আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সমাগমে আনন্দ বৃদ্ধি। চারুকলা শিল্পে উপার্জনের শুভ সূচনা। উচ্চশিক্ষায় সুযোগ। কর্মক্ষেত্রে অযথা হয়রানি। ... বিশদ
আমি বিষয়টির উল্লেখ এই কারণে করলাম যে, এমন একটা ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করা হছে যেন কেন্দ্র, কোভিড সংক্রমণের প্রথম ঢেউ মোকাবিলা করার পর নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। এবং, কয়েক মাস ধরে পুরো বিষয়টি শুধু রাজ্যগুলির উপর ছেড়ে দিয়েছে। এটা সত্যের অপলাপ মাত্র। স্বাস্থ্য যদিও রাজ্যের আওতাভুক্ত বিষয়, তবু কেন্দ্রীয় সরকার কোভিড ব্যবস্থাপনার জন্য সবসময়ই সক্রিয় রয়েছে। কারণ, এই মহামারীকে নিয়ন্ত্রণ করতে জাতীয় স্তরে সমন্বয় ও সম্পদ দু’য়েরই প্রয়োজন। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে রাজ্য সরকারগুলিকে শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় সাহায্য ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রক ২০২০-র ফেব্রুয়ারি থেকে পরিস্থিতির উপর নজর রেখে চলেছে। রাজ্যগুলির প্রস্তুতি, তাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য এবং রাজ্য স্তরে ও জেলা স্তরে কী ধরনের কৌশল নেওয়া হয়েছে, প্রতিটি বিষয়কে কেন্দ্র গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে।
কেন্দ্রের কোভিড ব্যবস্থাপনা শুধুমাত্র নতুন দিল্লি থেকে কিছু পরামর্শ বা নীতি নির্দেশিকা দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বহু সময়েই সাহায্যের জন্য উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। রাজ্যগুলির প্রস্তুতি গ্রহণে সাহায্য ও পরামর্শ দিয়েছে তারা। প্রভূত সাহায্য ও পরামর্শ দিয়েছে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণেও। কেন্দ্রের সবসময়ের লক্ষ্য সংক্রমণে দ্রুত ইতি টানা। ২০২০-র সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত ৭৫টি উচ্চ পর্যায়ের দল পাঠানো হয়েছে। এই দলগুলির দেওয়া রিপোর্টের ফলে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে তথ্যের ক্ষেত্রে অসংলগ্নতা কমেছে। রাজ্যগুলির প্রস্তুতি ও বিভিন্ন কৌশল গ্রহণের ক্ষেত্রে কোথায় ফাঁক থেকে যাচ্ছে, সেগুলি শনাক্ত করতে সুবিধে হয়েছে।
তাহলে এটা বলা যায় কি, বর্তমানে যে ঢেউ শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার সেই বিষয়ে উদাসীন ছিল? আমরা যদি সময় সারণির দিকে নজর রাখি তাহলে বুঝতে পারব একদম প্রথম থেকেই কেন্দ্র কীভাবে বিষয়টির উপর নজর রেখেছিল।
২১ ফেব্রুয়ারি যখন দৈনিক সংক্রমণ ১৩ হাজারের নীচে ছিল সেই সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নজরে আসে কয়েকটি রাজ্যে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। মন্ত্রক তৎক্ষণাৎ ছত্তিশগড়, কেরল ও মহারাষ্ট্রের মতো যেসব রাজ্যে সংক্রমণ বাড়ছিল সেখানে একটি চিঠি পাঠায়। এরপর নজরে আসে মহারাষ্ট্র, কেরল, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, পাঞ্জাব, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সাহায্য করার জন্য এবং প্রকৃত অবস্থা জানতে ২৪ ফেব্রুয়ারি সাতটি রাজ্যে উচ্চ পর্যায়ের কেন্দ্রীয় দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পুরো মার্চ মাস ধরে কেন্দ্র এইসব রাজ্যের সংক্রমণের বিষয়টি বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করে। রাজ্য সরকারগুলি পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে এবং কেন্দ্রীয় দলগুলি অবস্থা সামাল দিতে কী কী পরামর্শ দিয়েছে সেসব কিছু নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। যদি সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলি কেন্দ্রের সতর্কতা এবং পরামর্শ প্রথমেই গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করত তাহলে আজকের সংক্রমণ এতটা তীব্র হতো না। কেন্দ্র যখন সক্রিয়ভাবে কোভিড নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হয়েছে, বিরোধী নেতারা তখন স্বভাবসিদ্ধভাবে তাঁদের রাজনীতি চালিয়ে গিয়েছেন। উদ্ধব থ্যাকারে মহাউসুলি কেলেঙ্কারি চাপা দিতে সক্রিয় হয়েছিলেন। আর সেই সময় কংগ্রেস নেতৃত্ব—রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ওয়াধেরা কী করছিলেন? এনিয়ে আলোচনা না করাই ভালো। ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রীর টিকা নিয়ে মনোভাব এবং দীর্ঘ সময় ধরে রাজ্যে অনুপস্থিতির কথাও সকলের জানা। এই সময়েই কিছু কিছু বিরোধী-শাসিত রাজ্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে কোভিড ব্যবস্থাপনার খবর ঢালাওভাবে প্রচার করেছে।
সরকার অকাল বিজয় উদযাপন শুরু করেছে বলে কোনও কোনও মহল থেকে ভ্রান্ত সমালোচনা করা হচ্ছে। কিন্তু, আমরা যদি ১৭ মার্চ মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী কী বলেছিলেন সেটা একবার মনে করি, তাহলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। করোনায় প্রভাবিত বিশ্বের অধিকাংশ দেশই একাধিক বার মারণ এই ভাইরাসের প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। আমাদের দেশেও আক্রান্তের হার নিম্নমুখী হওয়া সত্ত্বেও হঠাৎ করেই কয়েকটি রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ... আমরা এটাও লক্ষ করেছি যে, মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশে আক্রান্তের হার এবং আক্রান্তের সংখ্যাও তুলনামূলক বেশি। ... বর্তমানে এমন সমস্ত এলাকা ও জেলা দেখা যাচ্ছে, যেখানে সংক্রমণের ঘটনা বাড়ছে কিন্তু এতদিন সেই সমস্ত জায়গায় সেভাবে সংক্রমণ ছড়ায়নি। একসময় এই জায়গাগুলি নিরাপদ বলে চিহ্নিত হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন এই জায়গাগুলিতেই সংক্রমণ বাড়ছে। দেশে ৭০টি জেলায় গত কয়েক সপ্তাহে ১৫০ শতাংশের বেশি সংক্রমণের হার বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে যদি মহামারীর উপর লাগাম টানা না-যায়, তাহলে সারা দেশে আরও একবার মারণ এই ভাইরাসের ঢেউ ছড়িয়ে পড়বে। তাই, আমাদের ক্রমবর্ধমান ‘দ্বিতীয় ঢেউ অবিলম্বে আটকাতে হবে। আমাদের তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমার মনে হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থানীয় স্তরে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় যেসব সমস্যা রয়েছে, তা অবিলম্বে পর্যালোচনা করে দ্রুত সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। প্রশাসনিক ব্যবস্থার কার্যকারিতা যাচাইয়ের উপযুক্ত সময় এসেছে। করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে আমাদের বিশ্বাস যেন আত্মবিশ্বাসে পরিণত না-হয় এবং আমাদের সাফল্য যেন কোনওভাবেই উপেক্ষার বিষয় না-হয়ে ওঠে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।’
এরপর কি মনে হয় যে কেউ বিজয় ঘোষণা করছেন এবং তিনি সঙ্কটের বিষয়ে অবগত নন! বর্তমান ঢেউয়ের বিষয়ে আন্দাজ করে কেন্দ্র সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য এবং জেলাগুলিতে বিশেষ দল পাঠিয়েছিল। এপ্রিল মাসে দেশজুড়ে সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলিতে ৫০টি কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হয়। এই দলগুলি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা ও নজরদারির বিষয়ে রাজ্য সরকারগুলিকে সাহায্য করেছে। মার্চের শেষে সংক্রমণ যখন বাড়তে থাকে, রাজ্যগুলি জেলা স্তরে সেই সময় বিশেষ ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। ২৭ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিকরা প্রায় ২০০টি জেলার পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেছেন। এখন যেহেতু প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাই কেন্দ্র নাগরিকদের জীবনরক্ষার জন্য বহুবিধ উদ্যোগ নিয়েছে। প্রথম পর্যায়ের টিকাকরণ অভিযানে স্বাস্থ্যকর্মী, সামনের সারিতে থাকা করোনা যোদ্ধা এবং প্রবীণ নাগরিকদের টিকা দেওয়া হয়েছে। সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকায় অনেক রাজ্য স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অপ্রতুলতা উপলব্ধি করে ওষুধ, অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং ভেন্টিলেটরের মতো গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলি দ্রুত পাঠানোর জন্য কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছে।
যে ভুল তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে আসল সত্য হল কেন্দ্রীয় সরকার মহামারীর মোকাবিলায় সবরকমের ব্যবস্থা নিয়েছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, চলতি সঙ্কটেও কেউ কেউ ভুল তথ্য দিয়ে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য প্রচার করে যাচ্ছেন। আমরা এই মহামারীর মোকাবিলা করা এবং নাগরিকদের চাহিদা পূরণ করার বিষয়গুলিকে সবথেকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছি। এই যুদ্ধে গোটা দেশকে একজোট হয়ে লড়তে হবে।
লেখক কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী। মতামত ব্যক্তিগত