পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক মতান্তর, কলহে মনে হতাশা। কাজকর্ম ভালো হবে। আয় বাড়বে। ... বিশদ
প্যাকিং যে কী বিষম বস্তু, বাঙালি তা হাতেকলমে স্বাদ পায় বেড়াতে যাওয়ার আগে প্যাকিং শুরু করলে। একসময় সাধারণ পোঁটলা-পুঁটলিতে বাঁধাছাঁদা করাকেই ‘প্যাকিং’ বলে জানত। একটু অবস্থাপন্ন পরিবার হলে চামড়ার স্যুটকেস ও বড় ট্রাঙ্ক ছিল তাদের ভরসা। কুলির মাথায় ও পিঠে বড় ছোট নানা আকারের ব্যাগ ও ট্রাঙ্ক চাপিয়েই বাঙালি বেড়াত নানা মুলুক।
ডাফল ব্যাগের যুগ
প্যাকিং বিষয়টা নিয়ে সে আর একটু সিরিয়াস হল, যখন বাজারে এল ডাফল ব্যাগ। প্রায় ১০০ লিটারের জিনিস ধরত এই ব্যাগে। একটা স্যুটকেসের সঙ্গে একটা ডাফল ব্যাগ হলেই বাঙালির বেড়াতে যাওয়ার সাজ শেষ হতো। তারপর গঙ্গা দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ডাফল ব্যাগ একসময় চাকা লাগিয়ে হুইলড ডাফল হয়। এই ধরনের ডাফল-এ হাতলও থাকত। তবে অসুবিধে ছিল বটে। একবার ব্যাগ হাতিয়ে কিছু বের করলে জিনিসপত্র ঠাসা ব্যাগ প্রায় পুরোটাই ফের আনপ্যাক করে প্যাকিং করতে হতো।
চাকার দুনিয়া
কাঠের গুঁড়িকে গড়িয়ে যেতে দেখে চাকা আবিষ্কার করে আদিম মানুষ। সেই চাকার ধারণাকেই কাজে লাগানো হল বেড়াতে যাওয়ার সরঞ্জামে। ততদিনে প্যাকিংয়ের জন্য ব্যাকপ্যাক ও স্ট্রলি এসে গিয়েছে বাজারে। স্ট্রলি-সহ কোনও কোনও ব্যাকপ্যাকেও জুড়ে দেওয়া হল চাকা। প্যাকিংয়েও এল বদল। শুধু চাকাই নয়, উন্নতমানের নানা প্রযুক্তি ধীরে ধীরে এল স্ট্রলিতে। অ্যান্টি থেফ্ট অ্যালার্ম থেকে শুরু করে নানা অর্গানাইজার, বিল্ট-ইন সিকিউরিটি, হিপবেল্ট, লকেবল জিপারস, শোল্ডার স্ট্র্যাপ সবই দেওয়া হল ভালোমানের ব্যাকপ্যাক ও স্ট্রলিতে। বেশিরভাগ ব্যাকপ্যাকই প্যারাশ্যুট কাপড়ে তৈরি, তাই মজবুত ও টেকসই। অনেক বেশি ভারও বহন করতে সক্ষম। তবে কিছু রুকস্যাকে থাকে থার্মোপ্লাস্টিক ইউরেথিন দিয়ে তৈরি হয়। এগুলো আরও উন্নত, জলপ্রতিরোধের ব্যবস্থাও থাকে। অনেক জিনিস ভরলেও পিঠে নেওয়া হয় বলে ভার বেশি বলে মনে হয় না। তাই ট্রেকিং বা দীর্ঘ পথযাত্রায় এগুলো কাজে আসে।
প্যাকিংয়ের রুলবুক
ব্যাগ যেমনই হোক, প্যাকিংয়ের মূল ব্যাকরণ ও বিশেষ কিছু নিয়ম না জানলে প্যাকিং পর্ব সহজ-সরল হয় না। এমনিতেই বিমান ও ট্রেন উভয় জায়গাতেই অতিরিক্ত লাগেজের জন্য বাড়তি টাকা গুনতে হয়। এদিকে বাবা-মায়ের জরুরি ওষুধ থেকে সন্তানের প্রয়োজনীয় মাথার ক্লিপ— সবই থাকে ‘নেসেসিটি’-র তালিকায়! কোনটা ছেড়ে কোনটা নেবেন, কীভাবে নিলে সহজেই জায়গা হবে ব্যাগে, কোন উপায়ে নিলে ভুল হবে না কিছুই, এসব চিন্তা বেড়াতে যাওয়ার আগে বাঙালির টেনশন বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট। আসলে প্যাকিং পর্বটি উদ্বেগহীন না করতে পারলে বেড়ানোর মেজাজেও চিড় ধরে। ভয় হয়, পরে হয়তো হাতের কাছে প্রয়োজনীয় জিনিস পাব না! বাড়ি থেকে দূরে গিয়ে বিপত্তি বাড়বে। তাই বেড়াতে যাওয়ার আগে কীভাবে প্যাকিং করবেন, রইল তার সহজ কিছু টিপস।
• বাড়িতে ব্যবহৃত সবকিছুই প্যাকিংয়ের লিস্টে গুরুত্বপূর্ণ নয়। কোন জিনিসটা জরুরি, কোনগুলো না হলেও চলে যায় এই ধারণা তাই স্পষ্ট থাকতে হবে। সেই অনুযায়ী লিস্ট তৈরি করুন। তালিকা মিলিয়ে দরকারি জিনিস নেওয়ার পর জায়গা থাকলে তুলনামূলক অদরকারি সামগ্রী নেওয়ার কথা ভাববেন।
• বাড়িতে খুদে সদস্য থাকলে বা একেবারেই দুধের শিশু থাকলে তার জন্য অনেক জিনিস নিতে হয়। শিশুর ট্রলি আলাদা করুন। অনেক খুদে সদস্য আবার নিজের ট্রলি নিজেই টেনে নিয়ে যেতে পছন্দ করে, এটা ওদের কাছে বড় হওয়ার আত্মবিশ্বাস আনে। ফলে তার প্রয়োজনীয় পোশাক, ওষুধ, টুকটাক শুকনো খাবার, চকোলেট সব সেই ব্যাগে নিন। একেবারেই কোলের শিশু হলে তার দুধের বোতল থেকে ন্যাপি সবই ওই একটি ব্যাগে রাখুন।
• প্যাকিংয়ের সুবিধার জন্য নানা আকারের অর্গানাইজার কিনতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের পোশাকের জন্য আলাদা আলাদা অর্গানাইজার ব্যবহার করুন। যেমন পুরুষদের শার্ট ও টি-শার্ট ভরলেন একটি অর্গানাইজারে, মহিলাদের শাড়ি ও সালোয়ারের জন্য আলাদা দু’টি অর্গানাইজার ব্যবহার করলেন। এইভাবে ভরলে জিনিস খুঁজে পেতে সুবিধা হয়।
• হোটেলে গিয়েই যে পোশাক পরবেন সেগুলি উপরের দিকে রাখুন। দরকারে তাদের জন্য একটি আলাদা অর্গানাইজার ব্যবহার করুন।
• অর্গানাইজারে জিনিস ভরার সময় রোল করে প্যাক করুন। এতে জামাকাপড়ের ইস্ত্রি নষ্ট হয় না ও জায়গা অনেক কম লাগে।
• টয়লেট্রি পাউচ, ওষুধপত্র ও গ্রুমিং কিটের জন্য আলাদা কিটব্যাগ কিনতে পাওয়া যায়। ছোট খাপওয়ালা সেই ব্যাগ কিনে তাতে এগুলো রেখে ট্রলির ভিতরে আলাদা যে খাপ দেওয়া থাকে, তাতে ভরে দিন।
• জুতো সহজেই ভরে নেওয়া যায় এমন খাপযুক্ত পাউচ বা কভার অনলাইনে অর্ডার করতে পারেন। এতে পোশাকের গায়ে জুতোর ধুলোময়লাও লাগবে না। ব্যাকপ্যাকে পাউচে ভরা জুতো ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়ারও ব্যবস্থা থাকে।
• ট্রেনে চেপে বেড়াতে গেলে খাওয়ার জন্য ডিসপোজেবল থালা-বাটির সেট নিন। আলাদা প্যাকেটে সেগুলো ভরে হাতে ঝুলিয়ে নিন। খাওয়া শেষ হলে এগুলো ফেলে দেওয়া হয়, তাই বাড়তি ভার হয় না। ফেরার পথে খাওয়ার জন্য ফের কিনে নেওয়া যায়।
• সঙ্গে রাখুন অতিরিক্ত হ্যান্ডব্যাগ। কেনাকাটার ইচ্ছে বেড়াতে গেলে সকলেরই হয়। হ্যান্ডব্যাগ থাকলে কেনাকাটা করা জিনিসপত্র ভরতে সুবিধা হবে।
• লিস্ট মিলিয়ে দেখে নিন সব নিলেন কি না। শেষ মুহূর্তের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস ফেলে রাখবেন না। তেল-সাবান-শ্যাম্পু এগুলো অনেকেই সঙ্গে নিয়ে যান। সেগুলোর জন্য ছোট ট্রাভেল প্যাকের জিনিস কিনুন।