সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে অবনতি। নানাভাবে অর্থ অপচয়। কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।প্রতিকার: ... বিশদ
বহু পরীক্ষার ভিতর দিয়া যাইয়া সঙ্ঘের আজ পরম আনন্দের দিন আসিয়াছে। প্রত্যেক মানুষের জীবনে যেমন এক এক সময় এক একটি অবস্থা আসে তেমনি প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের জীবনেও এক এক সময়ে এক একটি শুভ সময় আসে। এই মাঘী পূর্ণিমা হইতে আগামী মাঘী পূর্ণিমা পর্য্যন্ত সঙ্ঘ-সন্তানদের একটি পরম শুভ সময়, মহা আনন্দের দিন। এই সময় এক একটি আদেশ পালনের ভিতর দিয়া ৫০ বৎসরের তপস্যার কাজ হইয়া যাইবে। ঠিক ঠিক ভাবমত চলিতে পারিলে সঙ্ঘ-সন্তানগণ যে কাজে হাত দিবে তাহাই সিদ্ধ হইবে, যে দিকে গতি ফিরাইবে সেই দিকেই অনায়াসে চলিতে পারিবে; যদি তাহারা আগুনকে বলে জল বা জলকে বলে আগুন তবে তাহাই সত্য হইয়া ফুটিয়া উঠিবে।
জগতে এমন কোন পাপতাপ মায়ামোহ আজ পর্য্যন্ত সৃষ্ট হয় নাই যাহা সঙ্ঘ-সন্তানদের কেশাগ্র স্পর্শ করিতে পারে, যতক্ষণ পর্য্যন্ত তাহারা সঙ্ঘনেতার ভাবে ডুবিয়া থাকিতে পারিবে। সর্বদা এই স্মৃতি, এই শক্তিই হৃদয়ে জাগাইয়া রাখিতে হইবে যে—আমি অলৌকিক মহাতপঃশক্তিশালী সঙ্ঘনেতার অন্তরঙ্গ সন্তান, আমি সর্ব্বদা তাঁহার আদেশ উপদেশ অনুসারে চলিতেছি; সুতরাং যখন যে কাজেই যাই না কেন তাহাতেই জয়ী হইব। আহারে বিহারে প্রতিনিয়ত এই মহাবাণীই প্রাণে মনে স্বর্ণাক্ষরে অঙ্কিত করিয়া রাখিতে হইবে যে—যদি কিছু মনন করিতে হয় তবে ঐ গুরুমূর্ত্তিই মনন করিব, যদি কোন কিছু শ্রবণ করিতে হয় তবে গুরুর আদেশই শ্রবণ করিব, যদি কোন কিছুর গুণগান করিতে হয় তবে গুরুগুণগানই কীর্ত্তন করিব। বাহিরের শরীরটি সঙ্ঘের কাজে পৃথিবীময় ঘুরিয়া বেড়াইবে, কিন্তু মনটি থাকবে এক জায়গায় স্থির—সেই গুরুচিন্তায় ডুবিয়া। তাহা হইলেই সঙ্ঘ-সন্তানগণ নিশ্চিন্ত মনে নির্ভাবনাতে চলিয়া মহাশান্তিসুখে কাল কাটাইতে পারিবে।
মানুষের জীবনে অনেক সময় অনেক রকম উত্থান-পতনের ভাব আসিয়া থাকে। তাহাতে বিব্রত ও ব্যতিব্যস্ত না হইয়া প্রকৃত বীরের ন্যায় আত্মশক্তির উপর নির্ভর করিয়া, আত্মবিশ্বাস বলে বলীয়ান্ হইয়া সঙ্কল্পিত ও আরব্ধ কর্ম্ম সম্পাদনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হইয়া, ধৈর্য্য স্থৈর্য্য অবলম্বন করিয়া অবিচলিত অচঞ্চলিত ভাবে চলিতে হইবে। স্বামী…র কর্ম্মশক্তির প্রভাবে শুধু রাজসাহী জেলাবাসীর জড়তা ও তমসাচ্ছন্নতা বিদূরিত হইবে না, এখন দিন আসিবে যখন সমগ্র দেশবাসী তাহার জ্ঞানালোকে আলোকিত ও কর্মশক্তির প্রভাবে প্রভাবান্বিত হইয়া জাগ্রত হইয়া উঠিবে। এই মহাবাণীর উপর আস্থা স্থাপন করিয়া বিপুল বিক্রম অনন্ত উদ্যম অধ্যাবসায় সহকারে আরদ্ধ সংকল্পিত কর্ম্ম করিয়া যাইতে হইবে। অনেক সময় ভিতরের নানাপ্রকার দুর্ব্বলতা দেখিয়ে আত্মশক্তির উপর অনাস্থা আসিয়া পড়িতে পারে। কিন্তু তাহাতে বিব্রত হইলে চলিবে না। কেননা, মানুষের জীবনে এইরূপ দুর্ব্বলতা অনেক সময়ই আসিয়া থাকে।
তোমাদের হিত তোমাদের অপেক্ষা আমি বেশী বুঝি। আর ছেলেমি করিয়া আমাকে বিব্রত করিও না। তোমরা কোনরূপ হৈচৈ করিলে গয়ার কার্য্য শৃঙ্খলামত হইতে বিলম্ব হইবে। এত কাল পর্য্যন্ত এই সংস্রবে থাকিয়া এখন কি সঙ্ঘকে ক্ষতিগ্রস্থ করিবে?...এখনও বলিতেছি—তোমরা প্রকৃতিস্থ হইয়া চল। এই শুভদিনে শুভ সময়ে সকল ছেলে শক্তি অনুসারে সমভাবে এই কার্য্যে সাহায্য করিবে; কিন্তু তাহা না করিয়া যদি কেহ আমাকে বিব্রত করে তবে তাহাকে কোন্ দিক দিয়া সমর্থন করিবার আছে? তুমি দ্বিধাশূন্য হইয়া নির্ণীত ও নির্ধারিত পথে চলিতে থাক। তুমি স্থির হইয়া কিছু দিন ওখানে থাক। ধৈর্য্য ধরিয়া থাক, অবাক হইবে তোমাদের শক্তি-সামর্থ্য দেখিয়া খুব শীঘ্রই তোমার অবস্থার পরিবর্তন হইবে। কথানুসারে চলিলে কোন দুর্ব্বলতা কিছু করিতে পারিবে না। আপন ব্যক্তিত্ব অস্তিত্বকে সঙ্ঘের হাতে সমর্পণ করিতে প্রস্তুত হও। কোন ভয় নাই। তোমরা বীরের সন্তান। এসব দুর্ব্বলতা তোমাদের কিছুই করিতে পারিবে না। ধীর স্থির হও, নিশ্চিত মনে নির্ভাবনাতে চল।
উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় শীঘ্রই প্রচারে বাহির হওয়া প্রয়োজন। এই জন্য কয়েকটি বক্তৃতা লিখিয়া লইয়া পূর্ব্ব হইতেই প্রস্তুত হইবে। সঙ্গে দুই একজন ব্রহ্মচারী ও স্কুল-কলেজের ছেলে থাকিতে পারে। তাহারা যখন যেখানে বক্তৃতা দেওয়া স্থির হইবে তখন সেখানে গিয়া বক্তৃতা সম্বন্ধে হ্যাণ্ডবিল প্রচার করিবে এবং গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের সহিত সাক্ষাৎ করিবে। এইরূপ ভাবে না চলিলে স্থানীয় জনসাধারণের নিকট হইতে বিশেষ সাড়া পাওয়া যাইবে না।
প্রত্যেক জনসভায় কিছু কিছু ‘সঙ্ঘবাণী’ ও ‘ব্রহ্মচর্যাম্’ চার্ট বিতরণ করিবে।
সঙ্ঘবাণী তোমাদের সঙ্ঘনেতার উপলব্ধ কয়েকটি মহান্ সত্য। এক একজন মহাপুরুষ এক এক সময় আসিয়া সাধনা দ্বারা কয়েকটি সত্যকে উপলব্ধি করিয়া জগতের কল্যাণের জন্য তাহা জনসমাজে প্রচার করিয়া যান। এই সঙ্ঘবাণীও তদ্রূপ জনসমাজের কল্যাণের জন্য প্রচারিত হইতেছে—এই কথা সকলকে ভালভাবে বুঝাইয়া দিবে। তাহা হইলেই সকলে ইহা শ্রদ্ধা সহকারে গ্রহণ করিবে ও যত্ন সহকারে দৈনিক পাঠ করিবে। দুই বৎসরের ভিতরে সারা বাঙ্গালায় এই জিনিস ঘরে ঘরে নিত্যপাঠ্য হইবে।
স্বামী…যাহাতে সত্বর প্রচার কার্য্যে বাহির হইবার জন্য প্রস্তুত হয়, তাহাকে সেই কথা বলিবে।
‘শ্রীশ্রী সঙ্ঘ-গীতা’ (২য় খণ্ড) ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ থেকে
