শেয়ার প্রভৃতি ক্ষেত্র থেকে অর্থাগমের সম্ভাবনা। সন্তানের কর্ম প্রাপ্তির সুখবর পেতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে জটিলতা কিছুটা ... বিশদ
ওদিকে ওড়িশার বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র বলে বসলেন, প্রভু জগন্নাথ হলেন মোদিজির ভক্ত। ভেবে দেখুন, কতটা ঔদ্ধত্য মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হলে তিনি ভাবতে পারেন, ভগবান কোনও মানুষের ভক্ত! পরে সম্বিত ক্ষমা চাইলেও যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গিয়েছে। ওড়িশার মানুষ এর যোগ্য জবাব দিচ্ছেন ভোটবাক্সে। তাঁদের কাছে ভগবান জগন্নাথদেব কতটা প্রাণের ঠাকুর, সেই বোধটুকুও নির্বাচনে ভরাডুবির আশঙ্কায় গেরুয়াবাবুরা হারিয়ে ফেলেছেন।
এই পরিপ্রেক্ষিতে রাজা হিরণ্যকশিপুর গল্প মনে পড়ে গেল। অসুররাজ হিরণ্যকশিপু ছিলেন একজন অতি বলদর্পী রাজা। তিনি নিজেকে ঈশ্বরের থেকেও শক্তিশালী ভাবতে শুরু করেন। ভাই হিরণ্যাক্ষের মৃত্যুর কারণে তিনি বিষ্ণুকে পরম শত্রু বলে মনে করতেন। তাঁর রাজ্যে বিষ্ণুপুজো নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু তাঁর শিশুপুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন পরম বিষ্ণুভক্ত। এজন্য রাজা পুত্রকে হত্যার আদেশ দেন। বারবার চেষ্টা করেও প্রহ্লাদকে মারতে অক্ষম হন রাজা। রাজা এর কারণ জানতে চান। প্রহ্লাদ বলেন, তাঁকে ভগবান বিষ্ণু বারবার বাঁচিয়েছেন। রাজা ক্রুদ্ধ হয়ে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমার বিষ্ণুর অবস্থান কোথায়?’ প্রহ্লাদ বলেন, ‘সর্বত্র।’ রাজা জিজ্ঞাসা করেন, ‘এই বড় স্ফটিকস্তম্ভের মধ্যে তোমার বিষ্ণু আছে?’ প্রহ্লাদ বলেন, ‘হ্যাঁ।’ রাজা লাথি মেরে সেই স্ফটিক স্তম্ভ ভাঙতেই তার মধ্য থেকে বেরিয়ে আসে বিষ্ণুর নৃসিংহ অবতার। রাজা হিরণ্যকশিপুকে নিজের উরুর উপর ফেলে তাঁকে বধ করেন সেই অবতার। আসলে পুরাণের এই সব কাহিনির মধ্য দিয়ে নিজেদের ঔদ্ধত্যকে প্রশমিত করার শিক্ষাই দেওয়া হয়।
সবাই যে সেই শিক্ষা গ্রহণ করেন তা নয়। ক্ষমতার দম্ভে অনেকের মধ্যেই প্রকাশিত হয় এই ঔদ্ধত্য। নরেন্দ্র মোদি যেভাবে নিজেকে ভাবতে শুরু করেছেন, একইভাবে নিজেদের মহাশক্তিমান মনে করতেন বহু শাসকই। পুরাণে দেখি অসুররা নিজেদের ভগবানের থেকেও বড় বলে মনে করতেন। মধ্যযুগের ইতিহাসে এমন অনেক রাজার নাম পাওয়া যায়। আধুনিক যুগে যে শাসকের মধ্যে এই প্রবণতা সবথেকে বেশি ছিল, তিনি হলেন হিটলার।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে মোদির বক্তৃতা একবার দেখুন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি দেশের মানুষের সেবক হতে চাই। আমাকে আপনারা একবার সেবা করার সুযোগ দিন।’ ২০১৯ সালে নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, ‘আমি দেশের চৌকিদার। সবাইকে রক্ষা করা আমার কাজ।’ ২০২৪ সালে এসে বিপাকে পড়ে এখন নিজেকে একজন ‘অবতার’ বলে মানুষের মনে বিশ্বাস সৃষ্টি করতে চাইছেন। সাবিত্রী দেবী মুখোপাধ্যায় নামে এক মহিলা ছিলেন নিও নাৎসিজিমের প্রবক্তা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘হিটলার হলেন বিষ্ণুর অবতার। তিনি এসেছেন কলিযুগে মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে। আসলে নাৎসিজিমের সঙ্গে হিন্দুইজমের ধর্মগত বা দর্শনগত কোনও পার্থক্য নেই।’ সত্যিই কি তাই? আসলে প্রকৃত হিন্দুধর্ম কখনওই বিজেপির হিন্দুত্বের সঙ্গে মেলে না। সেই নিও নাৎসিজমই কি তবে আজ নিও হিন্দুইজমের ভেক ধরে এসেছে?
প্রকৃতপক্ষে হিটলারের মতো এই ধরনের মানসিকতাসম্পন্ন মানুষকে বলা হয় মেগালোম্যানিয়াক। বেশ কিছুক্ষেত্রে ডাক্তারি পরিভাষায় এই ধরনের মানসিকতাকে বলা হয় বলা হয় ডিলিউশন অব গ্র্যাঞ্জার। মূলত যেসব রোগী নিজেদের ভগবানের থেকেও ক্ষমতাসম্পন্ন বলে ভাবতে থাকেন, যাঁদের বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে মানসিক ভারসাম্যের অভাব দেখা দেয়, তাঁদের এই ধরনের রোগী হিসাবে চিহ্নিত করেন চিকিৎসকরা। মানসিক ভারসাম্যের অভাব থেকে এই ধরনের বিভ্রম ঘটে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। চিকিৎসকরা বলেন, এই ধরনের রোগীদের অ্যাসাইলামে রেখে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
এই অবতার তত্ত্বের উপসংহার লিখতে সাধুরা দল বেঁধে পথে নামলেন। তাঁদের একটাই উদ্দেশ্য, ভেঙে পড়া মোদির ভোট বাক্সকে চাঙ্গা করা। কিন্তু তা হওয়ার উপায় নেই। বেশ কয়েকটি ঘটনার পর কারও কারও সাধুত্ব নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে মানুষের মনে। আমাদের দেশে দেখা গিয়েছে বেশ কিছু বিখ্যাত, ধনী গেরুয়া বসনধারী সাধুকে অসামাজিক কাজকর্ম করতে। অবশ্য প্রণম্য সাধু অসংখ্য রয়েছেন। তাহলে আমরা বিচার করব কীভাবে? গেরুয়া বসনের ভেক দেখলেই কি গদগদ হয়ে মাথা নত করব? না, আগে দেখতে হবে, সাধুর মনটা গেরুয়ায় রাঙানো কি না! তিনি ভক্তের জাত, ধর্ম, সম্প্রদায়, অর্থকৌলিন্য দেখেন কি না! আমি বহু গৃহী মানুষের মধ্যে সর্বত্যাগী ভাববৈরাগ্যের সাধুমনস্কতা যেমন দেখেছি, তেমনি বহু সাধুর গেরুয়ার আড়ালে কামিনী কাঞ্চনলোভী ভোগী পুরুষও দেখেছি। আসলে গেরুয়া পোশাকধারী ব্যক্তি মাত্রই যে একজন সৎ এবং দিব্যভাবসম্পন্ন মানুষ হবেন, এটা আদতে একটি মৌলবাদী ভাবনা। তাই কোনও অনৈতিক কারণে কোনও সাধু যখন গ্রেপ্তার হন, তখন তাঁর জন্য জন্য নিশ্চয়ই সমগ্র সাধুকূলের অসম্মান হয় না। কিংবা যখন কোনও সাধুর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে, তখনও সমগ্র সাধু সমাজ অবশ্যই অভিযুক্ত হয়ে যান না। সাধুরা তখন ঐক্যবদ্ধভাবে ‘গেল গেল’ রব করে পথেও
নামেন না। এখন নেমেছেন, তার কারণ পিছনে বিজেপির খোঁচা আছে। এটাকে খড়কুটোর মতো ধরে শেষ ইস্যু করতে চাইছে বিজেপি। সন্দেশখালিকে ইস্যু করা যায়নি, অবতার ধাপ্পা ইস্যু হয়নি, মঙ্গলসূত্র ইস্যু হয়নি, হিন্দুত্ব ইস্যু হয়নি, মুজরোর কুৎসিত ইঙ্গিত ইস্যু হয়নি। কেননা এবারে ভোটের মধ্য দিয়ে মোদিজির কাছে মানুষ তর্জনী তুলে প্রশ্ন
করছেন, চাকরির কী হল, মূল্যবৃদ্ধি দ্বিগুণেরও বেশি কেন হল? বিজেপির মধ্যে দুর্নীতির এত বাড়বাড়ন্ত কেন, অন্যের ঘরে কালো টাকা খুঁজছেন, তাহলে আপনার পার্টির ঘরে এত কালো টাকা কেন? সেসবের উত্তর খুঁজতে মোদিকে দৈব বৈরাগী সাজতে হচ্ছে। হতে পারেন, তিনি মানসিকভাবে সত্যিই একজন বৈরাগী। সেক্ষেত্রে তাঁর যোগ্য স্থান হল রামলালার মন্দির। সেখানে সারাদিন ভজন পূজন নিয়ে থাকুন। এমন মানসিকভাব সম্পন্ন মানুষ দেশের কাণ্ডারী হতে পারেন না।
এবারের নির্বাচনে মোদি কতটা সফল হতে পারবেন, বোঝা যাবে ৪ জুন। তবে অনেকেই বলছেন, ওটাই বিজেপি সরকারের এক্সপায়ারি ডেট। এই পৃথিবীতে এখন মোদিকে রামচন্দ্র, হনুমান, শিবজি, গোমাতা বাঁচাবেন কি? একমাত্র বাঁচাতে পারে ইভিএমের কারসাজি। এছাড়া নেই কোনও পরিত্রাণ!
একটি স্বকপোল কল্পিত নকশা দিয়ে লেখাটা শেষ করি। একদিন স্বর্গলোকে বসে গল্প করছেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। সুভদ্রা বললেন, ‘দাদা, আজ একটা নতুন কথা জানলাম। তুমি নাকি মোদির ভক্ত?’ জগন্নাথ হেসে বললেন, ‘হ্যাঁ মর্তলোকে সবাই আমার ফ্যান, আর আমি মোদির ফ্যান।’ সুভদ্রা বললেন, ‘দাদা, তুমি এই ঔদ্ধত্য সহ্য করলে?’ বলরাম বললেন, ‘সেই কথাটা জানিস তো? তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে!’ জগন্নাথ হেসে বললেন, ‘ওটা ছিল পুরাণতন্ত্রের কথা। এখন গণতন্ত্রে বলে, তোমারে বধিবে যে ইভিএমে বাড়িছে সে!’