বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
তবে বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরুর প্রাক্কালে গোটা ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ আক্রান্ত হয়েছিল ফুটবল জ্বরে। কারণ এই প্রথম ইউরোপের সবচেয়ে বড় দু’টি টুর্নামেন্ট উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং ইউরোপা লিগের ফাইনালে উঠেছিল চারটি ইংলিশ ক্লাব। এই রেকর্ড ইউরোপের আর কোনও দেশের নেই। গত বুধবার রাতে ইউরোপা লিগ ফাইনালে চেলসি ৪-১ গোলে আর্সেনালকে চূর্ণ করে চ্যাম্পিয়ন হয়। তার দু’দিন পরেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল অপর দুই ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল ও টটেনহ্যাম হটস্পার। গোটা ইংল্যান্ডের প্রতিটি জনপদের বিয়ার পাব, হোটেল, রেস্তরাঁয় ওই দু’দিন তিল ধারণের জায়গা ছিল না। জায়ান্ট স্ক্রিনে এই দুটি ম্যাচ দেখেছে লক্ষ লক্ষ ফুটবলপ্রেমী। তারপর বিজয়ী দলের ফুটবলারদের নিয়ে ভিকট্রি প্যারেডে শামিল হয়েছিলেন বিজয়ী দলের হাজার হাজার সমর্থক। সবমিলিয়ে গত কয়েকদিন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার শিরোনাম আদায় করে নিয়েছিল ফুটবল। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারী দশ দেশের ক্রিকেটাররাও এই পরিমাণ ফুটবল জ্বর দেখে বিস্মিত।
এবারের বিশ্বকাপ যেহেতু রাউন্ড রবিন লিগ ফরম্যাটে হচ্ছে, তাই সব দলকেই একে অপরের বিরুদ্ধে খেলতে হবে। অর্থাৎ প্রতিটি দলের সামনে সেমি-ফাইনালের দিকে এগনোর সমান সুযোগ থাকছে। যে দলের সাফল্যের ধারাবাহিকতা আগামী দেড় মাস যত বেশি থাকবে, তারাই হবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। আইসিসি ওডিআই র্যাঙ্কিংয়ে ভারত রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। শীর্ষে ইংল্যান্ড। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা তাঁদেরই এক নম্বর ফেভারিট দলরূপে চিহ্নিত করেছেন। আরেক ফেভারিট দল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। যারা শেষ আটটি ওডিআই ম্যাচে ভারত ও পাকিস্তানকে হারিয়ে সিরিজ জিতেছে। মনে হয়, খেতাবি লড়াই এই তিনটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
১৯৮৩ সালের ২৫ জুন ক্রিকেটের মক্কা লর্ডসে কপিল দেবের নেতৃত্বে ভারতের প্রুডেনসিয়াল বিশ্বকাপ জয় এই উপমহাদেশে খেলাটির ভোল বদলে দিয়েছিল। তারপর থেকেই এ দেশে ক্রিকেট নিয়ে বাণিজ্য-বিপণন আড়ে বহরে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট সংস্থা। কিন্তু প্রশ্ন হল, এবার বিশ্বকাপের প্রাক্কালে টিম ইন্ডিয়া কি পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে ইংল্যান্ডে গিয়েছে? এক কথায় এর উত্তর হল— না। দেশের মাঠে নির্জীব পাটা উইকেট দীর্ঘ আড়াই মাসব্যাপী আইপিএল খেলে কোহলি ব্রিগেড কিঞ্চিৎ বিশ্রামের পর সরাসরি ইংল্যান্ড উড়ে গিয়েছে। হয়নি কোনও আলাদা কন্ডিশনিং ক্যাম্প। তাই প্রথম ওয়ার্ম-আপ ম্যাচেই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৭৭ বল বাকি থাকতে বড় ব্যবধানে হেরেছিল ভারতীয় দল। সেই ম্যাচে ভারতের টপ ব্যাটিং অর্ডার পুরোপুরি ব্যর্থ। পরে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও দুই ভারতীয় ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও রহিত শর্মা ফের ব্যর্থ। তবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জোড়া সেঞ্চুরি করে ভারতকে জিতিয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি ও লোকেশ রাহুল। দু’টি ম্যাচেই দেখা গেল, রহিত ও শিখরের মুভিং বল খেলতে বিস্তর অসুবিধা হচ্ছে। স্যুইং বলের মোকাবিলা করতে গিয়ে দু’জনেরই পা নড়ছে না। অথচ আমরা মেনে নিয়েছি, ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডারের টপ থ্রি— রহিত, শিখর ও বিরাট বিশ্বের সেরা ত্রয়ী। দু’টি প্রস্তুতি ম্যাচেই দুই ভারতীয় ওপেনার কিউয়ি পেসার ট্রেন্ট বোল্ট ও বাংলাদেশি পেসার মুস্তাফিজুরকে ঠিক মতো খেলতেই পারেনি। মুস্তাফিজুরের ইনকামিং যে বলে শিখর প্যাডে লাগিয়ে প্লাম্ব এলবিডব্লু হল, তা এই বাঁহাতি ভারতীয় ওপেনারের কাছে অবশ্যই বিপদ সঙ্কেত। তাই সর্বাগ্রে ভারতীয় ওপেনিং জুটিকে অন্তত প্রথম দশ ওভারে উইকেটে টিকে থেকে নির্ভরতা দিতে হবে। নইলে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলির উপর চাপ বাড়বে। আর বিরাট কোনও কারণে বড় রান না পেলে মিডল অর্ডার বাড়তি চাপ সামলাতে ঝামেলায় পড়বে।
ইংল্যান্ডের অধিকাংশ মাঠই আকারে ছোট। বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ব্যাটিং সহায়ক উইকেট। তাই ৩৫০ বা ৪০০ রান উঠলেও অবাক হবেন না। কিন্তু ইংল্যান্ডের আবহাওয়া বড়ই খামখেয়ালি। এই মেঘলা আকাশ তো তারপরেই ঝিরঝিরে বৃষ্টি। সঙ্গে ঠান্ডা হাওয়া। তখন বল বাতাসে বাঁক নিয়ে পর্যাপ্ত স্যুইং করবে। এমন পরিবেশে আগে ব্যাট করলে যে কোনও দল ঝামেলায় পড়তে পারে।
এবার আসা যাক, ভারতের ক্রীড়াসূচির প্রসঙ্গে সাদাম্পটনের হ্যাম্পশায়ার বোওলে আগামী ৫ জুন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আইসিসি ওডিআই র্যাঙ্কিংয়ে থাকা তিন নম্বর দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভারতীয় দল কেমন হতে পারে, সেই প্রসঙ্গে। দুই ওপেনার রহিত ও শিখর। তিন নম্বরে ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলি এবং চার নম্বরে লোকেশ রাহুল। মিডল অর্ডারে হার্দিক পান্ডিয়া, এমএস ধোনি ও রবীন্দ্র জাদেজার খেলা উচিত। আবহাওয়া মেঘলা থাকলে তিন পেসার খেলানো যেতে পারে। তবে রৌদ্রালোকিত পরিবেশে জশপ্রীত বুমরাহ ও মহম্মদ সামি ভারতীয় বোলিং আক্রমণের সূচনা করবেন। সেক্ষেত্রে দুই পেসার নিয়ে খেলবে ভারতীয় দল। স্পিনার বলতে যুজবেন্দ্র চাহাল ও কুলদীপ যাদবের মধ্যে যে কোনও একজন প্রথম একাদশে থাকবেন। বাড়তি স্পিনারের দায়িত্ব রবীন্দ্র জাদেজা পালন করে দেবেন। বিটস অ্যান্ড পিসেস অলরাউন্ডার হিসেবে রয়েছে কেদার যাদব ও বিজয় শঙ্কর। যদি পরপর দু’টো ম্যাচে রহিত বা শিখরের মধ্যে কেউ ব্যর্থ হয়, তবে লোকেশ রাহুলকে মেকশিফট ওপেনার রূপে ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেকেন্ড ডাউনে খেলবে বিজয় শঙ্কর। তৃতীয় পেসার হিসেবেও ছেলেটি কাজ চালিয়ে দিতে পারবে। তবে ভারতীয় ফিল্ডিংয়ে পর্যাপ্ত উন্নতির অবকাশ রয়েছে। আর এর জন্য নেটে নিয়মিত রগড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। কোচ রবি শাস্ত্রীকে ‘পুরনো রোগ’ অপশনাল প্র্যাকটিসের বাহানা ছাড়তে হবে। এই রাউন্ড রবিন লিগ ফরম্যাটে একটা-দুটো ম্যাচ হারলেও সেমি-ফাইনালে যাওয়ার পথ কোনও দলের কাছে বন্ধ হবে না। এই ব্যাপারটা মাথায় রাখা দরকার।
গত বছর একদিনের সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫-১ ব্যবধানে চূর্ণ করেছিল বিরাটের টিম ইন্ডিয়া। সেটাও তাদের ঘরের মাঠে। এই সিরিজে ভারতের দুই রিস্ট-স্পিনার কুলদীপ যাদব ও যুজবেন্দ্র চাহালকে খেলতেই পারেনি প্রোটিয়া বাহিনীর ব্যাটসম্যানরা। তাই প্রথম ম্যাচে ভারতীয় দল মাঠে নামবে এক পা এগিয়ে থেকে। দ্বিতীয় ম্যাচ ৯ জুন লন্ডনের ওভালে। প্রতিপক্ষ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। স্যান্ডপেপার গেট কেলেঙ্কারি বা বল ট্যাম্পারিং বিতর্ককে পিছনে ফেলে এক বছর নির্বাসনদণ্ড কাটিয়ে এই বিশ্বকাপে রাজসিক প্রত্যাবর্তন ঘটতে পারে দুই অজি ব্যাটসম্যান স্টিভ স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নারের। অ্যারন ফিঞ্চের নেতৃত্বে গত ভারত সফরে ওডিআই সিরিজে পিছিয়ে পড়েও টিম ইন্ডিয়াকে ৩-২ ব্যবধানে পরাস্ত করে সিরিজ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। ধীরে ধীরে পিক ফর্মে পৌঁছেছে এই দলটি। শেষ আটটি ম্যাচেই ভারত ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জিতেছে অজিরা। মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স বিশ্বের অন্যতম দুই সেরা ফাস্ট বোলার। ঠিক তেমনই স্পিনের জাদুতে ভেলকি দেখাতে সমর্থ নাথান লিয়ঁ ও অ্যাডাম জাম্পা।
এরপর তৃতীয় ম্যাচ ১৩ জুন নটিংহ্যামের ট্রেন্ট ব্রিজে। প্রতিপক্ষ বিশ্বের ৪ নম্বর দল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু শেষ ওডিআই সিরিজে নিজেদের দেশের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে ১-৪ ব্যবধানে চূর্ণ হতে হয়েছিল কোহলি ব্রিগেডের কাছে। তাই এবার ইংল্যান্ডে গিয়ে প্রথম ওয়ার্ম-আপ ম্যাচে হারের বদলা নিতে ট্রেন্ট ব্রিজে ঝাঁপাবে টিম ইন্ডিয়া। দেখে খেলতে হবে ট্রেন্ট বোল্টকে।
এরপর ১৬ জুন ম্যাঞ্চেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে ভারত-পাকিস্তান মহাযুদ্ধ। যে ম্যাচের দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা ক্রিকেট দুনিয়া। বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত সবক’টি ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়েছে ভারত। সাফল্যের হার ১০০ শতাংশ। এবারও সেই জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলেই আশা করা যায়। পঞ্চম ম্যাচে আগামী ২২ জুন ভারতের সামনে পড়বে আফগানিস্তান। খেলাটি সাদাম্পটনের হ্যাম্পশায়ার বোওলে। এই ম্যাচে অবশ্যই জেতা উচিত কোহলিদের। ২৭ জুন ষষ্ঠ ম্যাচে ম্যাঞ্চেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে ভারতের প্রতিপক্ষ প্রথম দু’টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেল, সাই হোপের মতো বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান থাকা সত্ত্বেও এই ক্যারিবিয়ান ব্রিগেডের পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে। তাঁদের স্পিন বিভাগও খুবই দুর্বল। তাই এই ম্যাচেও ফেভারিট টিম ইন্ডিয়া।
৩০ জুন প্রতিপক্ষ আয়োজক দেশ ইংল্যান্ড। ম্যাচটি হবে বার্মিংহামের এজবাস্টনে। ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ ফিফটি-ফিফটি। ইংল্যান্ডের টপ সিক্স ব্যাটসম্যান জেসন রয়, জনি বেয়ারস্ট, জো রুট, জস বাটলার, বেন স্টোকস ও ইয়ন মরগ্যান এই মুহূর্তে সেরা ফর্মে রয়েছেন। মঈন আলি দক্ষ অলরাউন্ডার। ইংল্যান্ডের এই দলটির কাছে ৫০ ওভারে ৩৫০ রান তোলা জলভাত। তাই এই ম্যাচে ভারতীয় বোলিং আক্রমণ খুব আঁটসাঁটো হওয়া দরকার। তবে শেষ দুটি ম্যাচে বাংলাদেশ (২ জুলাই, এজবাস্টন) এবং ৬ জুলাই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হেডিংলের লিডসে অবশ্যই জেতা উচিত টিম ইন্ডিয়ার। রাউন্ড রবিন লিগে মোট ন’টি ম্যাচের মধ্যে ছ’টি জিতলেই সেমি-ফাইনালে যাওয়ার আশা উজ্জ্বল। এমনকী, পাঁচটিতে জিতলেও চলে যেতে পারে। বলা বাহুল্য, ভারতের সব ম্যাচই হাউসফুল হয়ে গিয়েছে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের টিকিট তো দশগুণ দামে কালো বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এবার ভারতীয় উপমহাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এই বিশ্বকাপ এক উৎসবের বার্তা বহন করে এনেছে। সেই জন্যই দর্শক উপস্থিতির ক্ষেত্রে এবার দ্বাদশ আইসিসি বিশ্বকাপ সব রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে।
ফিরে আসি, ‘টিম ইন্ডিয়া’ প্রসঙ্গে। বর্তমান ভারতীয় দলের সবচেয়ে বড় এক্স ফ্যাক্টর বিরাট কোহলি। একদিনের ক্রিকেটে তাঁর নেতৃত্বে ভারতের জয়ের হার ৭৩.৮৮ শতাংশ। যা ভারতীয় অধিনায়কদের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিদেশের মাঠে ৪২টি একদিনের ম্যাচে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়ে কোহলি জিতিয়েছেন ৩১টিতে। এই রেকর্ডও তাঁর পূর্বসূরি কোনও ভারতীয় অধিনায়কের নেই। রান তাড়া করে জেতানোর ক্ষেত্রে কোহলি ১০টি সেঞ্চুরি করে সাফল্যের সঙ্গে দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছেন। পরে ব্যাট করে টিম ইন্ডিয়ার জয়ের জন্য বিরাট কোহলি ১০টি সেঞ্চুরি ও ৭টি হাফ সেঞ্চুরি সহ মোট ২০৯৪ রান করেছেন। এক কথায় এই রেকর্ড অবিশ্বাস্য। যা শচীন তেণ্ডুলকরেরও নেই।
টিম ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেন হওয়ার পর একদিনের ম্যাচে বিরাট কোহলি ১৯টি সেঞ্চুরি ও ১৪টি হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। যাতে প্রমাণিত হয়, নেতৃত্বের বোঝা তাঁর দুরন্ত ব্যাটিং স্কিলকে বিন্দুমাত্র প্রভাবিত করতে পারেনি। আর এর প্রমাণ প্রথম পাওয়া গিয়েছিল কোহলির নেতৃত্বে আজ থেকে ১১ বছর আগে ২০০৮ সালে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতার সময়।
সেই ভারতীয় দলের ম্যানেজার ছিলেন কিছুদিন আগে প্রয়াত বাংলার যশস্বী ক্রিকেটার গোপাল বসু। একান্ত আলাপচারিতায় গোপালদা আমাকে তখনই বলেছিলেন, ‘তোমরা মিলিয়ে নিও, এই বিরাট ছেলেটা আগামী দিনে ক্রিকেট দুনিয়াকে শাসন করবে। এর হাত ধরেই এগিয়ে যাবে ভারতীয় ক্রিকেট।’ বলা বাহুল্য, অব্যর্থ ছিল গোপালদা’র ভবিষ্যদ্বাণী।
ক্যাপ্টেন হিসেবে বিরাট কোহলির কিছু ট্যাকটিক্যাল সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু সমালোচক অতীতে প্রশ্ন তুলেছেন। আর লক্ষ্য করে দেখবেন, এই সংক্রান্ত বিতর্ক দানা বেঁধেছে মূলত সেই ম্যাচে এমএস ধোনি না খেললে। কোনও সন্দেহ নেই, উইকেটের পিছনে মাহি থাকলে অনেক নিশ্চিন্ত বোধ করেন কোহলি। তখন ধোনিই ‘বিহাইন্ড দ্য উইকেট’ ভারতীয় স্পিনারদের লাইন ও লেন্থ সম্পর্কে আঙুলের ইশারায় সতর্ক করেন। ক্লোজ ইন ফিল্ডারদের নড়াচড়াও হয় তাঁর অঙ্গুলিহেলনে। বিরাট কোহলি এটা মেনে নিয়েছেন। তিনি আউট ফিল্ডের প্লেসমেন্ট নিয়ে মাথা ঘামান। তবে তাঁর নেতৃত্বে এবার ভারত বিশ্বকাপ না জিতলে ‘কোহলি যুগ’ পূর্ণতা পাবে না। ২০১১ থেকে শুরু হওয়া একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হবে না। আর এমএস ধোনিও চাইছেন, কেরিয়ারের চতুর্থ বিশ্বকাপ অন্তে বিদায়বেলায় সাফল্যের আলোকদ্যুতিতে উজ্জ্বল এক গৌরবজনক প্রস্থান। দু’জনের ইচ্ছা কি এবার ইংল্যান্ডে পূরণ হবে?
সবশেষে ফিরে আসি, এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে কারা হয়ে উঠবেন নায়ক? একঝাঁক অতিশয় প্রতিভাবান ক্রিকেটার এবার ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপের আসরে খেলছেন। ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কোনও ইংলিশম্যান নয়, আইরিশম্যান ইয়ন মরগ্যান। এবার দেশের মাঠে বিশ্বকাপ জিতলে তিনি হয়ে যাবেন সুপার হিরো। এক বছর নির্বাসন কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই সদ্য সমাপ্ত আইপিএলে ১০টি ম্যাচে মোট ৬৯২ রান করে অরেঞ্জ ক্যাপ জিতে পূর্ণমহিমায় প্রত্যাবর্তন করেছেন ডেভিড ওয়ার্নার। তার সঙ্গে আর এক নির্বাসনদণ্ড ভোগ করা বড় মাপের ব্যাটসম্যান স্টিভ স্মিথের দিকেও নজর রাখতে হবে। এছাড়া, অজি ব্রিগেডে উসমান খাওয়াজা, ক্যাপ্টেন অ্যারন ফিঞ্চ, পেসার প্যাট কামিন্স ও গত বিশ্বকাপের সর্বাধিক উইকেট সংগ্রহকারী বোলার মিচেল স্টার্কের দিকেও নজর রাখতে হবে। প্রচণ্ড শক্তিশালী ব্যাটিং নির্ভর ইংল্যান্ড দলে এবার টপ সিক্স ব্যাটসম্যান যে কোনও দলের সম্পদ। বোলিংয়ে নতুন চমক জোফ্রা আর্চার। এছাড়া, মার্ক উড, আদিল রশিদ, বেন স্টোকস, মঈন আলিরা তো আছেনই। পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপও বেশ ভালো। ফখর জামান, ইমাম-উল-হক, মহম্মদ হাফিজ, বাবর আজম, ও হ্যারিস সোহেল ফর্মে থাকলে বিপক্ষের কপালে দুর্ভোগ রয়েছে। নিউজিল্যান্ড দলে ক্যাপ্টেন কেন উইলিয়ামসন দারুণ নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মার্টিন গাপটিল, রস টেলর, কলিন মুনরো, কলিন ডে গ্র্যান্ডহোম, ট্রেন্ট বোল্ট, জিমি নিশাম’রা যে কোনও দলকে ঝামেলায় ফেলতে পারেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কিছু চমক দেখিয়েও বড় ব্যবধানে হেরেছে। প্রোটিয়া বাহিনীও খুবই শক্তিশালী দল নিয়ে এবার বিশ্বকাপে নেমেছে। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ‘ইউনিভার্স বস’ ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেল, সাই হোপ’রা নিজেদের দিনে বিশ্বের যে কোনও দলের বোলিং আক্রমণকে ধ্বংস করে দিতে পারেন। তাই এবারের বিশ্বকাপ যথেষ্ট ওপেন টুর্নামেন্ট। কোনও একটি দলকে নিশ্চিতভাবে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নরূপে চিহ্নিত করা যাবে না। তাই ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষায় থাকতেই পারে।
গ্রাফিক্স সোমনাথ পাল
সহযোগিতায় স্বাগত মুখোপাধ্যায়