প্রেম-প্রণয়ে কিছু নতুনত্ব থাকবে যা বিশেষভাবে মনকে নাড়া দেবে। কোনও কিছু অতিরিক্ত আশা না করাই ... বিশদ
ট্যাটুর ট্রেন্ড
সুপ্রাচীম মমির দেহাংশে ট্যাটুর অস্তিত্ব প্রমাণ করেছে এই দেহ-শিল্প আজকের তো নয়ই, বরং বহু শতাব্দী ধরে চলে আসা একটি প্রথা। তবে তার ধরন পাল্টেছে, আকৃতিগত রূপান্তর ঘটেছে অনেকটাই। এখন কারও কাছে ট্যাটু শুধু একটা নকশা। তবে বেশিরভাগ ট্যাটুবিলাসীর কাছেই এটা স্পেশাল ব্যাপার। বিশেষ কোনও মানুষকে মনে রেখে তাঁকে দেহপটে স্থান দিয়ে অমূল্য করে রাখা। কখনও আবার ব্যক্তি মানুষ নয়, ঈশ্বরই আরাধ্য। কখনও সেটা এমন একটা চিহ্ন যা বিশেষ কোনও জায়গা বা অভিজ্ঞতার দ্যোতক। সেলিব্রিটি থেকে সাধারণ মানুষ, ট্যাটুর মোহে পড়েছেন সকলেই। কেউ ট্যাটু উৎসর্গ করেছেন নিজের বাবা, স্ত্রী অথবা প্রেমিককে। কেউ আবার মজেছেন তার মনলোভা শিল্পসৌকর্যে। তবে ট্যাটুর মধ্যে কোনও ব্যক্তির নাম লিখে পরে ফ্যাসাদে পড়েছেন, এমন নজিরও কম নেই। অর্থাৎ পরে সেই ব্যক্তি যখন আর কাছের কেউ হয়ে রইলেন না, তখনই ঘটেছে বিপদ।
খোঁজ কীভাবে
কথা হচ্ছিল এ শহরের প্রথম মহিলা ট্যাটু আর্টিস্ট তুহির সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘এক একজন মানুষের পছন্দ এক একরকম। সেটাই স্বাভাবিক।’ দশ বছর আগে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি, ‘তখনও পর্যন্ত অন্তত এ শহরে ট্যাটু বলতে মা, বাবার নাম লেখা বা একটা হার্ট শেপ এঁকে নেওয়া— এরকম ট্রেন্ডই ছিল। ট্যাটু শিল্পীর সংখ্যাও কম ছিল।’ তুহি নিজেই কোনও মহিলার কাছে ট্যাটু করানোর কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু খুঁজে দেখেছিলেন, সেই সময় শহরে মহিলা ট্যাটু আর্টিস্ট নেই। তবে এখন ছবিটা পাল্টেছে। যাঁরা ট্যাটু করাতে আগ্রহী, তাঁরা রীতিমতো ইন্টারনেটে রিসার্চ করে তবেই শিল্পীর কাছে আসেন বলে জানালেন তিনি। কোন ট্যাটু স্টুডিওর রিভিউ কেমন, সেটা আগে থেকে দেখে নেন অনেকে।
পছন্দ বেছে নেওয়া
যেহেতু শরীরে এটা সারা জীবন রেখে দেওয়ার জন্যই করা, সেক্ষেত্রে এমন কিছু নকশা বেছে নেওয়া উচিত, যেটা নিজের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এমন পরামর্শই দিচ্ছেন ট্যাটু আর্টিস্ট। ‘কেউ নিজের জন্মতারিখ অনুযায়ী সেই সানসাইন বেছে নিতে পারেন। কেউ মা-বাবাকে মনে রেখে কিছু করতে পারেন। মা-বাবা তো কখনওই দূরের কেউ হয়ে যাবেন, এমন আশঙ্কা নেই। তাই তাঁদের নাম বা তাঁদের জড়িয়ে অন্য কোনও প্রতীক করালে আফশোসের কোনও ব্যাপার নেই।’ বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার ডানহাতে কব্জির কাছে ট্যাটুতে যেমন লেখা রয়েছে, ‘ড্যাডিজ লিটল গার্ল।’ আর এক জনপ্রিয় অভিনেতা অক্ষয় কুমার আবার তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লিখিয়েছেন স্ত্রীর ডাকনাম (টিনা) এবং পুত্রকন্যাদের নাম। অর্জুন কাপুরের হাতে লেখা, মা। সইফ আলি খানের বাঁ হাতে প্রিয়তমা পত্নী করিনার নাম খোদাই করা। যা দেখে খুদে পুত্র তৈমুর সইফকে মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন করে, আর তিনি সলজ্জ হেসে বলেন, ‘ওটা তোমার আম্মার নাম।’ এইরকম ভালোলাগার অনুভূতিই জড়িয়ে থাকে ট্যাটুর সঙ্গে। কম যান না ভারতের ক্রিকেট অধিনায়ক বিরাট কোহলিও। তাঁর দেহে এখন ট্যাটুর সংখ্যা ১১ ছুঁয়েছে। আলিয়া ভাটের ঘাড়ের কাছে হিন্দিতে লেখা ‘পটাকা’ আর তাঁর প্রেমিক রণবীর কাপুরের ডান হাতে হিন্দিতে লেখা ‘আওয়ারা।’ একাধারে নামগুলো তাঁদের মেজাজের সঙ্গে তো মেলেই। আবার রণবীরের ক্ষেত্রে ওটা তাঁর দাদুর ছবির নামও বটে।
ট্রেন্ড মানলে বিপদ
‘কখনও ট্রাইবাল আর্ট, কখনও হাইপার রিয়ালিজম, কখনও মাওরি ট্যাটু—এমন অনেক কিছুই চলতে থাকে ট্যাটুর ট্রেন্ড হিসেবে। কিন্তু সবসময়ে সেই ট্রেন্ডের পিছনে দৌড়লে বিপদ,’ তুহি বলছেন সেটাই। তাঁর মতে, এটা যদি সারাজীবন থেকে যায় শরীরে, তাহলে ট্রেন্ড যখন থাকবে না, তখন মনে হবে, কী লাভ হল এটা করে? তুহি যখন স্টুডিও শুরু করেন, তখন শিবের ট্যাটু খুব জনপ্রিয় ছিল। এখনও আছে। তবে সেই সময় একটু বেশি হইহই হচ্ছিল সেটা নিয়ে। অজয় দেবগণের মতো শিব-ভক্ত তারকা ঈশ্বরকে স্থান দিয়েছিলেন বুকে। সঞ্জয় দত্তেরও শিব সংক্রান্ত ট্যাটু আছে। শিব বলতে শুধু তাঁর প্রতিকৃতি নয়, জনপ্রিয় ত্রিশূল বা চোখও। মেয়েদের মধ্যে অনেকে পছন্দ করেন স্বামী বা বয়ফ্রেন্ডের নাম। তবে তুহির পরামর্শ, দুম করে একটা ট্যাটু করিয়ে না ফেলে ভাবনাচিন্তা করে এগনো উচিত। হঠাৎ একটা ডিজাইন পছন্দ করে ট্যাটু করে ফেলে তারপর এক-দু’বছরের মধ্যে সেটা আর ভালো লাগল না। তুহির কাছেই এমন অনেকে এসেছেন। তখন পুরনো ট্যাটুকেই আদল পাল্টে অন্য রকম করে এঁকে দিয়েছেন তিনি। দীপিকা পাড়ুকোনকে ঘিরে ট্যাটু-বিতর্কটা মনে করুন। ঘাড়ের কাছে প্রাক্তন প্রেমিক রণবীর কাপুরের নামের আদ্যক্ষর ‘আর কে’ লেখা ছিল। রণবীর সিং-এর সঙ্গে বিয়ের পরে সেটা নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়। দীপিকা ‘আর’ অক্ষরটি রেখে পরবর্তীকালে ‘কে’-র নীচে ফুলের আদল করিয়ে নিয়েছিলেন। এমন সমস্যার কথা ভেবেই আগে থেকে চিন্তা করে ট্যাটু নিয়ে এগতে বলছেন ট্যাটু শিল্পীরা।
প্রথমবারের অভিজ্ঞতা
প্রশ্ন করেছিলাম, উৎসাহ যতই থাক, যন্ত্রণার ভয় পান না কেউ? বিশেষ করে প্রথমবার যাঁরা আসেন, তাঁদের কীভাবে সামলান ট্যাটু শিল্পীরা? তুহি জানালেন, প্রথমবার শরীরে আঁকিবুকি কাটানোর জন্য অনেকেই তাঁকে পছন্দ করেন। এক এক শিল্পীর হাতের ছোঁয়া এক এক রকম। এক্ষেত্রে তুহি কিছুটা নরমপন্থী। তাই তাঁর কাছে অনেকেই আসেন প্রথমবারের জন্য। প্রথমে কেউ এলে তিনি বলে দেন, ‘চেষ্টা করবেন গোড়ার দিকে একটা ছোট কোনও নকশা করানোর। প্রথমে এমনিতেই ভয় থাকে। ট্যাটুর সঙ্গে যন্ত্রণা হবেই। কিন্তু ছোট আকৃতির কিছু করালে এবং সেটা হাতে করালে ব্যথার সঙ্গে কিছুটা অ্যাডজাস্ট করা যায়। হাতে অনেক সময়েই আমরা ছোটখাট কাটাছেঁড়ায় অভ্যস্ত। মানসিকভাবে কিছুটা যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়। তাই হাতে ট্যাটুর জন্য সূচ ফোটালেও অতটা ব্যথার অনুভূতি হয় না। তারপর তো চামড়ায় কতটা সহ্য হচ্ছে, সেটাও দেখার বিষয়। প্রথম পাঁচ মিনিট ঠিক ব্যথা নয়, একটা জ্বালাধরা অনুভূতি হয়। মহিলারা বুঝবেন, আইব্রাও করার সময় যেমন একটা হাল্কা জ্বালা হয়, কিছুটা তেমন অনুভূতি।’ তবে সেটা এমন ব্যথা বা জ্বালা নয়, যে কেউ ট্যাটু পুরোটা না করিয়ে চলে এসেছেন, জানালেন তুহি। আর তাছাড়া প্রথমবার ট্যাটু আর্টিস্টও একটু ধীরেসুস্থে কাজটা করলেই ভালো। প্রয়োজনে ক্লায়েন্টের সঙ্গে গল্প করা, তাঁকে টেনশন না দিয়ে হাল্কা মেজাজে রাখা, তাঁর কখনও অসুবিধা হলে সেটা বুঝে তখনকার মতো থেমে গিয়ে কিছুক্ষণ পরে আবার কাজটা শুরু করলে অনেকটাই সহজ হয় কাজটা। ছোট মোটিফ পাঁচ মিনিটেও হয়ে যায়, যদি কেউ ব্যথায় সেভাবে কষ্ট না পান।
করোনার সময় ট্যাটু
এই সময় সতর্ক হয়েই কাজ শুরু করেছেন বলে জানালেন তুহি। তাঁর সল্টলেকের স্টুডিওর পরিবর্তে দমদমের বাড়িতেই এখন কাজ করছেন। দিনে একটার বেশি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিচ্ছেন না। স্যানিটাইজেশনের সব দিক ভালো ভাবে খেয়াল রাখছেন। এক দিন আগে থেকে ক্লায়েন্টদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিচ্ছেন। তাঁরা আসার আগেই নিয়ম মেনে সব কিছু স্যানিটাইজ করার কাজ সেরে রাখছেন। তাছাড়া, ক্লায়েন্টদেরও মাস্ক-স্যানিটাইজার মাস্ট, বলে দিয়েছেন তিনি। ট্যাটু করানোর সময় অনেকের সুগার ফল করার সম্ভাবনা থাকে। তাই নিজের জন্য জল ও মিষ্টি জাতীয় কিছু সঙ্গে আনার পরামর্শও তিনি দিচ্ছেন। ক্লায়েন্টের নিরাপত্তার কথা ভেবেই। এর পাশাপাশি যাঁরা অনেক দিন আগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে কারও হয়তো ট্যাটু করাতে আসার আগের দিন কোনও শারীরিক অসুস্থতা হল। তাহলে সেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট পরে নেওয়ার কথা বলছেন। তাঁর নিজেরও শারীরিক অসুবিধা হলে সেদিনের কাজ বাতিল করে দিচ্ছেন। কাজের সময় মাস্ক, হেড গিয়ার, এপ্রন পরছেন। স্টেরিলাইজ করার ফিউম দিয়ে কাজের জায়গা জীবাণুমুক্ত করছেন। তুহির মতে, সাধারণত সব নামকরা ট্যাটু স্টুডিওয় এমনিতেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার দিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখন সেটা আরও বেশি করে হচ্ছে।