরের চিলেকোঠায়। পরবর্তী সময়ে কয়েকজন প্রেসিডেন্ট বলেছেন যে, তাঁরা নাকি মাঝে মাঝে চিলেকোঠা থেকেই অদ্ভুত রকমের শব্দ শুনতে পেতেন। শুধুমাত্র হ্যারিসনের ভূতই চিলেকোঠায় একা নয়, ট্রুম্যান প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন এক সিকিউরিটি গার্ড বলেছিলেন যে, তিনি চিলেকোঠা থেকে কাউকে যেন বলতে শুনেছেন, ‘আমিই বার্নস’, ‘আমিই বার্নস’...। কে বা কারা এরকম শব্দ করত আজও রহস্য। তবে শোনা যায়, হোয়াইট হাউসের জমির মালিক ছিলেন এই ডেভিড বার্ন। কথিত আছে, ১৭৯০ সালে ডেভিড বার্নস নামে সেই ভদ্রলোকের জমিতে জোর করে তৈরি হয়েছিল হোয়াইট হাউস। এখনও নাকি বাড়ির কয়েকটি ঘরে শোনা যায় সেই অশরীরীর গলার স্বর। ‘আমিই বার্নস’, বলতে বলতে নাকি এ ঘর, সে ঘর ঘুরে বেড়ায় সেই আওয়াজ।
প্রেসিডেন্টের প্রেস কনফারেন্স হয় রোজ গার্ডেনে। যা টিভিতে আমরা নিয়মিত দেখে থাকি। ১৮ শতকের ফার্স্ট লেডি ডলি মেডিসন নাকি রোজ গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করেন। এর এক শতক পর ফার্স্ট লেডি ইলেন উইলসন গার্ডেনটি উৎখাতের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কর্মীরা রিপোর্ট করেন, ডলির আত্মা নাকি গার্ডেনে ঘুরে বেড়ায়। হোয়াইট হাউসকে নিয়ে এসব ভূতুড়ে গল্প মার্কিন মুলুকে বেশ প্রচলিত। প্রেসিডেন্ট টেডি রুজভেল্ট, হার্বাট হোভার এবং ডিউড আইজেনহোয়ার থেকে শুরু করে প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি জ্যাকুই কেনেডি ও লিডবার্ড জনসন এবং সুসান ফোর্ড, ম্যারুইন রেগ্যানের মতো প্রভাবশালী প্রেসিডেন্টের সন্তানরাও এই তিক্ত ভৌতিক অভিজ্ঞতার শিকার বলে দাবি করেন ওয়াশিংটনের অনেক বাসিন্দাই। তবে হোয়াইট হাউসের ভৌতিক পরিবেশ নিয়ে বারাক ওবামার অভিজ্ঞতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম দিকে ওবামাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোনও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ওবামাকে কোনও পরামর্শ দিয়েছেন কি না? ওবামা বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি প্রাক্তন প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে দেখা করেছি।’ তাঁকে পুনরায় জিজ্ঞেস করা হয়, কোনও মৃত প্রেডিডেন্ট তাঁকে কোনও পরামর্শ দিয়েছেন কি না? তখন ওবামা হেসে বলেন, ‘না, তাদের কারও সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।’
অবশ্য শুধু হোয়াইট হাউসই নয়, গোটা মার্কিন মুলুক জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অনেক ভূতের বাড়ি। এরকমই এক ভূতুড়ে বাড়ি হল হলিউডের রুজভেল্ট হোটেল। পুরনো দিনের বহু নামী চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব এক সময় থেকেছেন এই হোটেলে। তাদের কেউ কেউ এখনও মায়া কাটাতে পারেনি এখানকার আতিথেয়তার। এদের অনেককেই দেখা যায় এই হোটেলে, মৃত্যুর বহু বছর পরেও। যেমন এই হোটেলে এক সময় থেকেছেন মেরিলিন মনরো। তার পছন্দের ঘরটিতে ছিল একটি আয়না। অনেক পরে কেউ কেউ নাকি ওই আয়নায় মনরোর প্রতিবিম্ব দেখেছেন। অথচ, চকিতে ঘাড় ঘুরিয়ে কাউকেই দেখা যায়নি! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরও কয়েকটি ভূতের বাড়ির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ফিলাডেলফিয়ার ফিলজফিক্যাল সোসাইটির পাঠাগার। বিখ্যাত লেখক, দার্শনিক ও বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের আত্মা নাকি এখানে রাতে বইপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে। নিউ অরলিয়ন্স শহরের অনেক পুরনো বাড়ির সঙ্গেই জড়িয়ে আছে বহু জলদস্যুর অতৃপ্ত আত্মার ইতিহাস। তাদের অনেকেই আজও ফিরে ফিরে আসে। ন্যাশভিলের পুরনো এক গান রেকর্ডিং স্টুডিওতে আবার দেখা যেত এলভিস প্রেসলির ভূত। সেই স্টুডিও ভেঙে এখন তৈরি হয়েছে নতুন একটি টিভি প্রোডাকশন হাউস। সেখানেও অবাধ চলাফেরা এলভিসের আত্মার। যতবারই এলভিসের নাম উচ্চারিত হয়, ততবারই নাকি অশৈলী কাণ্ড ঘটে সেখানে। কখনও বাল্ব ফেটে যায়, কখনও বা মিউজিক সিস্টেমের মধ্য দিয়ে বের হয় ভূতুড়ে শব্দ, আবার কখনও বা সোজা দাঁড় করানো জিনিসপত্র উল্টে যায়।
আমেরিকার আরও একটি গা হিম করা ভূতের বাড়ি হল নিউ জার্সির বার্লিংটন কাউন্টি প্রিজন মিউজিয়াম। এক সময় এখানে ছিল জেল। সেখানকার এক বন্ধ ঘর থেকে নাকি গোঙানি আর শিকলের আওয়াজ শুনতে পান পাহারাদাররা। পরে এই জেলকে সংস্কার করে মিউজিয়াম তৈরি করা হয়। সেসময় কর্মচারীরাও নানা অভিযোগ করতে থাকে। প্রায়ই নাকি তাদের কাজকর্মের দরকারি যন্ত্রপাতি অদৃশ্য হয়ে যায়, শোনা যায় বিকট চিৎকার, কখনও বা ঘরের তাপমাত্রা বেড়ে বা কমে যায়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৮৩৩ সালে এখানে ফাঁসি হয়েছিল জোয়েল ক্লো নামে এক খুনির। জোয়েলের ভূতই নাকি এসব কাণ্ড ঘটাত। অনেকেই মনে করে,এসবই হ্যালুসিনেশনের প্রভাব। তবে এসব গল্প বিশ্বাস করতে দোষ কোথায়। যাঁরা ভূতে বিশ্বাস করেন না, তাঁরা অনেকেই এসব গল্প বলে উড়িয়ে দিতে পারেন। তবে হোয়াইট হাউস ঘিরে যে একটু গা ছমছমে ব্যাপার আছে তা অস্বীকার করি কী করে!
মৃণালকান্তি দাস
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে