সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে অবনতি। নানাভাবে অর্থ অপচয়। কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।প্রতিকার: ... বিশদ
প্রতিনিয়ত আমি অবহেলার সঙ্গে মিলেমিশে চলে বেড়াচ্ছি। নিজে কখন কীভাবে কার দ্বারা অবহেলিত হচ্ছি কিংবা কাকে কীভাবে অবহেলা করছি তার কোনও ইয়ত্তা নেই। ছেলেবেলায় আমি খুব দুর্বল প্রকৃতির ছিলাম বলে সহপাঠীরা হেলাফেলা করত। তাও বুক ঠুকে এবার স্পোর্টসের দৌড় প্রতিযোগিতায় নেমেছিলাম। পুরস্কার পাওয়ার কোনও আশা ছিল না। কিন্তু দৌড় সীমার শেষপ্রান্তের কাছাকাছি পৌঁছতে একটা মেয়ে এমন ধাক্কা মারল যে, ছিটকে গিয়ে সবাইকে টপকে কাঁদতে কাঁদতে প্রথম স্থান অধিকার করলাম।
পরবর্তীকালে স্কুল, কলেজ কিংবা কর্মক্ষেত্রে নানা অবহেলা সহ্য করতে হয়েছে। দুর্বল ছাত্র হিসেবে মেধাবী ছাত্রদের কাছ থেকে অবহেলা পেয়েছি। কান ধরে ওঠবোস কিংবা বেঞ্চির উপর কান ধরে দাঁড়ানো ছিল রোজকার ব্যাপার। অবশ্য, আমি নিজেও সময়ের প্রতি চূড়ান্ত অবহেলা করেছি। যদিও সেই চিরসত্যটি জানতাম যে, সময় ও স্রোত কারওর জন্য অপেক্ষা করে না।
শিক্ষাজীবনের শেষে এক পাড়াতুতো মামার সুপারিশে একটি অফিসে ঢুকলাম। প্রায়ই অফিস পৌঁছতে দেরি হতো। বসের চোখরাঙানি সয়ে গিয়েছিল। দায়িত্বের গাফিলতির জন্য কম বকা খেতে হয়নি। সেই অবহেলা আজ কিন্তু বিবেকের আদালতে দাঁড় করাচ্ছে আমাকে। তবে, কর্ম এবং সময়কে গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন না করেও কর্মক্ষেত্রে বেশিদিন অবহেলিত থাকতে হয়নি। বেমক্কা একটা কঠিন কাজ উতরে দেওয়ায় যেমন বেড়ে গেল বেতন, তেমনই বেড়ে গেল সম্মানও। যেন ফিরে পেলাম অগোছালো স্বপ্নগুলো গোছগাছ করার দুঃসাহস। অবহেলিত দৃষ্টির কবল থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে এলাম বাস্তবতার স্বপ্নময় জীবনে। আজ এই আধবুড়ো বয়সে তাই কোনও অবহেলা সহ্য করতে পারি না। সামাজিক দায়িত্ববোধগুলো বেড়ে গিয়েছে। কোনও কিছুকে অবহেলা তখনই মনে হয় যখন এক্সপেক্টেশন অনুযায়ী সেটা বাস্তবায়িত হয় না। দায়সারা অজুহাতগুলোকেও তখন অবহেলা ভাবি। অবহেলা যে আমাকে কষ্ট দেয় তা ভালোবাসার মানুষটিকেও বোঝাতে পারি না। যে মেয়েটিকে ভালোবাসি তারও তো কিছু দায়দায়িত্ব থাকে। কিশোরবেলা থেকে যে কত মেয়ের প্রেমে পড়লাম, কিন্তু কেউ যে পাত্তা দিল না। বুক ফাটা কান্না ছাড়া যে কিছুই পেলাম না। প্রেমপত্র রিজেক্ট হয়ে ফেরত আসত প্রুফরিডারের মতো করে দেওয়া বানান সংশোধিত হয়ে। যে যে কারণে আমি প্রেমে ব্যর্থ সেগুলোর প্রতি আলাদাভাবে যত্নশীল হওয়ার ইচ্ছাও উবে গেল ধীরে ধীরে। প্রেমের দরজা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসে। নিজেকে বড়ই অবাঞ্ছিত মনে হয়। এই মানসিক যন্ত্রণা আমাকে ঘুণপোকার মতো কুরে কুরে খায়। মানলাম আমি সামাজিকতা পালনে উদাসীন এবং আধুনিক আদব-কায়দা সম্বন্ধে ততটাও সচেতন নই।
যুবক কালে পরিস্থিতি যখন এমনই সঙ্গীন, তখন একদিন এক মহিলা ডাক্তারের প্রেমে পড়লাম। সাহিত্যের ভাষায় যাকে বলে ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’। ধীরে ধীরে কেমন যেন ব্যক্তিত্ব আর আত্মবিশ্বাস ফিরে আসছে। মন বলছে, সেই মহিলার সঙ্গে চোখ বন্ধ করে কাটিয়ে দিতে পারব সারাটা জীবন। প্রেমের গভীরতা আর সত্যতা প্রমাণে সেই ডাক্তারনিকে আঙুল কেটে রক্তে রাঙা প্রেমপত্র লিখলাম—
‘আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা, আশাকরি সুগন্ধী পারফিউমের মতো ভালো আছ। আমার ভালোবাসা নুডুলসের মতো দু’মিনিটে তৈরি হয়নি। এ প্রেম স্টেনলেস স্টিলের মতো মরচেহীন। কোনও মিটার তৈরি হয়নি, যা আমার প্রেমের গভীরতা মাপবে...’
দিন কয়েক পার হতেই মনে হল, আগের অনেক প্রেমপত্রের মতোই এরও জবাব আসবে না। কিন্তু হঠাৎই উত্তর চলে এল। সেই মহিলা ডাক্তার লিখেছিলেন, ‘আপনার পত্রের প্রাপ্তি স্বীকার করছি। জানি, আপনি রক্ত দিয়ে চিঠিটা লিখেছেন। পরীক্ষা করে দেখেছি ব্লাড গ্রুপ এবি নেগেটিভ। রক্তে ক্যালশিয়ামের যথেষ্ট ঘাটতি আছে। বাড়িতে রোজ কচুশাক রাঁধতে বলবেন। মাঝেমধ্যে গলা চুলকাতে পারে, কিন্তু এই সমস্যার প্রতিকার নিশ্চিত।’