সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে অবনতি। নানাভাবে অর্থ অপচয়। কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।প্রতিকার: ... বিশদ
এই একটা টিউশন টিকে আছে। এখন বেশির ভাগ স্টুডেন্টই কোচিং ক্লাসে পড়ে, নয়তো গ্রুপে পড়ে। সহজও একটা কোচিং-এ পড়াচ্ছিল। কিন্তু ও পর পর দু’দিন কোচিং ক্লাসে যেতে পারল না। কোচিং-এর মালিক মনোতোষ স্যার বড্ড ট্যারা ট্যারা কথা বলল— ঠিক সময়ে আসতে হবে, আপনার জন্য স্টুডেন্টদের কাছে আমার কথা শুনতে হল, মনোতোষ স্যারের কোচিং-এর একটা গুডউইল আছে। আরও কীসব বলছিল।
কথাগুলো শুনতে শুনতে সহজের মটকা গরম হচ্ছিল। কিন্তু মাস গেলে এতগুলো টাকা তাই ও মুখ বুজে শুনছিল। সে একবার বলল, চিন্তা করবেন না, আমি ওদের মেকআপ করিয়ে দেব।
মনোতোষ স্যার বলল, ‘শুনুন, সব বিজনেসের একটা ধর্ম থাকে। কিছু টিকস থাকে। কোচিং ব্যবসায় কী জানেন— ইংরেজি আর অঙ্কের ক্লাস মিস মানে গার্জেনরা সব খেপে যায়। বাংলা হলে বা ইতিহাস হলে গার্জেনরা তেমন রেগে যায় না।
এই কথাটা শুনেই রেগে গেল সহজ। বলল, ‘আপনার কোচিং ক্লাসে যেগুলো আছে তাদের দিনে ২৪ ঘণ্টা করে অঙ্ক করালেও কিস্যু হবে না।’
‘কিস্যু হবে না মানে? এমন নেগেটিভ কথা বলবেন না স্যার!’
‘নেগেটিভ পজেটিভ ব্যাপার নয়। ওই যে আপনি বললেন না, বাংলা, ইতিহাস মিস হলে ওদের গার্জেনরা পাত্তা দেয় না। ইংলিশ, অঙ্ক মিস হলেই খেপে যাবে। এই গার্জেনদের ছেলেমেয়েগুলো কেমন হবে বলুন—সব গোলা! গোলা মাল!’
মনোতোষ স্যার অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাল। ‘কী বলছেন স্যার, ইংলিশ আর অঙ্কেরই তো দাম। আর সব ফ্রি। আপনি নিজে অঙ্ক করান, আপনি বোঝেন না, অঙ্কটা ভালো করান বলেই তো আপনাকে এত বাটার দিই। আর বাংলা ইতিহাস যারা পড়ায় তারা সামান্য তেলটুকুও পায় না। আপনারা অঙ্কের দু’জন স্যার আর ইংরেজির বি জি-বাবু আমার লক্ষ্মী।’
‘শুনুন, লক্ষ্মী-গণেশ দিয়ে কিছু হবে না। আগে ওদের শেখান, সব সাবজেক্টকে ভালোবাসতে হবে। নইলে ওদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’
‘আপনি জ্যোতিষী নাকি, ফুলের মতো শিশুদের নেগেটিভ ভবিষ্যদ্বাণী করছেন! এটা ঠিক করছেন না স্যার।’
‘আমি জ্যোতিষী নই, কিন্তু এটাই ঘটনা। আপনি মিলিয়ে নেবেন।’
মাথা নিচু করে মনোতোষ স্যার বলল, ‘স্যার আপনার কী হবে? আর কী মেলাব?’
‘মানে?’
‘মানে, আপনার ভবিষ্যৎ কী? শুনেছি, আপনি যা বলেছেন— এর আগে দুটো চাকরি করেছেন। টেকাতে পারেননি। মনোতোষ স্যারের কোচিং ক্লাস, মানে আমারটা হয়তো ঠিক চাকরি নয়, কিন্তু যে হারে ডুব মারছেন— এটাও টেকাতে পারবেন না। কত দিন আর আপনাকে আমি টানব। আমার ভাতেরও অভাব নেই, কাকেরও অভাব নেই।’
‘আমি কাক নই, আর আমি আপনার ভাত খেতেও রাজি নই।’
‘না, না, আপনাকে আমি ভাত খাওয়াব কেন? আপনি তো এখন ভূতের বাড়ি দারোগা বাড়িতে খেতে যাচ্ছেন। শুনুন স্যার, প্রাইভেট টিউশন করতে গেলে ইমেজ স্বচ্ছ রাখতে হয়। কারখানা মাঠের অন্ধকারে গেলে গায়ে কালি লাগে। ওই কালি তোলা মুশকিল স্যার!’
সহজ হাসে, ‘ঘড়ির ছোট কাঁটা বোঝেন, যা দিয়ে ঘণ্টা মাপা হয়, আমি সেই ছোট কাঁটা। এটা আমার ভবিষ্যৎ। আপনি পেন্ডুলামের মতো সারা জীবন দুলে যাবেন। দোল খাবেন। ছাত্র পড়াবেন, টাকা কামাবেন। এটা আপনার ভবিষ্যৎ।’
মনোতোষ স্যারের কোচিংটা ছেড়ে দিল সহজ। আছে বলতে, এই টিউশনটা। মেয়েটা খুব পাকা। কিন্তু অঙ্কে বেশ মাথা। সারা টেস্ট পেপার থেকে খুঁজে খুঁজে সহজের জন্য কঠিন কঠিন অঙ্ক বেছে রাখে। আজও রেখেছিল দুটো। সহজ দুটো অঙ্কই করাল। অঙ্ক দুটো করিয়ে সহজ বলল, ‘সৃজনী এসব অঙ্ক আসবে না।’
সৃজনী বলল, ‘নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের টেস্টে দিয়েছে স্যার।’
‘সে দিক। কিন্তু এত কঠিন অঙ্ক কখনই আসবে না।’
‘অঙ্কটা কঠিন স্যার?’ কথাটা বলে সৃজনী বেশ আত্মতৃপ্তির হাসি হাসল।
‘কঠিন, তবে সেটা তোমার কাছে, আমার কাছে না।’ সহজ বলল।
সৃজনী বলল, ‘স্যার বাবা বলেন— আপনি খুব ব্রিলিয়ান্ট।’
এই কথার কোনও উত্তর হয় না। সহজ ভাবছিল, একথায় কি হাসবে, না গম্ভীর থাকা উচিত।
সৃজনী বলল, ‘বাবা বলেন— ছেলেটার, মানে আপনার কপাল খারাপ।’
খাতা থেকে মুখ তুলে সহজ বলল, ‘কেন?’
‘এই যে, না বিসিএস, না কোনও সরকারি চাকরি— আপনি কোনটাই ক্র্যাক করতে পারেননি।’
খাতা ছেড়ে সোজা হয় সহজ। বলল, ‘তোমার বাবাকে কে বলল— আমি বিসিএস বা সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিয়েছি?’
‘ও আপনি দেননি বুঝি?’ অবাক হওয়া স্বরে সৃজনী বলল।
সহজের মুখে এসে গিয়েছিল, তোমার বাবাকে ভাটের কথা একটু কম বলতে বলবে। কিন্তু এটা বললে টিউশনটা যাবে। সহজ বলল, ‘না দিইনি। দেবও না।’
‘কেন?’
‘সব কেন-র উত্তর হয় না। আর যদি উত্তর খুঁজতে চাও তবে তোমাকে ওয়েট করতে হবে।’
‘ওয়েট। অপেক্ষা। কতদিন স্যার?’
‘চারদিন চলে গিয়েছে। আর ঊনত্রিশ দিন।’
সহজের কথা শুনে নড়ে বসে সৃজনী, ‘স্যার, মাত্র ঊনত্রিশ দিন। দারুণ ব্যাপার হবে স্যার! তারপর কী হবে স্যার!’
মুখ ফস্কে কথাটা বলে সহজ একটু ঘাবড়ে গেল। এই মেয়ে খুব পাকা। না জানি কী মানে করবে। কথাটা কাটাতে হবে। বলল, ‘হ্যাঁ, ঊনত্রিশ দিন, কিন্তু তারপর কী হবে আমি জানি না।’
‘বাঃ জানি না বললে হবে— ভালো কিছু একটা তো হবেই। নিশ্চয়ই লটারির টিকিট কেটেছেন এমন নয় তো? তাহলে স্যার ভানু পেল লটারি!’
‘না, না, আমি লটারি ফটারির মধ্যে নেই। তোমার আর কী অঙ্ক আছে বলো? আর হোমওয়ার্ক—’
‘স্যার, যদি বিশাল কিছু হয়, আপনি নিশ্চয়ই আর টিউশন করবেন না, আমি খুব মুশকিলে পড়ে যাব। আপনার উন্নতি আমার উচ্চমাধ্যমিকের পরে হলে ভালো হতো—।’
সহজের মুখ এসে গিয়েছিল, ও আমার উন্নতি তোমার উচ্চমাধ্যমিকের জন্য বসে থাকবে। বলল, ‘আরে না, না, তেমন কিছু না। আমি মজা করলাম—।’
‘না, স্যার আমি জানি আপনি মজা করবেন না, আর সেটা ছাত্রীর সঙ্গে তো নয়ই। আপনি সিরিয়াস বলেছেন। বুঝেছি, আগেভাগে আপনি জেনে গিয়েছেন। কী স্যার কোনও এগজাম! অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার। দেশে, না বিদেশে স্যার—?’
ঝটকা মেরে উঠে পড়ল সহজ। বলল, ‘অন্তত পার ডে একটা পেপার সলভ কোরো। ঘড়ি ধরে—।’ ঘড়ির কথা বলেই সহজের মনে পড়ে গেল সে ছোট কাঁটা! ছোট কাঁটা হওয়ার জন্য তাকে বড় কিছু একটা ঘটাতেই হবে। কিন্তু সেটা কী?
বর্ণিনীকে তেত্রিশ দিনের কথা বলেনি সহজ। বললে, বনি আবার কী না কী মানে করবে। এমনিতেই সহজের সঙ্গে পরমেশ্বরের ভাবসাব ভালো ভাবে নেয় না বনি। পরমেশ্বর ওর কাছে গুন্ডা মস্তান ছাড়া কিছু না। অথচ মিমি কিন্তু পরমেশ্বরকে ক্যাশ করার চেষ্টা করে। সে মনে করে কিছু টাকা-পয়সা ইনভেস্ট করে সহজের প্রোমোটিং বিজনেসে নামা উচিত। কী হবে দু’পয়সার মাইনের চাকরি খুঁজে? যারা প্রোমোটিং করছে, তারাই দু’দিনে বড়লোক। বাড়ি-গাড়ি। বোন মিমি যা জানে না তা সহজ জানে—গাড়ি বাড়ি আর তাদের একাধিক নারী!
সে মিমিকে বলেছে, ব্যবসা করার মতো অত টাকা আমার কোথায় রে?
মিমির কথা, ‘ফার্স্ট টাইম তুই বাবার কাছ থেকে নে। একটা প্রজেক্ট অন্তত কর। সেকেন্ড প্রজেক্টের টাকা আমি আবার বাবার থেকে এনে দেব। দেবে না মানে?’
‘তুই টাকা এনে দিবি, মানে?’
‘তখন আমি তোর পার্টনার হব।’
মৈত্রেয়ীর খুব বড়লোক হওয়ার ইচ্ছে। কেন বড়লোক? রোজগার ছাড়া মেয়েরা স্বাধীন হতে পারবে না। অনেক টাকা চাই। সেই টাকাই ওকে স্বাধীনতা এনে দেবে। নইলে ওকে মায়ের মতো ঠাকুরঘরে চন্দন কাঠ হতে হবে। ও চন্দন কাঠ বা ধূপ হতে চায় না।
তবু ওর বোনের ইচ্ছে আছে, কিন্তু সহজের কী ইচ্ছে সে নিজেই ঠিক বুঝতে উঠতে পারছে না। আসলে সহজকে ঠিক করতে হবে— সে ব্যবসা করবে, না লিখবে? যদি লিখতে চায়, তাহলে?
সহজ ভাবছিল, তেত্রিশ দিন প্রথম ধাপ, সাত মাস পর উড়ান। আপাতত...
পরমেশ্বরের অফিসে যেতেই ভানুদা বলল, ‘কী ভাই সেদিন— মেনকা মাথায় দিল ঘোমটা— মনে করতে পারলে কোথায় শুনেছ?
‘পেরেছি। এই এক্ষুনি মনে পড়ল আপনাকে দেখে— ছোটবেলায় আমার মামারবাড়িতে দু’জন লোক আসতেন। তাঁদের একজনের ঘাড়ে একদিকে ঝুলত একটা হারমোনিয়াম, আর অন্যজনের ঘাড়ে ঝুলত খোল। তাঁরা এসে মামারবাড়ির বারান্দায় বসত। তারপর পাটে পাটে হারমোনিয়াম, খোলের গা থেকে ঢাকা-কাপড় খুলে হারমোনিয়ামে সুর ধরতেন, খোলে বোল তুলতেন। তখনই শুনেছিলাম, এই গানটা।’
সহজের মামারবাড়ির কথা মনে পড়ে গেল।
ভানু বলল, ‘খুব পুরনো গান!’
পরমেশ্বর বলল, ‘তুই নাকি মনোতোষ স্যারের কোচিং ছেড়ে দিয়েছিস?’
‘হ্যাঁ।’
‘কেন?’
‘ভাল্লাগছিল না।’
‘তুই ওকে কী বলেছিস— তুই নাকি ঘড়ির ছোট কাঁটা? মনতোষ পেন্ডুলাম ছাড়া আর কিছু না। ও ছাত্র পড়াবে, আর কামাবে আর কিছু না। মনোতোষ কাল রাতে আমার কাছে দৌড়ে এসেছিল। ও কোনও অভিযোগ করেনি। আসলে কোচিং-এর টিচার হিসাবে আমি মনোতোষকে বলেছিলাম তোর কথা। সেটা তুই জানিস না। যাইহোক, ও ভেবেছে, আমি ওর ওপর রেগে যাব, তাই আমাকে ম্যানেজ করতে এসেছিল। কিন্তু ও আমার কাছে জানতে চাইছিল— তোর মাথায় কোনও গণ্ডগোল আছে নাকি? আসলে তুই ওকে এমন ছোট কাঁটা বড় কাঁটা করেছিস, ও ঘাবড়ে গেছে।’
সহজ হাসল, বলল, ‘দুর দুর কিছু না, আমি ছেড়ে দেব, কিন্তু কী বলে ছাড়ব? ছাড়তে চাইলেই উনি চেপে ধরবেন। তাই ওকে একটু ঘেঁটে দিলাম। ঘেঁটে দিয়ে চলে এলাম। আর আমাকে পড়ানোর কথা বলবেন না।’
পরমেশ্বর বলল, ‘সে ঠিক আছে। কিন্তু তোকে একটা কথা বলি— ওই ক্যাপ্টেন কিন্তু প্রচুর ভুলভাল বকে। নিজেকে পিশাচ পিশাচ করে। ওর একটা স্যাড ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। অনুমান করি। আমাকে তেমন কিছু বলেনি। কিন্তু তোকে একটা রিকোয়েস্ট করব, ওর কথা বিশ্বাস করবি না। ও ঢপ! পুরো ঢপ!’
‘তাহলে তুমি বিশ্বাস করো কেন?’
সহজের কথায় ঠিকরে ওঠে পরমেশ্বর, ‘আমি! আমি ওর কথা বিশ্বাস করি না।’
‘সত্যি বলছ?’
‘তোকে মিথ্যে বলব কেন? তুই ভাবছিলি— আমি ওকে ক্যাপ্টেন ক্যাপ্টেন করে খাতির করছিলাম সেটা দেখে? আরে ও খোরাক। ওর সঙ্গে কথা বলতে আমার মজা লাগে। ব্যস, আর কিছু না।’
‘তাহলে ওর কথা তুমি শোনো কেন?’
‘ও বলে আমি শুনি। পাঁচজন পাঁচ কথা বললে, শোনা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।’
‘আমি সে শোনার কথা বলছি না। ওর কথা শোনা মানে, মেনে চলো কেন?’
‘কী পাগলের মতো কথা বলছিস!’
‘ওই পিশাচ সাধু বা ক্যাপ্টেন তোমাকে বলেছে— তুই একুশ দিনের বেশি এলাকায় থাকলে মার্ডার হয়ে যাবি। ওর কথা শুনে তুমি কোনও সময় এক নাগাড়ে কুড়ি দিনের বেশি পাড়ায় থাকো না।’
সহজের কথায় চুপ করে থাকে পরমেশ্বর। স্থির চোখে তাকিয়ে থাকে ওপর দিকে। ‘দেখ, পলিটিক্যাল সিচ্যুয়েশন ভালো না। পার্টির টপ টু বটম কোরাপশনে ডুবে গিয়েছে। এই ইলেকশনেই সরকারের পতন অনিবার্য। আমি পার্টি ছেড়ে প্রায় বেরিয়ে এসেছি। বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী হিসেবেই খাতায় কলমে আছি। পার্টি আমাকে ছাড়বে না। খরচা করে দেবে। তাই এখন যদি কেউ এমন কথা বলে— একটু দুর্বল হয়ে পড়তেই হয়।’
‘লোকটা এমন কথা বলে কেন?’
‘জানি না। হয়তো ওর হিপনোটাইজ করার গুণ আছে। মনে হবে ও ঠিক বলছে, বিশ্বাস করি। কিন্তু সেটাই ভুল। সেটাই পিশাচের ফাঁদ। এই ফাঁদে পড়িস না।’
‘ফাঁদ!’
‘হ্যাঁ, ফাঁদ। শুনিসনি কামাখ্যার তান্ত্রিকরা মানুষকে ভেড়া বানিয়ে রাখে। ভেড়া কি আর শরীরে বানায়! ভেড়া বানায় মগজে। ও সেই বিদ্যা জানে! ওর দেখানো পথে চালিত করার বিদ্যা! ভেড়া বানানোর বিদ্যা!’
‘তোমাকেও তাহলে ভেড়া বানিয়েছে?’