কর্মপ্রার্থীদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। প্রেম-প্রণয়ে আগ্রহ বাড়বে। নিকটস্থানীয় কারও প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। পুরোনো কোনও বন্ধুর ... বিশদ
৫ সেপ্টেম্বর মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী একটা নোট বিলি করলেন কলকাতায়। ১৯২০। কংগ্রেসের অধিবেশনে। তিনি চাইছেন, অসহযোগ নামক একটি আন্দোলন করুক কংগ্রেসো সেই প্রস্তাবের নোট। মাত্র পাঁচ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে স্থায়ীভাবে ভারতে চলে এসেছেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। এসেই কয়েক বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ অন্যরকম একটি রাজনৈতিক কালচার নিয়ে এসে যেন কংগ্রেসের খোলনলচে বদলে দেওয়ার একটা আভাস দিচ্ছেন। সেই নোটে গান্ধীজির প্রস্তাব ছিল সাতদফা অ্যাকশন। ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া সমস্ত উপাধি ও সাম্মানিক পদ সমর্পণ করা হবে, সরকারি অনুষ্ঠান বয়কট করতে হবে, সরকারি স্কুল কলেজ থেকে ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে ছেলেমেয়দের, পরিবর্তে জাতীয় স্কুল কলেজ নির্মাণ করা হবে, ব্রিটিশ বিচারবিভাগকে বয়কট করা হবে, লেজিসলেটিভ কাউন্সিল বয়কট করা হোক ইত্যাদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ। তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি হল বিদেশি পণ্য বর্জন করা। দু’দিন ধরে সেই নোট পড়ে অনুধাবন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ পেলেন কংগ্রেস প্রতিনিধিরা। ৮ সেপ্টেম্বর সেই নোট পেশ করা হল অধিবেশনে। এলাহাবাদের খ্যাতনামা আইনজীবী মতিলাল নেহরু সেই প্রস্তাবকে সমর্থন করলেন। আর দ্বিতীয় সমর্থন দিলেন তাঁরই ছেলে জওহরলাল। ইনার টেম্পল ব্রিটিশ কলেজ থেকে আইন পাশ করে আসা জওহরলাল তখনও কট্টরপন্থায় আকৃষ্ট। আর অন্যদিকে গান্ধীজির প্রস্তাবের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করলেন তিনজন। মহম্মদ আলি জিন্না, মদনমোহন মালব্য এবং অ্যানি বেসান্ত। সারাদিন ধরে পক্ষে-বিপক্ষে প্রবল বক্তৃতা চলল। দিনের শেষে ভোটাভুটি। দেখা গেল গান্ধীজির প্রস্তাব জয়ী হয়েছে সংখ্যার বিচারে। ১৮৫৫টি ভোট পড়েছে প্রস্তাবের সমর্থনে। আর বিপক্ষে ভোটের সংখ্যা ৮৭৩। কিছু কিছু রাজ্যে অসহযোগের পক্ষে সমর্থন একতরফা। যেমন সংযুক্ত প্রদেশ। সেখানে পক্ষে ভোট পড়েছে ২৫৯। আর বিপক্ষে মাত্র ২৮। মাদ্রাজ আর বেঙ্গলে সবথেকে টাফ ফাইট। বেঙ্গলে গান্ধীজির ওই অসহযোগের পক্ষে ভোট পড়েছে ৫৫১। বিপক্ষে ৩৯৫। মাদ্রাজে পক্ষে বিপক্ষের অনুপাত ১৬১ ও ১৩৫। সুতরাং ব্যাপারটা এরকমই দাঁড়াল যে, সংখ্যার বিচারে অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব জয়ী হলেও, পাশ করানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হল। কারণ বোঝাই যাচ্ছে, বহু কংগ্রেসি প্রতিনিধি এই আন্দোলনে সায় দিচ্ছেন না। তাই সকলকে বোঝাতে হবে। যুক্তি দিয়ে, তথ্য দিয়ে, পক্ষপাতহীন হয়ে। তিনমাস পর নাগপুরে বার্ষিক অধিবেশন। সেখানেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ। ততদিন ধরে গোটা দেশের কংগ্রেসের মধ্যে এই বিষয়টি বোঝানোর দায়িত্ব দুজনকে দেওয়া হল। বিপিনচন্দ্র পাল এবং চিত্তরঞ্জন দাশ। বিপিনচন্দ্র পাল তখনই সিনিয়র কংগ্রেসি নেতা। কিন্তু চিত্তরঞ্জন দাশকে এই দায়িত্বে সংযুক্ত করার কারণ তাঁর অসামান্য আইনজ্ঞান ও বাগ্মিতা। পাশাপাশি তিনি পক্ষপাতহীন জাতীয়তাবাদী। গান্ধীজি বুঝে গিয়েছিলেন, এই লোকটিই কংগ্রেসের আগামীদিনের নক্ষত্র হবেন। গান্ধীজির প্রস্তাবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তিনিই সবথেকে দায়িত্বশীল।
ঠিক দু’বছর পর গোটা চিত্রটাই বদলে গেল। ততদিনে অসহযোগ আন্দোলনের কারণে কংগ্রেসের নেতৃবর্গ গ্রেপ্তার হয়েছেন। গান্ধীজি তো বটেই। চিত্তরঞ্জন দাশও। ১৯২২ সালে গয়ায় আহ্বান করা হল কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন। চিত্তরঞ্জন দাশ সভাপতি। শুরুতেই তিনি গান্ধীজি সম্পর্কে বললেন, এই বিশ্বের দেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানুষটির নাম হল মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। একদিকে তিনি একথা বললেন বটে, কিন্তু তাঁর প্রস্তাবটি উপস্থিত সকলকেই হতচকিত করে দিল। গান্ধীজির বয়কটের রাজনীতিকে এবার চিত্তরঞ্জন দাশ সমাপ্ত করতে বললেন। তিনি বললেন, মন্টেগু চেমসফোর্ড স্কিমে গঠিত লেজিসলেটিভ কাউন্সিলকে বয়কট করে লাভ হচ্ছে না। আমাদের উচিত কাউন্সিলে অংশ নিয়ে ভিতরে গিয়ে বিরোধিতা করা। কিন্তু গান্ধীজির পথের বিরোধিতা করা সেই প্রস্তাবকে কংগ্রেস প্রতিনিধিরা সমর্থন করলেন না। প্রস্তাবটি পরাস্ত হল ভোটাভুটিতে। চিত্তরঞ্জন দাশ সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলেন। এবং গঠন করলেন সম্পূর্ণ নতুন রাজনৈতিক দল। স্বরাজ্য পার্টি। যদিও এই দলটি কংগ্রেসের অন্দরেই নতুন উইং হিসেবেই রইল। অর্থাৎ কংগ্রেস পরিত্যাগ করা নয়। চিত্তরঞ্জন দাশের সঙ্গে ওই নতুন স্বরাজ্য পার্টির অংশীদার হলেন মতিলাল নেহরু, হাকিম আজমল খান এবং বিঠল ভাই প্যাটেল (সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের দাদা)। আর গান্ধীজির পক্ষে রয়ে গেলেন অন্য নেতানেত্রীদের মধ্যে সরোজিনী নাইডু, মৌলানা আব্দুল কালাম আজাদ এবং চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারি। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। গান্ধীজিকে বিস্মিত করে চিত্তরঞ্জন দাশ গান্ধীজির একের পর এক অনুগামীকে নিজের দিকে টেনে আনতে সক্ষম হলেন। আর তার পরিণাম পাওয়া গেল এক এক বছরের মধ্যেই। চিত্তরঞ্জন দাশের সেই কাউন্সিলে প্রবেশ করার প্রস্তাবই জয়ী হয়ে গেল এআইসিসি অধিবেশনে। চিত্তরঞ্জন দাশ কতটা দূরদ্রষ্টা ছিলেন, তার প্রমাণও পাওয়া গেল। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য সংযুক্ত প্রদেশ এবং বেঙ্গলে স্বরাজ্য পার্টি লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের নির্বাচনে বিপুল সাফল্য লাভ করেছিল। ১৯২৪ সালে কলকাতা পুরসভা পর্যন্ত দখল করে নিল ওই দল। জনপ্রিয়তার নিরিখে নির্বাচিত প্রথম কলকাতার মেয়র হলেন চিত্তরঞ্জন দাশ।
গান্ধীজি আবার বুঝে গেলেন, চিত্তরঞ্জন দাশ শুধুই বাংলার নয়, দেশের কংগ্রেসিদের কাছেও এক আকর্ষণীয় তারকা। এই ধারণা বদ্ধমূল হল আবার অন্য এক প্রস্তাবে। গান্ধীজি ১৯২৪ সালে হঠাৎ প্রস্তাব আনলেন কংগ্রেসের প্রত্যেক নেতাকর্মী পদাধিকারীকে দিনের মধ্যে অন্তত আধ ঘন্টা হলেও চরকা কেটে সুতো বয়ন করতেই হবে। অল ইন্ডিয়া খাদি বোর্ডকে প্রতি মাসে অন্তত ২ কেজি করে সুতো পাঠাতেই হবে। এই প্রস্তাবটি জয়ী হল। কিন্তু একেবারেই নগণ্য মার্জিনে। গান্ধীজির পক্ষে ভোট পড়েছিল ৭৮। বিপক্ষে ৭০। নির্বাচনের পরিভাষায় ‘নেক টু নেক’। বিপক্ষীয়দের নেতা কে ছিলেন? চিত্তরঞ্জন দাশ। নীতিগতভাবে এই প্রস্তাবকে স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারেননি চিত্তরঞ্জন দাশ। কিন্তু তাই বলে কি গান্ধীজির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি হয়েছে? একবারও নয়। বরং ঠিক পরের বছর চিত্তরঞ্জন দাশের আমন্ত্রণে গান্ধীজি দার্জিলিঙে এসেছিলেন। সেখানে চিত্তরঞ্জনের গ্রীষ্মাবকাশের একটি বাড়ি ছিল। স্রেফ গান্ধীজি আসছেন এবং দিন সাতেক থাকবেন, এই কারণেই চিত্তরঞ্জন দাশ সমতল থেকে সাতটি ছাগল আনিয়েছিলেন। কারণ গান্ধীজির অভ্যাস ছিল ছাগলের দুগ্ধ পান করা। ওই পাঁচদিন রাষ্ট্রগঠন, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় দু’জনের। একটি বিস্তৃত প্ল্যানও হয়েছিল যা নিয়ে অগ্রসর হওয়া যাবে বলে স্থির হল। পাশাপাশি চিত্তরঞ্জন দাশ গান্ধীজির থেকে চরকা কেটে সুতো তৈরির ব্যাপারটাও শিখে নিতে চাইলেন। গান্ধীজি নিয়ম করে প্রতিদিন শেখালেন বটে, কিন্তু সেই চরকা কাটার প্রক্রিয়া দেখে গান্ধীজি পরে হাস্যচ্ছলে লিখেছিলেন, ‘চিত্তরঞ্জন যেভাবে চরকা কাটতেন তা দেখে বোধ হয়েছে সেটা তাঁর কাছে ছিল ব্রিটিশ সরকারকে পরাস্ত করা কিংবা কোনও মামলায় জয়ী হওয়ার থেকেও কঠিন কাজ।’ গান্ধীজি ফিরে যাওয়ার এক মাসের মধ্যে দার্জিলিঙেই অকস্মাৎ মৃত্যু হয় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের।
১৮৭০ সাল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন চিত্তরঞ্জন দাশ। তাঁর বাবা ভূবনমোহন দাশ ছিলেন একটি সংবাদপত্রের সম্পাদক। পত্রিকার নাম ব্রাহ্ম পাবলিক ওপিনিয়ন। চিত্তরঞ্জন দাশ বাবার থেকে যে অভ্যাসটি চরিত্রের মধ্যে আত্মস্থ করে নিয়েছিলেন সেটি হল, বই পড়ার নেশা। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পাশ করে তিনি ব্রিটেনের ইনার টেম্পল থেকে আইন পাশ করে ১৮৯৩ সালে কলকাতায় ফিরেছিলেন। পিতার সম্পাদকীয় গুণটি তাঁর মধ্যেও যে রীতিমতো সঞ্চারিত হয়েছিল তার প্রমাণ হল, বিপিনচন্দ্র পাল এবং অরবিন্দ ঘোষের সংস্পর্শে এসে তিনি তাঁদের পত্রিকা ‘বন্দে মাতরম’ ও ‘স্বরাজ’ প্রকাশ করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আইনজীবী হিসেবে কেমন ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ? ১৯০৮ সালে আলিপুর বোমা মামলায় অরবিন্দ ঘোষের হয়ে আদালতে সওয়াল করা চিত্তরঞ্জন দাশের ওজস্বী বক্তব্যগুলি গোটা দেশের পত্রপত্রিকায় ভূয়সী প্রশংসা পায়। আলিপুর বোমা মামলার অভিযুক্ত বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ সম্পর্কে আদালতে কোনও নরম বাক্য ব্যবহার করে জুরিদের মন জয় করার চেষ্টাই করেননি তিনি। উল্টে অরবিন্দ ঘোষ সম্পর্কে বলেছিলেন—‘He will be looked upon as the poet of patriotism, as the prophet of nationalism and the lover of humanity. His words will be echoed and reechoed...’
চিত্তরঞ্জন দাশ বস্তুত এক আদর্শ বাঙালি রোলমডেল ছিলেন। ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্যে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য। এতটাই যে, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আলোচনার মধ্যেও তিনি আচমকা ব্রাউনিংয়ের কবিতা থেকে রেফারেন্স দিতেন। তাঁর চরিত্রের আরও একটি বৈশিষ্ট্য ছিল। পরিবারকে না জানিয়ে এক আত্মীয়কে ঋণের হাত থেকে রক্ষা করতে তিনি চরম অর্থসঙ্কটের মধ্যেও একবার ১০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন ৯ শতাংশ সুদে। আত্মীয়কে ঋণের জাল থেকে মুক্ত করেছিলেন নিজে ঋণের জালে আবদ্ধ হয়ে। নির্দিষ্ট সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর যখন ঋণদাতা ওই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর নতুন চুক্তি করতে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে এসেছিলেন, তখন কিন্তু তাঁর সেই আত্মীয় বিপুল ধনীতে পরিণত হয়েছেন। চিত্তরঞ্জন দাশ বলতেই পারতেন ও হে, তুমি এবার তোমার ঋণের বোঝা নিজের স্কন্ধে নিয়ে আমাকে মুক্তি দাও। তা কিন্তু বললেন না। তিনি হাসিমুখে আবার সেই ঋণ পরিশোধের কাগজে দস্তখত করলেন। চিত্তরঞ্জন দাশ অনুজ সহকর্মীদের বলতেন, ‘তোমরা আসলে মনে করো আমাকে সকলে ঠকিয়ে যায় এবং আমি কিছুই বুঝি না, তাই না! আমাকে বোকা ভাবে সকলে। কিন্তু জানো তো, আমি সব বুঝতে পারি। কিছু বলি না। আমার কাজ দিয়ে যাওয়া, তাই দিয়ে যাই।’ মাত্র ৫৫ বছর বয়সে অকালমৃত্যু না এলে বাঙালির ভবিষ্যৎ হয়তো অনেকটাই অন্যরকম হতে পারত চিত্তরঞ্জন দাশের হাত ধরে। কারণ তিনি ছিলেন আদ্যন্ত এক বাংলাপ্রেমী জাতীয় নেতা।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্বল্প জীবনে বাঙালিজাতির প্রতি সবচেয়ে মহৎ এবং তাৎপর্যপূর্ণ অবদান কী? বাকি সব উপকারকে সরিয়ে রাখলেও অন্তত একটি বিষয়ে তিনি আমাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি আমাদের দিয়ে গিয়েছেন একটি অগ্নিশিখাকে। ১৯২১ এবং ১৯২২ সালে আট মাস তাঁর সঙ্গে একই কারাগারে থাকার সুবাদে এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক চিত্তরঞ্জন দাশকে ঘনিষ্ঠভাবে জানতে পারেন। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ৬ মাস একটানা একটি বড় ঘরে একই সেলে সেই যুবক চিত্তরঞ্জনের সান্নিধ্য পেয়ে এতটাই মুগ্ধ হন যে, স্থির করেন এই মানুষটিই তাঁর দীক্ষাগুরু। দেশবন্ধুর নীতিকেই নিজের আদর্শ হিসেবে হৃদয়ে বপন করেন সেই যুবক। বাঙালিকে স্বদেশে এবং আন্তর্জাতিক প্রাঙ্গণে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছেন ওই যুবক। আর ওই যুবককে অনুপ্রেরণা দেওয়ার কৃতিত্ব সম্পূর্ণ চিত্তরঞ্জন দাশের। তিনি প্রকৃতই দেশবন্ধু। একটা গোটা জাতির আত্মোন্নয়নের জন্য তিনি প্রেরণা দিয়েছিলেন নিজের এক মহাজাগতিক রাজনৈতিক ভক্তকে। সুভাষচন্দ্র বসু।
১৯২৬ সালে মান্দালয় জেলবন্দি অবস্থায় একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। দেশবন্ধুর মৃত্যুর পর। সেই নিবন্ধে তিনি লিখছেন, ‘ভারতের হিন্দু জননায়কদের মধ্যে দেশবন্ধুর মতো ইসলামের এত বড় বন্ধু আর কেহ ছিলেন বলিয়া আমার মনে হয় না...তিনি হিন্দুধর্মকে এত ভালবাসিতেন যে তার জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত ছিলেন, অথচ তাঁর মনের মধ্যে গোঁড়ামি আদৌ ছিল না...দেশবন্ধু ধর্মমতে বৈষ্ণব ছিলেন। কিন্তু তাঁর বুকের মধ্যে সকল ধর্মের লোকের স্থান ছিল..’।
চিত্তরঞ্জন দাশের এই চরিত্রটি অনুধাবন করলে স্পষ্ট হয় বাঙালি জাতির প্রকৃত নবজাগরণ যাঁদের হাত ধরে এসেছে এবং যাঁরা বাঙালিকে নিয়ে একটি বিশেষ চরিত্রায়নের স্বপ্ন দেখেছেন, সেই বাঙালি আইকনেরা প্রত্যেকেই এরকমই। তাঁদের চরিত্রটি ছিল-ধর্মমতে উদার, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বোধে পণ্ডিত, সামাজিক উন্নয়নে একনিষ্ঠ সেনাপতি, ধর্মনিরপেক্ষ, নারী ও দরিদ্র জাগরণে নিবেদিত প্রাণ, মনেপ্রাণে বাঙালি কিন্তু মননে এক আন্তর্জাতিকতা।
দেশবন্ধুর জন্মের সার্ধশতবর্ষে আমাদের ভাবতে হবে যে, কেন আজ আমরা বাঙালিরা ঠিক ওই প্রতিটি বৈশিষ্ট্য থেকেই বিচ্যুত!
সহযোগিতায় স্বাগত মুখোপাধ্যায়