প্রেম-প্রণয়ে কিছু নতুনত্ব থাকবে যা বিশেষভাবে মনকে নাড়া দেবে। কোনও কিছু অতিরিক্ত আশা না করাই ... বিশদ
‘শকুন্তলা দেবী’ ছবির প্রোমোশনে বিদ্যা বালনকে দেখা গিয়েছিল লাল কালোর মিলমিশে তৈরি বাংলার তাঁতে বোনা একটি এক্সক্লুসিভ শাড়িতে। হলুদ কালো ডোরা কাটা বাঘ রাজসিক ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে জমি জুড়ে। বোঝা গিয়েছিল কোনও জামদানি শিল্পী এই শাড়ি বুনেছেন। কিন্তু কার ডিজাইনে? খোঁজ করতে করতে পৌঁছে গিয়েছিলাম ডিজাইনার দেবযানী রায়চৌধুরীর স্টুডিওতে। সে যেন এক অবাক পৃথিবী। কথা হচ্ছিল দেবযানীর সঙ্গে।
• বিদ্যা বালন কী করে আপনার ডিজাইনে তৈরি এই শাড়ি পেলেন?
•• জানুয়ারি মাসে মুম্বইতে একটি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানেই প্রোডাকশন হাউসের কেউ এসেছিলেন। তাঁরা নানান শাড়ির ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং আমার কার্ড নিয়ে গিয়েছিলেন। হঠাত্ রাতে ফোন আসে। তাঁরা জানান রয়াল বেঙ্গল টাইগার মোটিফের বাংলার তাঁতে বোনা শাড়িটি বিদ্যার পছন্দ হয়েছে। নতুন ছবির প্রোমোশনে পরতে চান। সঙ্গে সঙ্গে এক্সপ্রেস কুরিয়ারে শাড়িটা পাঠিয়ে দিতে হয়েছিল।
• আপনার প্রতিটা শাড়িই দেখছি অন্যরকম। কত দিন এসেছেন এই প্রোফেশনে?
•• আগামী ৭ অক্টোবরে তিন বছর পূর্ণ করবে আমার ‘ঘুড়ি’। আমি একেবারেই অ্যাকাডেমিক কেরিয়ারের মানুষ। বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজ থেকে জুলজিতে এমএসসি, এমফিল করেছি। সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে বিএড করে স্কুলে পড়াতাম। খুব একঘেয়ে লাগত। জব স্যাটিসফ্যাকশন ছিল না। মেয়ে হওয়ার পর চাকরি ছেড়ে দিলাম। নিজের মনের মতো কিছু করার কথা ভাবলাম। আমার দিদিমা, মা খুব ক্রিয়েটিভ মানুষ। মামা, দাদু আর্টিস্ট ছিলেন। আর্টের অনেক বই ছিল বাড়িতে। ছোটবেলা থেকে বইগুলো দেখতাম। নিজেও আঁকতাম। এগুলোই আমাকে নতুন প্রোফেশনে আসতে প্রেরণা দিয়েছে।
• জামদানি বুটি দিয়েই কি কাজ শুরু?
•• না। প্রিন্ট দিয়ে কাজ শুরু। তখন অনেক কিছু বুঝতাম না। লন্ডন থেকে একজন আমাকে বলেছিলেন এমন একটা শাড়ি তৈরি করে দিতে যাতে সত্যজিত্ রায়ের সব ছবির নায়িকা থাকেন। ফোটোগ্রাফকে প্রিন্টে আনতে অনেক টাকা খরচ করে স্ক্রিন করাই। খাদি কটনে শাড়িটা করেছিলাম। খুব কদর করেছিলেন সবাই। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই দেখলাম ডিজাইনটা নকল হয়ে বাজারে ছেয়ে গিয়েছে। তিনশো টাকার মলমলে ওই প্রিন্ট দেখে খুব কষ্ট হতো। বুঝলাম শ্রীরামপুরে যেখানে স্ক্রিন করিয়েছিলাম সেখান থেকেই নকল হয়েছে। তখনই ঠিক করলাম নিজের প্রিন্ট ইউনিট করব। এখন নিজের ডিজাইনে স্ক্রিন তৈরি করিয়ে নিয়ে আসি নিজের ওয়ার্কশপে।
• আর ব্লকপ্রিন্ট করেন না?
•• অবশ্যই। একজন অভিজ্ঞ ব্লক আর্টিস্ট আছেন যিনি আমার ডিজাইনে আমার জন্য ব্লক তৈরি করেন। ওঁর কাছে অনেক কিছু শিখেছি। আমি বেশিরভাগ সময় দু’তিনটে স্ক্রিন মিলিয়ে মিশিয়ে প্রিন্ট করি। তার সঙ্গে ব্লকের কাজও থাকে। আমার ক্যালেন্ডার, সাউন্ড অফ মিউজিক, টিনটিন — এই সব থিমের শাড়ি সবাই পছন্দ করেন। সিটি সিরিজের শাড়িও অলটাইম হিট। মুম্বই, কলকাতা, দিল্লির স্কাই লাইন প্রাধান্য পেয়েছে। পুজোর জন্য নবদুর্গা, মা দুর্গার থিমে প্রিন্ট হচ্ছে। সঙ্গে আলপনার আদলে পাড়।
• জামদানি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কবে শুরু?
•• বছর তিনেক হল। আমার মনে হয়েছিল আমাদের তাঁতশিল্পীরা এত দক্ষ এবং শিল্পবোধসম্পন্ন, তাই তাঁরা আমার দেওয়া ডিজাইন নিশ্চয়ই
বুনতে পারবেন। পারছেনও। শুধু পশু পাখি ফুল নয়, ভ্যানগগের পেন্টিং হুবহু বুনেছেন শাড়ির আঁচলে। দু’জন মহিলা শিল্পী আমার এই কাজটি করেন।
• পরের পরিকল্পনা কী?
•• আমার যা কিছু কাজ সবই
হয় বাংলার তাঁতে বোনা খাদিতে, মসলিন কটনে, বাফতায়। বেগমপুর আর ফুলিয়ায় কাজ করাই। এতে শিল্পীরা উপকৃত হন। আমাদের বাংলার ঐতিহ্য ব্যাপ্তি পায় দেশে বিদেশে। তাই ডিজাইন যা-ই করি না কেন, হাতে কাটা সুতোয় তৈরি হাতে বোনা বাংলার তাঁতকে ক্যানভাস করেই পাড়ি দিতে চাই আগামীতে।