পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক মতান্তর, কলহে মনে হতাশা। কাজকর্ম ভালো হবে। আয় বাড়বে। ... বিশদ
ঈষৎ ভারী। কিন্তু তুলির ছোঁয়ায় হয়ে ওঠে অনন্য। হ্যাঁ, সেরামিকের কথাই বলছি। সেরামিকের পাত্র ব্যবহার করার চল বেশ বেড়েছে এখন। শুধু পাত্র কেন, গয়না থেকে ওয়াল হ্যাঙ্গিং, সব কিছুতেই এখন সেরামিকের সৌন্দর্য। আঁকাআঁকির একটু শখ থাকলে আপনিও সেরামিক নিয়ে হাতের কাজ করতেই পারেন অবসরে।
প্রিয়াঙ্কা চন্দ তিন বছর হল সেরামিকে পেন্টিং-এর কাজ করছেন। ছোটখাট জিনিস দিয়ে প্রথমে শুরু করেছিলেন আঁকিবুকি। যেমন সেরামিকের ছোট বাটি বা ছোট চামচে কাজ। তারপর অ্যাশ-ট্রে বা পেপারওয়েট থেকে শুরু করে ওয়াল হ্যাঙ্গিং, বড় ট্রে-তে আঁকা শুরু করেন। তিনি জানালেন, প্রথমে বেছে নিতেন একটা বা দুটো রং, তার বেশি নয়। পরে ব্যবহার করেছেন অন্য প্রযুক্তি। যেমন স্ক্র্যাফিটো। এতে সেরামিকের কাঁচা মাটির উপর রং লাগিয়ে শুকোতে হয়। শুকিয়ে যাওয়ার পরে খুঁড়ে খুঁড়ে ভিতরের মাটিটা বের করা হয়। এতে উপরের স্তরের কাজটা খুব সুন্দরভাবে থেকে যায়। আলপনা থেকে শুরু করে যত বেশি ডিটেলিং থাক কাজের, এতে বিষয়টা নিখুঁতভাবে করা যায়। বাগান থেকে ফুল-পাতা জোগাড় করে, সেরামিকে কাঁচা মাটির উপর ছাপ ফেলে মাটি শুকানোর পরে তাতে রং দিলে সুন্দর একটা ফসিলের মতো ফিনিশ তৈরি হয়। সেটাও সেরামিকে করতে পারেন, জানালেন প্রিয়াঙ্কা। কাঁচা মাটি কীভাবে জোগাড় করবেন? বিভিন্ন স্টুডিওতে এগুলো পাওয়া যায়। বাড়িতে এটা জোগাড় করা একটু মুশকিল, কারণ এতে নানা ধরনের রাসায়নিক থাকে। রং বা মাটি সবটাই পাওয়া যায়। রং অবশ্য আজকাল অনলাইনেও পাওয়া যায়। সেরামিকের রঙের জন্য বিশেষ সাইট থাকে।
প্রিয়াঙ্কা জানালেন, পুরো কাজটা তিনি বাড়িতেই করেন। কাঁচা কাজটা তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে সেটি স্টুডিওতে দেওয়ার দরকার হয়। কারণ সেখানকার ফার্নেসে কাজটা সম্পূর্ণ হয়। এ ধরনের ফার্নেস বা চুল্লি বাড়িতে কেনা সম্ভব নয়, জানালেন তিনি। এছাড়া কয়েলিং বা স্ল্যাব মেকিং করা যায় সেরামিকে। এগুলোও কাঁচা মাটিতেই কাজ হয়। এগুলোতে কাজ হয়ে যাওয়ার পরে শুকিয়ে গেলে আর কোনও সমস্যা থাকে না। এছাড়া হার্ডওয়্যারের দোকানে আয়রন (রেড) অক্সাইড নামে একটি রাসায়নিক পাওয়া যায়। এটা কাঁচা সেরামিকের সঙ্গে মিশিয়ে লাল মাটি তৈরি করা যায়। সেই লাল মাটিতেও নানা কাজ করা যায়। এটা একেবারে অন্য ধরনের কাজ। লাল মাটিতে কাজ অনেকটা পুরনো দিনের পটারি কাজের মতো লুক আনে।
তবে সেরামিকের জিনিসে পেন্টিং করে যা-ই তৈরি করুন, সেটা একটু খরচসাপেক্ষ। তাই এর দামও বেশি হবে। কিন্তু সেরামিকে কাজ করার অভিজ্ঞতা খুব আরামদায়ক, বললেন প্রিয়াঙ্কা। যিনি একটু আধটু তুলি ধরতে জানেন, তেমন কেউ এতে অনায়াসে আঁকা ছবি ফুটিয়ে তুলতে পারবেন। এছাড়া ইউটিউবে আজকাল প্রচুর ভিডিও থাকে। এক একটা ধাপ পর পর দেখে দিব্যি শিখে নেওয়া যায়। পটারি হুইল থাকলে, বাড়িতে বসেই সেরামিকের নানা শেপের জিনিস বানিয়ে তারপর তাতে কালার করতে পারেন। কতটা জল লাগবে, কীভাবে বা কতক্ষণ শুকানোর পরে আবার অন্য রং দেওয়া যায়, এগুলো সবই শিখে নেওয়ার বিষয়। বাড়িতে অনেকটা সময় হাতে পেলেই করতে পারেন। আর অনেক স্টুডিও আছে এখন টালিগঞ্জের দিকে, যেখানে দিনে ৩০০-৩৫০ টাকায় প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় সেরামিকের কাজের। সেটা শিখে শুরু করলে আরও ভালো। সেরামিকের কাজের এখন খুবই ভালো চাহিদা। তাছাড়া নিজে হাতে কাউকে কিছু বানিয়ে উপহার দেওয়ার মাহাত্ম্যই আলাদা।
অনেকে আজকাল সেরামিক না পেলে পলিমার ক্লে ব্যবহার করে। কিন্তু এটা ত্বকের জন্য ভালো নয়। সেরামিক কিন্তু কখনওই ত্বকের জন্য ক্ষতিকর নয়। তাই চাইলে অনেকেই সেরামিকের গয়না করছেন আজকাল। এই ধরনের গয়না একবার ফার্নেস হয়ে গেলে পরে জলে ভিজে গেলেও কিছু হয় না। হাত থেকে পড়ে গেলে অবশ্য ভেঙে যায়। সেরামিকের তৈরি যে কোনও জিনিসের ক্ষেত্রেই সেইটুকু সাবধানতা রাখতে হবে। অন্দরসজ্জায় তাই সেরামিক দিয়েই হোক ভোলবদল।