বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
প্রযোজনা: নীলদর্পণ
পরিচালনা: রণেন্দ্রনাথ ধাড়া
সম্প্রতি ‘নীলদর্পণ’ নাট্যসংস্থা শিশির মঞ্চে ‘মোহমুদ্গর’ নাটকটি মঞ্চস্থ করল। এটি একটি একক অভিনয়। নাট্যকার, পরিচালক ও অভিনেতা একজনই— রণেন্দ্রনাথ ধাড়া। ‘মোহমুদ্গর’ শঙ্করাচার্যের দার্শনিক গ্রন্থ। যেখানে মানুষের জীবন দর্শনের দিশা পরিদর্শিত হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘মা কুরু ধনজনযৌবন গর্বম্/ হরতি নিমেষ কাল সর্বম্’ কিংবা, ‘কা তব কান্তা কস্তে পুত্রাঃ’— ইত্যাদি। কোনও কিছুই শাশ্বত নয়, এ সংসারে সবই অনিত্য, ক্ষণস্থায়ী— জীবনের এই চরম সত্য ‘মোহমুদ্গর’-এ প্রকটিত। নাটকটিও একেবারে সেই সুরে বাঁধা। ‘আনন্দ’ একটি চরিত্র, সারাজীবনটা আনন্দের ব্যর্থ অনুসন্ধানেই যার কেটে যায়। বৈষ্ণব কবির অম্লমধুর পদ তার জীবনের পরতে পরতে প্রতিফলিত— ‘পিয়াস লাগিয়া জলদে সেবিনু, বজর পড়িয়া গেল’। সে এক জন্ম-রোম্যান্টিক কবি। বস্তু জগতের কঠোর-কঠিন-রূপ ছিল তার অজানা। ভালোবাসার খোঁজে সে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে, খ্যাপা ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছে লাল রুমাল। ফল যা ঘটার, তাই-ই ঘটেছে, বাস্তবের কলুষ-কর্কশ মেঝের ওপর আছাড় খেয়ে পড়েছে সে।
এই হতভাগ্য জীবনের প্রতিটি পর্যায় অত্যন্ত মর্মস্পর্শী মুন্সিয়ানায় ফুটিয়ে তুলেছেন রণেন্দ্রনাথ। মঞ্চের দু’ঘণ্টা কাল-পরিসরে একটি বছর ষোলোর কিশোর কোনও জাদুবলে পৌঁছে যায় ছেচল্লিশের প্রৌঢ়ত্বে তা নির্বাক বিস্ময়ে বসে দেখার।
শেষ দৃশ্যে তার হৃদয়-নিঙ্ড়ানো অন্তিম আবৃত্তিটি যেন গোটা নাটকটির মর্মবস্তু উদ্ঘাটন করেছে। অভিনয়ের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করেছেন প্রবীণ আলোকশিল্পী ভানু বিশ্বাস। আবহশিল্পী শশাঙ্কশেখর কুণ্ডু ও আশিস গিরি, রূপসজ্জায় অর্পিতা চক্রবর্তী এবং অবশ্যই কণ্ঠমাধুর্যে আনন্দী রায় ও রুমি ভট্টাচার্য। মঞ্চস্থাপত্য স্বয়ং পরিচালকেরই।
এমন একটি সর্বাঙ্গসুন্দর প্রযোজনা উপস্থাপিত করার জন্য ‘নীলদর্পণ’ নাট্যসংস্থাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
নিজস্ব প্রতিনিধি