সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে অবনতি। নানাভাবে অর্থ অপচয়। কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।প্রতিকার: ... বিশদ
প্রার্থী খুঁজতে গিয়ে বিজেপি যে সত্যিই দিশাহারা, তা এখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই তৃণমূল যখন তাদের সব প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিয়েছে, মোর্চারও কম-বেশি হয়েছে, তখন বিজেপি প্রার্থী খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছে। দলের বেশ কয়েকজন এমপি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে প্রার্থী করে বিজেপি তাদের দেউলিয়াপনা বুঝিয়ে দিল। আরও বুঝিয়ে দিল মোদিজি কিংবা অমিত শাহ প্রচারে এসে যতই লম্ফঝম্প করুন না কেন, যতই তোপ দাগুন না কেন, সবটাই শূন্য কলসির শব্দ। তৃণমূলের দল এত ভেঙেও তারা ২৯৪ আসন ভরাতে পারছে না। অথচ তারাই আবার সরকার গড়ার স্বপ্ন দেখছে!
তবে দ্বিতীয় পর্যায়ে দলবদলুদের কৃপায় মোটামুটি একটা প্রার্থী তালিকা তারা খাড়া করতে পেরেছে। তাদের অবস্থা কতটা অসহায়, তা বোঝা গিয়েছে যখন তারা বাধ্য হয়ে ৮৯ বছরের এক বৃদ্ধকে টিকিট দিল। সেই বৃদ্ধ প্রার্থী ক্যামেরার সামনে আবার বললেন, ‘আমি শরীরে বৃদ্ধ। হতে পারি কমজোরি, কিন্তু
মনে আমি বৃদ্ধ নই।’ প্রার্থী তালিকাকে ঘিরে এখন
যা অবস্থা, তাতে গেরুয়া শিবিরে আংশিক গৃহযুদ্ধ চলছে বলা যায়। এলাকায় এলাকায় আদি-নব্যের দ্বন্দ্ব, হুংকার, ট্রেনে গলা দেওয়ার হমকি, বিজেপি অফিস ভাঙচুর, আগুন, বড় বড় নেতাদের
ঘেরাও—এসব চলছেই। টিকিট কেলেঙ্কারিকে কেন্দ্র করে আদি বনাম দলবদলুদের লড়াই ঘিরে বিজেপিতে এখন পুরো নরক গুলজার।
এরপর হয়তো টিকিট না পাওয়া দলবদলু এবং টিকিট না পাওয়া আদি বিজেপিরা জোড়াফুলের
দিকে যাত্রা করবেন। অনেকেই পুনর্মুষিক ভব হতে চলেছেন। কয়েকজন তো ইতিমধ্যেই দুয়ারে কড়া নাড়তে শুরু করেছেন। এখন তো সবে শুরু। পিকচার আভি বাকি হ্যায়। ২ মের পর এমন একটা দিন আসতে পারে, যেদিন সকাল থেকে কালীঘাটের বাড়িতে লাইন পড়বে ঘর ওয়াপসি নেতাদের। ঘরের বাইরে মমতার ছেড়ে রাখা চপ্পলে মাথা ছুঁইয়ে তাঁরা বলতে পারেন, আমরা দিদির স্বপ্নের বাংলা গড়ার শরিক হতে চাই। সৈনিক হতে চাই। আমরা আজ থেকে আবার দিদির অনুগামী।
একটা জিনিস খেয়াল করেছেন কী, তৃণমূলের
দুই এমপি দিদির ষষ্ঠীপুজো করে বিজেপি ভজনা করছেন। মমতার দয়া এবং দাক্ষিণ্যে অনেক ক্ষমতা বাগিয়েছেন, সাংসদ হয়েছেন। তাঁরা কিন্তু এখনও তৃণমূলের এমপি পদে ইস্তফা দেননি। অপেক্ষা করছেন। হাওয়া বুঝে নিতে চাইছেন। ২ মের পর মমতা তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হলে তাঁরা আবার সুড়সুড় করে বিদ্রোহের পতাকা গুটিয়ে নিয়ে আত্মসমর্পণ করে এমপি পদটা বাঁচিয়ে নেবেন। কালীঘাটে ধর্না দিয়ে বলবেন, দিদি, আমরা সপরিবারে আপনারই অনুগামী।
সবকিছু দেখে মোদি-শাহ জুটি এখন বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন, যে জুমলার জোরে অন্য রাজ্যে সরকার গড়া যায়, সেই একই জুমলায় পশ্চিমবঙ্গে কাজ হবে না। তাঁদের সব জুমলাবাজি রাজ্যের মানুষের কাছে ধরা পড়ে গিয়েছে। তাই আমরা দেখতে পাচ্ছি বিজেপির সুপার স্টার অমিত শাহের সভায় ভিড় হচ্ছে না। গুলগাপ্পি মেরে সভা বাতিল করে ভার্চুয়াল বক্তৃতা করতে হচ্ছে তাঁকে। আবার যোগীর মতো একজন ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রীও এখানে এসে ভাষণে বলছেন, বিজেপি এখানে সোনার বাংলা গড়বে। ধর্ষণের স্বর্গরাজ্য উত্তরপ্রদেশের দিকে উনি ভালো করে একটু নজর দিন। কয়েকদিন আগের ঘটনা। উত্তরপ্রদেশের দশনা দেবী মন্দিরে এক মুসলিম যুবক তৃষ্ণায় কাতর হয়ে ঢুকে সেই মন্দির চত্বরের কল থেকে জল খেয়েছিলেন। তাই দেখে মন্দিরের কেয়ারটেকার তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করে। হায়রে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ! হায়রে ধর্মসহিষ্ণুতা! এরা আবার তৃষ্ণার্ত মানুষকে জলদানের আগে তার জাতপাত দেখে। এরা আবার হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে মন্দির তৈরি করে। পাশাপাশি দেশে ডিটেনশন ক্যাম্পও তৈরি করে। এরাজ্যের অনেক ভোটারই মনে করেন, বিজেপি কোনওভাবে এরাজ্যে ক্ষমতায় এলে এখানেও তারা অসমের মতো ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করে বহু মানুষকে সেখানে পুরে দেবে। কী হবে এখনও আমরা জানি না। তবে এটা জানি, যে ধর্মবোধ বিদ্বেষের জন্ম দেয়, যে ধর্ম মানবিকতা বিরোধী, সেই ধর্ম কেউ লালন করলে, সে সমাজবিরোধী ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই উত্তরপ্রদেশের একের পর এক ঘটনা আমাদের লজ্জায় ফেলে দেয়। আমাদের মনে ঘৃণার সঞ্চার করে। আমাদের মনে ক্রোধের উন্মেষ হয়। তাই আর একটা উত্তরপ্রদেশ আমরা চাই না। আর একটা ত্রিপুরা বা অসমও চাই না। আমরা বাংলাকে বাংলার মতো করেই গড়ে তুলতে চাই। বাংলার এই শান্তির নীড় যাতে কোনও ভণ্ড পরিযায়ী নেতার হাতে নষ্ট না হয়, তা নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকতেই হবে। কেননা এখন থেকেই চাপা হুংকার শুরু হয়েছে। একদিকে এ রাজ্যে প্রয়োজনের বেশি আধা সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে, এরাজ্য অশান্ত। অন্যদিকে, মোদিজির সভায় দাঁড়িয়ে মিঠুন চক্রবর্তীর মতো নেতা বলছেন, তিনি নাকি জাত গোখরো। তাঁর এক ছোবলেই সবাই ছবি হয়ে যাবে। কাকে এই হুমকি দিচ্ছেন তিনি? সারা জীবনে যতটুকু সম্মান তিনি বাংলার মানুষের কাছে পেয়েছেন, তার সবটাই তিনি ব্রিগেডের ওই মঞ্চে হারিয়ে ফেললেন। আর সেই ‘গোখরো’র হুমকি মঞ্চে বসে মুচকি হেসে উপভোগ করলেন মোদিজি।
আর মোদিজি কী বললেন, বললেন এ রাজ্যকে তিনি বদলে দেবেন। স্মরণ করা যেতে পারে, দেশে ক্ষমতায় বসার সময় মোদিজি সুশাসন সহ অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু দিনের পর দিন দেখা গিয়েছে, তাঁর ছাতি ৫৬ ইঞ্চির হলেও ক্ষমতার কলসিতে ফুটো। সবকিছু আর তাঁর নাগালের মধ্যে নেই। সার্বিক অর্থেই দিশাহারা কেন্দ্র। তলিয়ে
যাওয়া জিডিপি বাড়াতে মরিয়া ছিল বিজেপি।
তাই সেখানে ব্যর্থ হয়ে অন্য জায়গায় জিডিপি বাড়ালেন মোদিবাবু। জি ফর গ্যাস, ডি ফর ডিজেল, পি ফর পেট্রল। বাড়িয়ে দিলেন এসবের দাম। ব্যস কেল্লা ফতে। আহা, আমাদের দেশের জিডিপি বেড়ে গেল। এত যে মিথ্যার পরিবেশন, তাতে সম্ভ্রম
বাড়ে না। রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রবন্ধে বলেছেন, ‘এত লোকের হিত কখনোই মিথ্যার দ্বারা হইতে পারে না। কারণ, মিথ্যা সীমাবদ্ধ।’
এবার নির্বাচনে জড়িয়ে যাচ্ছে অন্য আবেগ। দেশের মধ্যে থেকেও কোথায় যেন বাঙালি আজ তার সার্বভৌমত্ব হারানোর ভয় পাচ্ছে। তাই এবারের নির্বাচন শুধু একজন শাসককে ক্ষমতায় বসানোর লড়াই নয়। এবারের যুদ্ধ অনেকটাই আবেগের, যুক্তির। যার মধ্যে জড়িয়ে আছে বাঙালি জীবনের একান্ত স্বাধীনতা, তার সংস্কৃতির স্বাধীনতা, প্রবহমান ঐতিহ্যের স্বাধীনতা এবং জড়িয়ে আছে আত্মিক আবেগের স্বাধীনতার বোধও। সেই সংস্কৃতিকে বাংলার বুদ্ধিমান মানুষ নিশ্চয় বিপন্ন হতে দেবেন না। মমতার শক্তি কিন্তু তাঁর দলের নেতারা নন।
মমতার শক্তি এ রাজ্যের জনগণ। যে জনগণ ছড়িয়ে আছে সিঙ্গুরে, আছে নন্দীগ্রামের ঘরে, আছে জঙ্গলমহলের সোনালি রোদের আল্পনা আঁকা উঠোনে, আছে নেতাইয়ের সবুজ মাঠে, বাঁকুড়ার পাতাছাওয়া ঘরে, রাঢ় বাংলার প্রান্তরে, মালদহের খেতে-খামারে, দুই ২৪ পরগনা, কোচবিহারের নারীশক্তির ভিতরে। এক বৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে
মমতা আজ একক যোদ্ধা। এবারের নির্বাচনে জয় পেলে তিনি হয়ে উঠবেন কিংবদন্তি নেত্রী। আবার সরকার পৌঁছে যাবে দুয়ারে। তাই তাঁর পাশ থেকে দু’চারজন স্বার্থান্ধ নেতার পলায়ন দেখে মানুষ কিন্তু বিভ্রান্ত হবেন না। মানুষ জানেন, জনপ্রতিনিধিদের আয়ু মাত্র পাঁচ বছর। কিন্তু জনগণেশই শেষ পর্যন্ত অসীম ক্ষমতার অধিকারী। তাই ভোটের আগেই আতঙ্ক গেরুয়া শিবিরে। মোদি-শাহর সভা থেকে এখনই কেন মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, এটা জানার জন্য কোনও গবেষণার দরকার নেই। আসলে
ফলেন পরিচিয়তে। সেই ফলের কটু স্বাদের পরিচয় তো আমরা সাত বছর ধরেই পাচ্ছি।