পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
কিন্তু পিতা মেনে নিলেও মির্জা কেন মেনে নেবে? সে লালকেল্লার ছাদে চলে গেল। ব্রিটিশ রেসিডেন্ট আর্চিবল্ড সিটন যখন ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখন তাঁকে লক্ষ্য করে মির্জা গুলি করল। প্রতিহিংসায় তার মাথা জ্বলছে। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হল সেই গুলি। আর্চিবল্ড দেখলেন তাঁর শরীরে না লাগলেও তাঁর দেহরক্ষী মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। তৎক্ষণাৎ ঘোড়া ঘুরিয়ে আর্চিবল্ড লালকেল্লায় ফিরলেন। আর সম্রাটকে আদেশ দিলেন, আপনার ছেলেকে বলুন করজোড়ে ক্ষমা চাইতে। আমাকে গুলি করার সাহস পায় কীভাবে? আকবর শাহ ছেলেকে বললেও মির্জা অনড়। সে বলল, প্রাণ থাকতে ক্ষমা চাইব না। আর্চিবল্ড ফিরে গিয়ে আবার এলেন বিরাট বাহিনী নিয়ে। আর আকবর শাহের লালকেল্লা অবরোধ করে বললেন, মির্জাকে দিল্লিতেই রাখা চলবে না। আমরা ওকে নির্বাসনের নির্দেশ দিলাম। এলাহাবাদে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। এই বিরাট বাহিনীর সামনে আকবর শাহ কিংবা মির্জার পক্ষে সত্যিই আর কিছু বাড়াবাড়ি করতে যাওয়া মানেই আত্মহত্যা। অতএব মির্জাকে নির্বাসনে যেতেই হল।
দিন যায়। মাস যায়। বছর যায়। ছেলে কি আর ফিরবে না? কেমন আছে সে? ব্রিটিশদের জেলে? মমতাজ মহল প্রাণপণে ঈশ্বরকে ডাকছেন। পরপর দু’দিন আশ্চর্য ঘটনা। রাতে স্বপ্নে এলেন এক দেবী। এবং খাজা বখতিয়ার কাকী। এই দেবী কে? যোগমায়া। দিল্লির দক্ষিণ প্রান্তে দেবীর মন্দির। আবার কাছেই রয়েছে সেই খাজা বখতিয়ারের দরগা। তাঁদের স্বপ্নে পেয়ে বেগম মমতাজ মহল স্থির করলেন, তাঁর পুত্র আবার নিরাপদে ফিরে এলে তিনি এই দু’জনকেই পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন।
পাল্টে গেল নাকি মির্জা? সে নাকি ভালো ব্যবহার করেছে নির্বাসনকালে। তাই তাকে মুক্ত করে দিল্লিতে নিয়ে আসা হচ্ছে। অতএব মহাধুমধাম দিল্লিতে। মমতাজ মহলের নির্দেশে শহরকে সাজানো হল নতুন দুলহানের মতো। শুরু হল উৎসব। কী হবে উৎসবে? সম্রাট, বেগম ও মির্জা তিনজন মিলে যাওয়া হল দিল্লির মেহরৌলি অঞ্চলে। সেখানে ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেছে ফুলওয়ালিরা। তাদের থেকে নেওয়া হল একটি ফুলের চাদর। একটি ফুলের পাখা। প্রথমটি দেওয়া হল খাজা বখতিয়ারের দরগায়। আর ফুলের পাখা দিয়ে পুজো দিলেন তাঁরা দেবী যোগমায়া মন্দিরে। সেই উৎসব আজও সমানভাবে ভাস্বর। ফুলওয়ালা উৎসব। কখনও বন্ধ হয়েছে। আবার চালু হয়েছে।
দিল্লিকে ধারণ এবং রক্ষা করে আছে কারা? ১২ জন সুফি এবং দুই দেবী। দেবী কালকা ও দেবী যোগমায়া। কে যোগামায়া? শ্রীকৃষ্ণের বোন। ১২০৬ থেকে ১২৯০ সাল পর্যন্ত সময়সীমায় দাস বংশের সুলতানি আমলে অন্তত ২৭টি মন্দির ধ্বংস হয়েছিল। কিন্তু অলৌকিকভাবে কিছুতেই কেউ এই যোগমায়া দেবী মন্দির ধ্বংস করতে পারেনি। কবে তৈরি হল এই মন্দির? সেই ইতিহাসের থেকে মিথ বেশি। সঠিক তথ্য নেই। ১৪ বছর বয়সি সম্রাট আকবরের বাহিনীকে পরাস্ত করেছিলেন এক হিন্দু সম্রাট। বিক্রমাদিত্য হিমু। যদিও প্রথম যুদ্ধে আকবর নিজে ছিলেন না। পরে তিনি বিরাট বাহিনী নিয়ে আসেন আগ্রা থেকে। কিন্তু আকবরের নাকের ডগায় হিমু শাসনও করেছিলেন আজকের পুরনো কেল্লা দখল করে! একমাসের মধ্যেই সেই হিন্দু রাজা হিমু যোগমায়া মন্দিরকে সংস্কার করেছিলেন। আওরঙ্গজেব চেষ্টা করেছিলেন আবার এই মন্দির ধ্বংস করতে। পারেননি! দিল্লির মিথ, যোগমায়া দেবী মন্দিরকে ধ্বংস করা যায় না!