অংশীদারি কারবারে মন্দার সম্ভাবনা। যে কোনও কাজকর্মে বাধার মধ্যে উন্নতি। বৃত্তিগত শিক্ষা লাভে বিশেষ সাফল্য। ... বিশদ
করোনাকালে দেশে অর্থনৈতিক অবস্থা যথেষ্ট সংকটে ছিল। সেই পরিস্থিতি কাটাতে সরকারকে আরও বেশি ঋণের দিকে ঝুঁকতে হয়েছিল। কিন্তু তারপরও সরকার রাজকোষ ঘাটতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ সরকার যে খরচ করছে, তার তুলনায় আয়ের মধ্যে অনেকটাই সামঞ্জস্য আনা গিয়েছে। আমেরিকা বা জাপানের মতো বড় অর্থনীতির দেশগুলির সরকারের ঋণের তুলনায় ভারতের অবস্থান তুলনামূলকভাবে অনেকটাই ভালো।
সরকার বিগত কয়েক বছরে পরিকাঠামো খাতে যথেষ্ট ভালো অঙ্কের টাকা খরচ করেছে। আশা করা যায়, সেই ধারাবাহিকতা তারা বজায় রাখবে। যদিও বেসরকারি লগ্নির অঙ্ক এখনও কম। সেই কারণেই রাজ্যগুলি যাতে মূলধনী খাতে খরচ, বলা ভালো কর্মসংস্থান ও পরিকাঠামো সৃষ্টির জন্য খরচ বাড়াতে পারে, সেই দিকে কেন্দ্র নজর বাড়াবে বলেই মনে হয়। পাশাপাশি প্রতিযোগিতার বাজারে যাতে ভারতীয় উৎপাদন শিল্পসংস্থাগুলি আরও ভালো ফল করতে পারে, তার জন্য নতুন নীতি আনতে পারে কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই সরকার যে প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেন্টিভ বা পিএলআই ঘোষণা করেছে, তার ব্যাপ্তি বাড়ানোর পথে হাঁটতে পারে তারা। অনেক শিল্প সংস্থার ক্ষেত্রেই কেন্দ্রের তরফে নেওয়া এই পদক্ষেপটি সদর্থক ভূমিকা নিয়েছে।
বিগত কিছু বছরে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপর সরকার বিশেষ নজর দিয়েছে। কারণ আগামী দশকে লক্ষ লক্ষ যুবক যুবতী কর্মসংস্থানের আশায় এগিয়ে আসবেন। নির্মাণ, পর্যটন বা পোশাক শিল্পের মতো ক্ষেত্রগুলিতে নজর বাড়ানো যেতে পারে। কারণ, এইসব শিল্পক্ষেত্রে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকে। মহিলাদের একটা বড় অংশ কাজের বাজারে যোগ দিতে চলেছেন। তাঁদের জন্যও সুযোগ তৈরি করে দেওয়া দরকার। পাশাপাশি দক্ষ কর্মী তৈরির জন্য দক্ষতা বৃদ্ধি বা স্কিল ডেভেলপমেন্টে জোর দেওয়ার সংস্থান রাখতে হবে বাজেটে।
ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পও বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে আশা করা যায়। কারণ দেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ও রপ্তানির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ এই শিল্পক্ষেত্র। সরকার সেই বিষয়টি এবারের বাজেটে নিশ্চিতভাবেই মনে রাখবে।
জলবায়ুর পরিবর্তন দেশের কৃষিক্ষেত্রে এক বিশেষ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের পাশে দাঁড়াতে সরকার নতুন করে ক্রেডিট গ্যারিন্টি স্কিমে আরও জোর দিতে পারে। কৃষকদের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতিতে সরকার ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি প্রকল্প চালু করেছে। তার অঙ্ক বাড়ালে বাড়তি সুবিধা পাবেন কৃষকরা।
দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে গ্রামের দিকে নজর বাড়াতে পারে সরকার। কৃষি নির্ভর মানুষদের যেমন আর্থিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, তেমনই তুলনামূলক কম রোজগার করেন যাঁরা, তাঁদের আয়করে আরও ছাড় দেওয়া জরুরি। নজর দিতে হবে আবাসন ক্ষেত্রের দিকেও, বিশেষত সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের ক্ষেত্রে। কারণ এই আবাসের চাহিদা বাড়ছে। সরকার গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করতে ইতিমধ্যেই বিবিধ পদক্ষেপ করেছে। ১০০ দিনের কাজের মতো প্রকল্পে আরও জোর দিলে এবং চালু স্কিমগুলিতে তহবিল বাড়ালে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। তাতে আরও চাঙ্গা হবে অর্থনীতি।
আশা করা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের রাজকোষ ঘাটতি জিডিপির ৪.৯ শতাংশে আটকে রাখতে সফল হবে এবং আগামী আর্থিক বছরে তা আরও কমিয়ে আনতে সচেষ্ট হবে। সার্বিকভাবে সরকারের লক্ষ্য হবে ঋণের বোঝা কমানো, পরিকাঠামো খাতে খরচ ও কর্মসংস্থানের সঙ্গে আপস না করেই।
সাধারণ মানুষকে কিছুটা আর্থিক সুরাহা দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। করে কিছু ছাড় ও গ্রামীণ এলাকায় আর্থিক সুবিধা বজায় রেখে সেই সুরাহা দেওয়া যায়। সরকারকে এমনভাবে অর্থনৈতিক সমতা বজায় রাখতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে কিছুটা সুবিধাজনক জায়গায় আসতে পারেন, আবার দীর্ঘমেয়াদে সম্পদ সৃষ্টি হতে পারে, যা থেকে ভবিষ্যতের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। মোট কথা, বাজেটে আমরা আশা করতে পারি, সরকার আর্থিক বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান তৈরি ও পরিকাঠামো তৈরির উপর জোর দেওয়ার বিষয়টি ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাবে।
আর্থিক সমতা বজায় রাখার দিকটিও গুরুত্ব পাবে। সরকার সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে গ্রাম ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির আর্থিক সমৃদ্ধির পথে সচেষ্ট হবে। বাজেটের মাধ্যমে, দীর্ঘমেয়াদে ভারত সুষ্ঠু ও আরও শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে উঠে আসতে সক্ষম হবে, এই আশা রাখতেই পারি আমরা।