পরিবারের কোনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির স্বাস্থ্য সমস্যায় বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। পেশাদারি কাজকর্মে হঠাৎ বাধা আসতে পারে। ... বিশদ
কোভিডের সময় থেকে ধরলে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে রাজ্যে কেন্দ্রের শাসক গেরুয়া শিবিরের তৈরি জেলা, ব্লক থেকে শুরু করে রাজধানীর কেন্দ্রস্থল— সবমিলিয়ে প্রায় ৩০০ অট্টালিকাই প্রমাণ করছে ‘আচ্ছে দিনটা’ আসলে কার? এক দশক আগের প্রতিশ্রুতি মেনে ১৫ লাখ টাকা ভোটারের পকেটে ঢোকেনি। বছরে দু’কোটি চাকরি হয়নি আম জনতার। নোটবাতিল আর জিএসটি জীবন তছনছ করে দিয়েছে। মধ্যবিত্ত নাকাল মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায়। কিন্তু ফুলে-ফেঁপে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে কাদের? মোদিজি ক্ষমতায় আসার আগে বিজেপি’র বার্ষিক আয় ছিল ৯৭০ কোটি। ২০১৯-২০ সাল নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬২৩ কোটি টাকা। এই বৃদ্ধি প্রায় চারগুণ। যে কোনও কর্পোরেট সংস্থার পক্ষেও এই পরিসংখ্যান নিঃসন্দেহে ঈর্ষণীয়। জানা নেই এটাই সব কি না? নাকি গুপ্তধনের একটি বিন্দু মাত্র! সাগরের আরও দেখা বাকি। দলের অন্যতম স্তম্ভ সরকারের মুখ অমিত শাহ ২০১২ সালে যে এফিডেভিট পেশ করেছিলেন তাতে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১২ কোটির কাছাকাছি। সাতবছর পর ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয় ৪০ কোটির বেশি। অর্থাৎ তিনগুণেরও বেশি। আর চব্বিশের লোকসভা ভোটের আগে সেই সম্পত্তির খতিয়ান আরও বেড়ে হয় ৬৫ কোটি। কোথা থেকে এত বাড়ি-সম্পত্তি হচ্ছে দলের এবং প্রথম সারির নেতাদের, সেই প্রশ্ন করা বারণ! করবও না। ওটাও তো উন্নয়নেরই সূচক! কিন্তু বিকাশ কারও একতরফা অধিকার হতে পারে?
একটি হিসেব বলছে, এই মুহূর্তে দেশে গেরুয়া দলের মোট সম্পত্তি ছুটছে লক্ষ কোটির দিকে। দশ বছরে বিজেপি শুধু দলীয় অফিস নির্মাণেই খরচ করেছে ১২০০ কোটির বেশি। নিশ্চয়ই দিল্লির প্রাসাদগুলির নির্মাণ খরচ এর বাইরে। আর গত দু’টি লোকসভা ভোটে শুধু প্রচারে, বিজ্ঞাপনে সভা সমিতিতে খরচ হয়েছে সওয়া এক লক্ষ কোটির মতো। অধিকাংশ হিসেবই ‘এডিআর’-এর। কেজরিওয়ালের ৪৫ কোটির শিশমহল তো এই খরচের পাশে নস্যি! তবু বেচারা তাতেই ঘায়েল। কে চিৎকার করে বলবে, শিশমহল তো শুধু উনি একা বানাননি! সব পাখিই মাছ খায়, দোষ হয় শুধু মাছরাঙার! শিশমহল এখন বিজেপি’র দখলে, তারা যা খুশি করবে। কিন্তু দেশজুড়ে গেরুয়া বাহিনীর বিশাল দলীয় সম্পত্তি তা তো হাতবদল হওয়ার নয়? দেশের পরিকাঠামোর চেয়েও শাসক দলের ঘর বাড়ি, ব্যাঙ্কে গচ্ছিত সম্পত্তির বিকাশ হচ্ছে দ্রুত গতিতে!
ভয়ঙ্কর প্যান্ডেমিকে দেশের মানুষ যখন অসহায় তার মধ্যেও দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা থেকে শুরু করে অমিত শাহ জেলায় জেলায় পার্টি অফিস খোলার কথা ঘোষণা করেছেন একাধিক সভায়। করতেই পারেন। এতে অন্যায় কিছু নেই। শুরুতে টার্গেট ছিল সাড়ে ছ’শোর মতো বাড়ি-অফিস তৈরির। এখন উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম এবং প্রত্যন্ত উত্তরপূর্ব ভারত ধরে মোট ৮৫০টি বাড়ি তৈরির পথে এগচ্ছে নতুন বিজেপি। ইতিমধ্যেই প্রায় তিনশো অফিস বাড়ির উদ্বোধন হয়েও গিয়েছে। অন্তত এমনটাই জানিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি নাড্ডাজি। আগামী লোকসভা ভোটের আগেই সেই পরিকাঠামো নির্মাণের টার্গেট পূরণ করায় জোর দেওয়া হয়েছে সর্বস্তর থেকে।
মোদি জমানায় দিল্লিতে বিজেপি’র তিন তিনটে বিশালাকার প্রাসাদ গড়ে তোলার পর, এই তালিকায় নতুন সংযুক্তি ঘটতে চলেছে সঙ্ঘ পরিবারের ১২ তলার সর্বাধুনিক আরও তিনটি টাওয়ার। যদিও সঙ্ঘের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে বিজেপি’র যোগ থাকার কথা নয়, তবু এই রমরমা তো কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার সুবাদেই। এই সত্যটা কে অস্বীকার করবে? দিল্লির বুকে ৪ একর জমির উপর তিন তিনটে টাওয়ার, কনফারেন্স হল, প্রত্যেক টাওয়ারে ১২০০ লোক বসতে পারে এমন বিশালাকার অডিটোরিয়াম, বাইরে থেকে আসা সঙ্ঘীদের থাকার জন্য ৩০০ সুসজ্জিত ঘর, মিনি হাসপাতাল, লাইব্রেরি, তিনশো গাড়ি পার্ক করার প্রশস্ত জায়গা। সবমিলিয়ে বলা হচ্ছে ৫ লক্ষ বর্গফুট চোখ ধাঁধানো ফ্লোর স্পেস। খাস রাজধানীর বুকে এসব মাত্র ১৫০ কোটি টাকায় হয়? একটা শিশুও জানে, হয় না। আর রিয়াল এস্টেট ডেভেলপাররা ভয়ে বলুন, ভক্তিতে বলুন নীরবে শুধু মুচকি হাসেন। যেমন আজ থেকে সাত বছর আগে উদ্বোধন হওয়া ঝাঁ চকচকে সাততারা দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের বিজেপি সদর কার্যালয়। আধুনিক রিডিং রুম, কনফারেন্স হল, লাইব্রেরি, পার্কিং এরিয়া, দলের নেতাদের গুরুত্ব অনুযায়ী এক একটি তলায় আলাদা বসার ঘর। তারই পাশে দিল্লি বিজেপি’র জন্য সংরক্ষিত বহুতলের সবচেয়ে উপরের তলাটা। কার্যকর্তাদের জন্য পৃথক অফিস, ক্যান্টিন, লাইব্রেরি, মিটিং হল, ইন্টিরিয়র ডেকরেশনে পাঁচ হাজার কোটি টাকাও যে নস্যি, তা কে না জানে? নিন্দুকে বলে বাস্তবে খরচ হয়েছে তার চেয়েও ঢের বেশি। বলা হচ্ছে, বিজেপি যেমন পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল, তেমনি এই অফিসটিও গোটা বিশ্বে যে কোনও স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের বৃহত্তম কার্যালয়। এটা আমার কথা নয়, বলেছেন দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অমিত শাহ। নিঃসন্দেহে মাত্র ৪৫ বছরের অভিযাত্রায় একটি দলের পক্ষে এটা কম বড় কৃতিত্ব নয়। কিন্তু ওখানেই থেমে যায়নি। গত লোকসভা ভোটের আগে দিল্লিতে আরও একটি প্রাসাদের উদ্বোধন করেছেন মোদিজি, যার নাম রেসিডেন্সিয়াল অ্যান্ড অডিটরিয়াম কমপ্লেক্স। ক’টা দলের আছে রাজধানীর বুকে এমন একটার পর একটা বহুতল। শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেসের বাড়িটা তো এর পাশে লিলিপুট! দলের ব্যাখ্যা, বাইরের থেকে আসা নেতা কর্মীরা কাজে এলে হোটেলে উঠতে বাধ্য হন। সেই অসুবিধা দূর করতেই এই পেল্লায় বাড়িটি। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক এবং দলের সহ সভাপতিরা ক্লাসও নেবেন তরুণ নেতা কর্মীদের। সর্বত্র থাকছে এযুগের দাবি মেনে আইটি সেলের জন্য পৃথক পরিকাঠামো। ক্ষমতা যেতেই শিশমহল ফেলে যেতে হয়েছে কেজরিকে। দলের সম্পত্তি কিন্তু ক্ষমতা গেলেও দলেরই থাকবে, শিশমহলের মতো কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। কেউ বলবে না, ওখানে গরিবের জন্য দাতব্য চিকিৎসালয় কিংবা স্কুল খুলব।
দিল্লির ঝাণ্ডেলওয়ালায় বর্তমান অস্থায়ী অফিসের অদূরেই তৈরি হচ্ছে, আরএসএসের নতুন অফিস-বাড়ি। যেমন তেমন বাড়ি নয়, সঙ্ঘের শতবর্ষে রাজধানীর অফিস স্থানান্তরিত হচ্ছে এই নতুন ভবনে। আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের নামে পুরো কমপ্লেক্সের নাম রাখা হয়েছে ‘কেশব কুঞ্জ’। ১৯২৫-এ আরএসএস প্রতিষ্ঠার ১৪ বছরের মাথায়, ১৯৩৯ সালে সঙ্ঘ প্রথম নাগপুরের সদর দপ্তরের জন্য নিজস্ব অফিস-বাড়ি নির্মাণ করে। সম্ভবত এবার দিল্লির ‘কেশব
কুঞ্জ’ নাগপুরকেও ছাড়াবে। আলাদা করে তিন বাড়ির নাম ‘প্রেরণা’, ‘উপাসনা’ এবং ‘অর্চনা’ রাখা হয়েছে। ভক্তিভাবের অসামান্য মিশেল যেন। তিন ভবন মিলিয়ে গোটা কমপ্লেক্সের আয়তন পাঁচ লাখ বর্গ ফুট। প্রতিটিতে একশো করে মোট তিনশো ঘর রয়েছে ‘কেশব কুঞ্জে’। আছে ২৭০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। আছে ক্যান্টিন এবং হাসপাতাল। আর আছে ১২০০ লোক বসার ব্যবস্থা সহ তিনটি অত্যাধুনিক অডিটরিয়াম। আরএসএস সূত্রে বলা হয়েছে, সারা দেশ থেকে সংগঠনের কাজে আসা সদস্য, অনুগামীদের কথা বিবেচনায় রেখেই সেখানে তিনশোজনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অফিস কমপ্লেক্সের মধ্যেই তৈরি করা হয়েছে হনুমান মন্দির। আরএসএস সূত্রে জানানো হয়েছে, দিল্লির নতুন অফিস তৈরিতে খরচ জুগিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকরাই। পাঁচ টাকা থেকে কয়েক লাখ পর্যন্ত চাঁদা দিয়েছেন তারা। কিন্তু সিপিএমের স্টাইলে কৌটো নেড়ে এমন পেল্লায় প্রাসাদ হয়? তিন বছর আগে দিল্লির দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে উঠে গিয়েছে বিজেপির জাতীয় সদর দপ্তর। সেই বাড়িতেও পাঁচ লাখ বর্গ ফুট জায়গা রয়েছে। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই পার্টি অফিস না হোটেল! তামিলনাড়ুর কৃষ্ণগিরিতেও এক বিরাট অফিস গড়ে তোলা হয়েছে, যা দেখে বিস্ময় চেপে রাখতে পারেনি দক্ষিণের রাজনৈতিক দলগুলিও। ওড়িশায় প্রায় ৮০ কোটি টাকা খরচে ৩৬টি অফিসের সূচনা হয়েছে। এসব তথ্যই মিলেছে সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিজ এবং এডিআরের রিপোর্টে।
আপনি ১৫ লক্ষ টাকা পাননি। দশ লক্ষ সরকারি পদ ফাঁকা কিন্তু বাজেটে চাকরির কোনও ঘোষণা নেই। স্টার্ট আপকে ঋণ দেওয়ার হাজারো টোপ আছে, কর্মসংস্থানের দিশা নেই। কালো টাকা খতম হয়নি। বাইশ সালে কৃষকের আয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে বলে প্রতিশ্রুতিও ভেসে গিয়েছে। দাম কমানোর দাওয়াই নেই। যথারীতি কৃষকের আত্মহত্যা, পরিযায়ীদের হাহাকার কান পাতলেই শোনা যায়। স্পর্শ করা যায় বেকার যুবকের হতাশা। হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পাশে নিয়ে তিনি ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেনের’ পাল্টা ‘মেক ইন্ডিয়া গ্রেট এগেনের’ শপথ নিলেও আসলে শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে শুধু গেরুয়া দলেরই। সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, বিজেপি এই মুহূর্তে
দেশের ধনীতম দল। জানি না বিশ্বেরও ধনীতম রাজনৈতিক সংগঠন হতে আর কতটা বাকি। দিল্লিতেই অন্তত তিনটি পেল্লায় সাততারা অফিস। আর পুরনো অশোকা রোডের অফিস যেখানে বাজপেয়ি ও আদবানিজি বসতেন, সেটিকে ভোটের ওয়ার রুম ও আইটি সেলের কাজে ব্যবহার করার জন্য নতুন করে গড়ে তোলা হয়েছে। একুশ সালে করোনার অভিঘাতের মধ্যেই গুরগাঁওতে বিজেপি’র এক লক্ষ স্কোয়ার ফুটের অফিস উদ্বোধন হয়।