প্রেম-প্রণয়ে কিছু নতুনত্ব থাকবে যা বিশেষভাবে মনকে নাড়া দেবে। কোনও কিছু অতিরিক্ত আশা না করাই ... বিশদ
ত্বক যেহেতু আমাদের শরীরের বাইরের আবরণ তাই ত্বককে অনেক ধকল সইতে হয়। ধুলো-ময়লা, তাপ রশ্মি, আঘাত, সব কিছুর সঙ্গে তাকে লড়াই চালাতে হয় অবিরাম। আর লড়াই চালাতে চালাতে শ্রান্তি তো আসবেই। জৌলুসও কমবে। ত্বক যেমন আমাদের বাইরের ঝড়ঝাপটা থেকে রক্ষা করে তেমন আমাদের ওটাকে যত্ন করতে হবে, পরিচর্যা করতে হবে, যাতে সে পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
বয়সের ছাপ কেন পড়ে?
প্রথম কারণ তো বয়সই। বয়স বাড়লে ত্বকে তার ছাপ পড়বেই, কারও দু’বছর আগে, কারও দু’বছর পরে। কিন্তু আজকের এই জেট গতির যুগে বয়সের আগেও অনেকেরই ত্বকে ভাঁজ পড়ছে, চোখের চারপাশের নরম ত্বক কুঁচকে যাছে, কালচে ছোপ পড়ছে। এক কথায় বয়স হওয়ার আগেই বুড়িয়ে যাচ্ছে ত্বক। কী কী কারণে এটা হচ্ছে, দেখে নেওয়া যাক।
মানসিক কারণ: মনের প্রভাব ত্বকের উপর সব থেকে বেশি পড়ে। পেশাগত কারণে বা সাংসারিক কারণে যাঁদের টেনশন খুব বেশি, তাঁদের পক্ষে ত্বকের বয়স ধরে রাখা মুশকিল। আবার অনেকের অকারণ টেনশন করার অভ্যেস থাকে। তাঁদেরও অকালে বলিরেখা পড়ে যায়। আর এখন যে সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি, তাতে দুশ্চিন্তায় প্রায় সকলেরই ত্বকে প্রভাব পড়ছে।
ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাব: সূর্যের ক্ষতিকর আলট্রা ভায়োলেট রশ্মির প্রভাবে ত্বকে কালচে ছোপ তো পড়েই, তাছাড়া খুব বেশি রোদে ঘুরে কাজ করলে ত্বকের কোলাজেন স্তর ভেঙে যায়। ফলে ত্বকের ইলাস্টিসিটি নষ্ট হয়, ঝুলে যায়। সূর্যরশ্মি তো তাও দেখা যায়, কিন্তু বেশ কিছু আয়নিত রশ্মি আছে যা নীরবে আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে চলেছে। যেমন, যাঁরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করেন, স্মার্টফোন ব্যবহার করেন বা খুব কাছ থেকে টিভি দেখেন, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের প্রভাব তাঁদের ত্বককে বয়স হওয়ার আগেই বয়স্ক করে দেবে।
পলিউশন ক্ষতি করছে: বিশেষ করে শহরের বাতাসে দূষণের পরিমাণ এত বাড়ছে, তার প্রভাব পড়ছে ত্বকে। অল্প বয়েসেই ঝুলে যাচ্ছে চামড়া। কালচে ছোপ কেড়ে নিচ্ছে লাবণ্য।
হরমোনের প্রভাব: মেয়েদের চল্লিশ পেরোলেই ত্বকের রুক্ষ্মতা বেড়ে যায়। ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যাওয়াই এর মূল কারণ। মেনোপজের পর ত্বকের স্বাভাবিক লাবণ্য আরও কমে যায়। মানসিক অবসাদ আসে অনেকের। মন ভালো রাখলে কিন্তু এই হরমোনের প্রভাবও আসে ধীর গতিতে। তাই একে স্বাভাবিক ভাবে নিন ।
বয়স ধরে রাখতে কী করতে হবে?
• মন ভালো রাখুন। পজিটিভ থাকুন। অযথা টেনশন করে নিজের বুড়িয়ে ফেলবেন না।
• অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন বা সান ব্লক ক্রিম ব্যবহার করবেন। বাইরে বেরনোর অন্তত আধ ঘণ্টা আগে মুখে গলায় হাতে লাগাবেন। মেকআপ করতে হলে সানস্ক্রিন লাগিয়ে তারপর মেকআপ করবেন।
• আলট্রাভায়োলেট প্রোটেকশন দেওয়া সানগ্লাস পরবেন। এতে চোখের চারপাশের কোমল ত্বকে সহজে ভাঁজ পরবে না। ছাতা ব্যবহার করবেন।
• পলিউশনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে বাড়ি ফিরেই ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ক্লিনজার দিয়ে রোমকূপ পরিষ্কার করে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিন। ময়েশ্চারাইজার লাগান।
• খুব রগড়ে মুখ মুছবেন না। নরম চামড়ায় কালো ছোপ বা মেচেতা পড়ে যা সারানো মুশকিল।
• একটানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসবেন না। কিছুক্ষণ অন্তর উঠে চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিন।
কোনও ট্রিটমেন্ট আছে কি?
বয়সের কারণেই হোক, বা অকালে বার্ধ্যকের ছাপই পড়ুক, কিছু ট্রিটমেন্ট আছে যা ত্বকের সৌন্দর্য অনেকটা ফিরিয়ে আনে।
টেট্রিনয়েন জাতীয় ক্রিম: ত্বকের বয়স ধরে রাখতে চান যাঁরা, তাঁরা তিরিশ পেরলেই বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেবেন। এখন এই সময় থেকেই ত্বকের ক্ষয় শুরু হয়ে যায়। এই সময় থেকে রোজ রাতে টেট্রিনয়েন ক্রিম খুব অল্প পরিমাণে লাগাবেন মুখে গলায়। এই ক্রিম ভেঙে যাওয়া কোলাজেন টিস্যুকে টানটান করে।
নানা স্ট্রেংথের পাওয়া যায়। ডাক্তারের পরামর্শ মতো লাগান।
যাঁদের বলিরেখা পড়ে গিয়েছে, তাঁরাও এই ক্রিম নিয়মিত ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
কেমিক্যাল পিলিং: চল্লিশ পেরলেই মুখ জৌলুসহীন হয়ে পড়ে। কালচে ছোপ আর সূক্ষ্ম রেখা থেকে মুক্তি দেয় কেমিক্যাল পিলিং। বাইগ্লাইকোলিক অ্যাসিড নির্দিষ্ট মাত্রায় দিয়ে এই ট্রিটমেন্ট হয়। কার কতটা মাত্রায় লাগবে, তা ত্বক বিশেষজ্ঞ ঠিক করেন। ১৫ মিনিট সময় লাগে। এতে খুব দ্রুত ফ্রেশ লুক আসে। নিয়মিত করালে ত্বকের বয়স বাড়বে ধীর গতিতে। তবে এই ট্রিটমেন্ট বিউটি পার্লারে করাবেন না। হিতে বিপরীত হতে পারে।
মাইক্রোডারমাব্রেশন: যাঁদের বলিরেখা পড়েছে, মেচেতা কালো ছোপ পড়েছে তাঁরা এটিতে ভালো ফল পাবেন। একটি যন্ত্রের সাহায্যে অ্যালুমিনিয়াম ক্রিস্টাল দিয়ে ত্বক বিশেষজ্ঞ এই ট্রিটমেন্ট করেন। আধ ঘণ্টা সময় লাগে। এতে খুব তাড়াতাড়ি উপকার মেলে।
বোটক্স ট্রিটমেন্ট: যাঁদের খুব বেশি রিংকলস হয়ে গিয়েছে, তাঁরা এটি করাতে পারেন কোনও ত্বক বিশেষজ্ঞকে দিয়ে। ৬ মাস অন্তর এটি করাতে হয়। তবে এটিও বিউটি পার্লারে করালে বিপদে পড়বেন।
পুষ্টিই আসল প্রসাধনী।
ব্যালেন্সড ডায়েট ত্বকের বয়স ধরে রাখে বহু দিন। কোনও প্রসাধনী বা ট্রিটমেন্ট যা পারে না, সুষম খাদ্য তা পারে অনায়াসে। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট তো চাই-ই, সেই সঙ্গে চাই ভিটামিন মিনারেলস। এতে ত্বক চুল দুই-ই স্বাস্থ্যোজ্জ্বল থাকবে। শাকসব্জি, ফলমূল খেতে হবে। দিনে অন্তত ৪ লিটার জল খাবেন। ভাজাভুজি, ফাস্ট ফুড যত কম খাবেন, ত্বক তত ঝলমল করবে।
পার্লার ভালো হওয়া চাই
বিশ্বাসযোগ্য বিউটি পার্লারে যাবেন। অভিজ্ঞ বিউটিশিয়ান না হলে ফেসিয়াল মাসাজ যথাযথ হবে না। ত্বক ঝুলে যাবে আরও।