বাড়িতে আছেন বলে ত্বকের যত্ন নেওয়ার কথা ভুললে চলবে না। নিয়মমাফিক ত্বকের সঠিক যত্ন না নিলে তা রুক্ষ হয়ে যাবে। তাই ঘরোয়া প্যাক দিয়েই ত্বকের পরিচর্যা বা ফেসিয়াল করুন, জানালেন বিউটি থেরাপিস্ট এবং স্কিন এক্সপার্ট শাহনাজ হুসেন। তাঁর সঙ্গে কথা বললেন কমলিনী চক্রবর্তী।
 ঘরোয়া ফেস প্যাক কি আদৌ উপকারী?
 অবশ্যই উপকারী। যখন তাজা ও প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে ফেস প্যাক বানানো হয়, তখন তাতে ত্বক ভালো থাকে। তবে ত্বক বিশেষে প্যাক কিন্তু আলাদা। তাই নিজের ত্বকের ধরন জেনে নেওয়া জরুরি। ঘরোয়া উপকরণগুলোর বিভিন্ন ধরন। কোনওটা ত্বক ভিতর থেকে পরিষ্কার করে। কোনওটা ত্বক আর্দ্র রাখে। অতএব কোন ফেস প্যাক ব্যবহার করবেন, তা জেনে বুঝে করুন। ঘরোয়া ফেস প্যাকে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। ফলে তা অল্প বয়স থেকেই ব্যবহার করা যায়।
 ঘরোয়া ফেস প্যাক কত দিন অন্তর মুখে লাগানো উচিত?
 প্যাক অনুযায়ী লাগানোর ধরন ভিন্ন। ফ্রুট প্যাক যেমন রোজ লাগাতে পারেন। তবে সাধারণত ঘরোয়া ফেস প্যাক সপ্তাহে দু’বার লাগানোই যথেষ্ট।
 তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপযুক্ত ফেস প্যাক কী?
 মুলতানি মাটি ত্বকের অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব দূর করে। তাই তৈলাক্ত ত্বকের জন্য মুলতানি মাটি দিয়ে তৈরি প্যাক সবচেয়ে উপযুক্ত। এই মাটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে নেয়। ২-৩ চা চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে পরিমাণ মতো গোলাপ জল মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করে নিন। তারপর তা চোখ বাদে গোটা মুখে সমান ভাবে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলবেন। এই প্যাক ত্বক নরম ও মসৃণ করবে। এছাড়া অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ২ চা চামচ বেসন, পরিমাণ মতো দই আর ১ চিমটে হলুদ দিয়েও ফেস প্যাক বানাতে পারেন। এই প্যাক মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলবেন। সপ্তাহে দু’বার লাগালে এক মাসের মধ্যেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
 শুষ্ক ত্বকের জন্য উপযুক্ত প্যাক কী?
 ১ চা চামচ মধুর সঙ্গে ১ চা চামচ আমন্ড তেল মিশিয়ে নিন। তাতে ১ চা চামচ গুঁড়ো দুধ মেশান। এবার এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। গুঁড়ো দুধ ত্বক নরম করে আর আমন্ড তেল ও মধু শুষ্ক ত্বকে পুষ্টি জোগায়। ত্বক হয়ে ওঠে তরতাজা।
শুষ্ক ত্বকের জন্য একটা ভালো ফ্রুট প্যাকও রয়েছে‌— ১টা অ্যাভোকাডো কুরে নিন। তার সঙ্গে ১ চা চামচ অলিভ অয়েল মেশান। এতে অল্প দই ও ১ চা চামচ মধু মেশান। এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। অ্যাভোকাডোতে বিভিন্ন ভিটামিন ও ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা ত্বকের পক্ষে খুবই ভালো। এতে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ে। আর দই ত্বকের পিএইচ ব্যাল্যান্স ভালো রাখে। মধু ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে।
 সাধারণ ত্বকের জন্য কেমন প্যাক লাগানো দরকার?
 ২ চামচ গমের ভুসি, ১টা ডিমের সাদা আর ১ চা চামচ আমন্ড গুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। তাতে অল্প মধু ও পরিমাণ মতো দই মেশান। ডিমের বদলে গোলাপ জল মেশাতে পারেন। এই প্যাক মুখে লাগিয়ে আধ ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। গমের ভুসি ও আমন্ড ত্বকের মৃত কোষ দূর করে। মধু ও ডিম ত্বকে পুষ্টি জোগায় এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
 ব্রণর সমস্যা থাকলে কেমন প্যাক উপযুক্ত?
 ১ চা চামচ চন্দন বাটার সঙ্গে ২ চা চামচ মুলতানি মাটি মেশান। তাতে পরিমাণ মতো গোলাপ জল দিন। এই পেস্ট ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া নিমের প্যাকও ব্রণর জন্যও উপকারি। সেক্ষেত্রে ১ মুঠো নিম পাতা ৪ কাপ জলে দিয়ে ফোটান। তারপর তা ৮ ঘণ্টা ঠান্ডা করুন। এরপর জল ছেঁকে নিমপাতা বেটে নিন। নিমপাতা বাটা, জল ও মুলতানি মাটি দিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগান। ব্রণর ক্ষেত্রে এই প্যাক অনবদ্য। নিমপাতায় সালফার থাকে যা ব্রণ সারাতে সাহায্য করে।
 ডার্ক সার্কল দূর করার জন্যও কোনও নির্দিষ্ট ফেস প্যাক আছে কি?
 অবশ্যই আছে। চোখের নীচে ডার্ক সার্কল থাকলে শসার রসের সঙ্গে অল্প মধু মিশিয়ে তা চোখের চারপাশে লাগান। মিনিট ১৫ রেখে ধুয়ে ফেলুন। রোজ লাগালে অচিরেই ফল পাবেন। এছাড়া জাফরান দুধে ভিজিয়ে রেখে দিন। ২০ মিনিট বাদে এই মিশ্রণে শসার রস ও আলুর রস মেশান। এই মিশ্রণ চোখের চারপাশে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। চোখ উজ্জ্বল হবে এবং ডার্ক সার্কল দূর হবে।
 ত্বককে ভাঁজ পড়া বা তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচানো কীভাবে সম্ভব?
 ত্বক তরতাজা বা রিঙ্কল ফ্রি রাখতে গেলে তার সঠিক যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। অ্যান্টি এজিং ফেস প্যাক বাড়িতে সহজেই বানানো যায়। ২ চা চামচ তিল গুঁড়ো করে নিন। তার সঙ্গে ১ চা চামচ করে আমন্ড গুঁড়ো, মধু, দই ও ডিমের কুসুম মেশান। একটা পেস্ট তৈরি হলে তা মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। তারপর আঙুলের ডগা দিয়ে মাসাজ করে ক্রমশ ত্বকের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। মিশে গেলে ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে বলে তা ত্বকের পক্ষে খুবই উপকারী।
 স্কিন ট্যান দূর করতে কেমন প্যাক ব্যবহার করা উচিত?
 অল্প হলুদের সঙ্গে ২ চা চামচ বেসন আর ২-৩ চা চামচ দই মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে লাগালে ট্যান চলে যাবে। শসা কুরে তার সঙ্গে ২ চা চামচ গুঁড়ো দুধ আর একটা ডিমের সাদা মিশিয়ে পেস্ট বানিয়েও লাগাতে পারেন। স্কিন ট্যান নিমেষে দূর হবে। তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে গুঁড়ো দুধের বদলে মুলতানি মাটি মিশিয়ে নিন। এছাড়া ১ টেবিল চামচ গমের ভুসির সঙ্গে ১ চা চামচ করে কমলা লেবুর খোসা বাটা ও দই এবং ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে লাগাতে পারেন। স্কিন ট্যান চলে যাবে। এই ধরনের প্যাক শুধু মুখেই নয়, ঘাড়ে, গলায়, হাতে পিঠেও লাগানো যায়। স্কিন ট্যান তাড়াতে এই ধরনের প্যাক রোজ ব্যবহার করা যায়।