পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক মতান্তর, কলহে মনে হতাশা। কাজকর্ম ভালো হবে। আয় বাড়বে। ... বিশদ
প্রতিদিন নিয়ম করে স্ট্রেংথ ট্রেনিং ও কার্ডিওভাস্কুলার এক্সারসাইজ করে ইমন। তবু মাসের শেষে ওজনদাঁড়ি দেখে মন ভরে না। মনে হয়, যত বেশি ওজন কমার দরকার ছিল, কমেছে তার চেয়ে বেশ কিছুটা কম।
সৌম্যর আবার আলাদা ঝঞ্ঝাট! ও যতবারই ওজন কমাতে চায়, মাস কয়েক কম থাকার পরেই ওজন বাড়তে থাকে। ওয়ার্কআউট, ডায়েট কোনও কিছুই কাজে আসে না।
আধুনিক দিনে শরীরচর্চাকে অবহেলা করেন না অনেকেই। ওজন ঝরানো ও জীবনযাপনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন অসুখবিসুখ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়ম করে কিছুক্ষণ শরীরচর্চা খুব উপকার করে। অনেকেই এই নিয়মটুকু মেনে চলার চেষ্টা করেন। তবু তাঁদের অবস্থা হয় ইমন বা সৌম্যর মতো। একটা সময় হতাশা গ্রাস করে ও তাতে ডায়েট ও হেলদি লাইফস্টাইলে ছেদ পড়ে। ফিটনেস বিশেষজ্ঞ গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘ওয়ার্ক আউটের সময় কিছু ভুলভ্রান্তি এই সমস্যা ডেকে আনে। অনেক জিমেই প্রশিক্ষিত ট্রেনার নেই। নানা জায়গায় কয়েকটা যন্ত্রপাতি নিয়েই শুরু হচ্ছে জিম। এর মাশুল গুনতে হচ্ছে, সেখানে শরীরচর্চা করতে আসা মানুষজনকে। পুষ্টিবিদ রেশমি মিত্রর মতে, ‘বহু ক্ষেত্রে এর জন্য ভুল ডায়েটও দায়ী। ওজন কমানোর ডায়েট মানে ব্যক্তির সব অসুখবিসুখ ভুলে শুধুই ওজন কমানোর পথে হাঁটা নয়। কিছু ডায়েটিশিয়ান সেটা মেনে চলেন না। ফলে শরীর সেই ডায়েট নিতে পারে না। তার উপর মাসের পর মাস একই ডায়েট চলতে থাকে। এসব কারণেই শরীর আর ডায়েটে সাড়া দেয় না।’
ডায়েট ও ওয়ার্কআউট সংক্রান্ত বেশ কিছু ভুল ধারণাও এর নেপথ্যে দায়ী। সেসব মিথ ভেঙে এগতে পারলে তবেই কাঙ্ক্ষিত ওজনে পৌঁছবেন ও সুস্থ থাকবেন।
• ফিটনেসই বনাম ওজন: অনেকেই আছেন, ওজন কমানোর প্রয়োজনে যা খুশি করতে পারেন। এমনকী, শরীরে সয় না, খাওয়া বারণ এমন জিনিসও ডায়েটে রাখেন, যদি তা ওজন কমাতে সক্ষম হয়। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে ফিটনেসই আসল। অন্যান্য অসুখের জন্য যা যা খাওয়া বারণ, সেসব খাবার পাত থেকে বাদ দিতে হবে। নইলে অচিরেই অসুস্থ হয়ে পড়ার শঙ্কা থাকবে। একটু ওজন বেশি থেকেও যদি ফিট থাকতে পারেন, তাতে সমস্যা নেই। সেটি বরং রোগা হতে গিয়ে অসুস্থ হওয়ার চেয়ে ভালো।
• গরম জল ও ওজন: অনেকেই সকালে ঘুম ভেঙে উঠেই গরম জল খান। একটি ধারণা রয়েছে, গরম জল শরীরের ফ্যাট ভাঙে। আদতে গরম জলের সঙ্গে ওজনের কোনও সম্পর্ক নেই। আসলে খাবার হজম করার ক্ষেত্রে গরম জল খুব উপকারী। তাই দিনের শুরুতেই গরম জল খেলে শরীরে বিপাকক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। খাওয়ার পরে গরম জল খেলে হালকা বোধ হয়। কিন্তু গরম জলের সঙ্গে ফ্যাট ভাঙার কোনও সম্পর্ক নেই।
• পেশি তৈরিতে প্রোটিন: শরীরে পেশির বাড়বাড়ম্ত মানেই উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন ডায়েট গ্রহণ করেন অনেকে। শরীরে আসলে প্রোটিন ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট সবই নির্দিষ্ট মাত্রায় শরীরে প্রয়োজন। কেউ দিনের পর দিন অন্যান্য খাবারের তুলনায় অতিরিক্ত প্রোটিন খেতে থাকলে একটা সময়ের পর তা কিডনির ক্ষতি করতে পারে। এই অতিরিক্ত প্রোটিনও শরীরে ফ্যাট হিসেবেই জমা হবে। তাই কোনও ভারী খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত না থাকলে ইনটেন্স ওয়ার্ক আউট করলেও প্রোটিন বার বা সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন হয় না।
• ফল খাওয়ার সময়: সন্ধের পর ফল খাওয়া যায় না— এমন একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে। এটিও মিথ। ফল খাওয়ার কোনও সময় হয় না। চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতিটি বড় মিল-এর আগে একটি করে আপেল খান। তাতে পেট কিছুটা ভরবে, খাবার বেশি খেয়ে ফেলার ভয়ও থাকবে না। সারা দিনে যখনই ইচ্ছে ফল খাওয়া যেতে পারে। কিছু ফল ডায়াবেটিস ও অ্যাসিডিটির কারণে অনেকের খাওয়া বারণ থাকে। তাঁরা সেই ফলগুলি এড়িয়ে চলুন।
• ঘরের কাজেই শরীরচর্চা: অনেকেরই ধারণা ঘরের কাজ যেমন ঘর মোছা, বাসন মাজা, ঝাঁট দেওয়া, সিঁড়ি ভাঙা এসবেই যথেষ্ট শরীরচর্চা হয়। বাস্তবে এই কাজগুলিতে ঘাম ঝরে ঠিকই, শরীর সচলও থাকে। কিন্তু ওজন কমাতে চাইলে শুধু এসবে ভরসা করলে হবে না। বরং এক্সারসাইজ, নাচ, সাঁতার, হাঁটাহাঁটি, ব্যায়াম কোনও একটিকে রাখতে হবে নিত্য রুটিনে।
• সুগার ফ্রি-র হাতছানি: চিনির বদলে সুগার ফ্রি খেলেই অনেকে মনে করেন, খুব স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি করেছেন। বাস্তবের চিত্রটি একেবারে বিপরীত। এই
কৃত্রিম চিনিতে মিষ্টি স্বাদ আনার জন্য অ্যাসপার্টেম দেওয়া হয়। কোনও কোনও প্যাকেটজাত খাবার, ডায়েট কোক ও জাঙ্ক ফুডে এই উপাদান উপস্থিত থাকে। তাই নিয়মিত এসব খেলে তা থেকে মাথা যন্ত্রণা, ওজন বৃদ্ধি, হতাশার সমস্যা হতে পারে। এছাড়া স্যাকারিনও এর অন্যতম উপাদান। এই উপাদানটির জন্য ওজন বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। বরং অল্প চিনি খান। প্রয়োজনে গুড় বা নারকেলের চিনি কিংবা স্টেভিয়া ব্যবহার করতে পারেন। এগুলি চিনির চেয়ে কম ক্ষতি করে।
• ইমিউনিটি বাড়াতে কঠিন ব্যায়াম: এই ধারণা থেকে অনেকে জিম-এ গিয়েই শরীরচর্চার রুটিনে প্রথম দিন থেকেই ইনটেন্স এক্সারসাইজ বেছে নেন। এটি ভুল পদক্ষেপ। প্রথম প্রথম জিমে গিয়ে ইনটেন্স এক্সারসাইজ করা উচিত নয়। শরীরচর্চা শুরু করতে হবে ধাপে ধাপে। হালকা থেকে ভারী ব্যায়ামে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হতে হবে। যাতে শরীর ব্যায়ামের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। নইলে ইমিউনিটি কমতে শুরু করে।