উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
বৈদিক যুগেও শক্তিপূজা প্রচলিত ছিল। ঋগ্বেদের দেবীসূক্ত ও রাত্রিসূক্ত এবং সামবেদের রাত্রিসূক্ত হইতে স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, বৈদিক যুগে শক্তিবাদ বর্ধিত হইয়াছিল। অষ্টমন্ত্রাত্মক দেবীসূক্তের ঋষি ছিলেন মহর্ষি অম্ভৃণের কন্যা ব্রহ্মবিদুষী বাক্। বাক্ ব্রহ্মশক্তিকে স্বীয় আত্মারূপে অনুভব করিয়া বলিয়াছিলেন, “আমিই ব্রহ্মময়ী আদ্যাদেবী ও বিশ্বেশ্বরী।” ঋগ্বেদীয় রাত্রিসূক্তের মন্ত্রদ্রষ্টা ছিলেন ঋষি কুশিক। ভুবনেশ্বরী দেবীর মন্ত্র ঋগ্বেদে প্রদত্ত। এই দেবীর বিভিন্ন মূর্তি আছে। ঋগ্বেদে বিশ্বদুর্গা, সিন্ধুদুর্গা ও অগ্নিদুর্গা এবং অন্যান্য দেবীর উল্লেখ আছে। ব্রহ্ম ও তৎশক্তি অভেদ—এই শাক্ত সিদ্ধান্তটি সামবেদীয় কেনোপনিষদের উপাখ্যান হইতে জানা যায়: দেবাসুর-সংগ্রামে ব্রহ্মশক্তি দ্বারাই দেবতাদের বিজয় হইল। স্বশক্তিতে জয়লাভ হইয়াছে মনে করিয়া দেবগণ গৌরবান্বিত হইলেন। তাঁহাদের মিথ্যাভিমান অপনোদন করিবার জন্য স্বশক্তিপ্রভাবে ব্রহ্ম বিস্ময়কর মূর্তিতে দেবগণের সম্মুখে আবির্ভূত হইলেন। দেবগণ আবির্ভূত পূজ্যরূপকে জানিতে না পারিয়া অগ্নিকে তৎসমীপে প্রেরণ করেন। পূজ্যরূপী ব্রহ্ম অগ্নিকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার নাম ও শক্তি কি?” অগ্নি বলিলেন, “আমি অগ্নি নামে প্রসিদ্ধ। এই পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে তৎসমুদয় আমি দগ্ধ করিতে পারি।” ব্রহ্ম অগ্নির সম্মুখে একটি তৃণ স্থাপন করিয়া উহা দগ্ধ করিতে বলিলেন। অগ্নি সর্বশক্তি-প্রয়োগেও তৃণখণ্ড দগ্ধ করিতে অসমর্থ হইয়া অবনতমস্তকে দেবতাগণের সমীপে ফিরিয়া আসিলেন। ব্রহ্মসমীপে বায়ু গমন করিলে ব্রহ্ম পূর্ববৎ তাঁহার নাম ও শক্তি জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলেন, ইনি বায়ু এবং পৃথিবীর সব কিছুই উড়াইয়া লইতে সমর্থ। ব্রহ্ম একখণ্ড তৃণ বায়ুর সম্মুখে রাখিলেন। কিন্তু বায়ু স্বশক্তির প্রভাবে উহা উড়াইতে অসমর্থ হইয়া লজ্জিতমুখে পলায়ন করিলেন। অনন্তর ইন্দ্র ছদ্মবেশী ব্রহ্মের সমীপে উপস্থিত হইলে ব্রহ্ম অন্তর্হিত হইলেন এবং তৎপরিবর্তে আকাশে সুশোভনা উমা হৈমবতী দেবীকে ইন্দ্র দর্শন করিলেন। দেবী তাঁহাকে জানাইলেন যে, ব্রহ্মশক্তির দ্বারা দেবতাগণ শক্তিশালী এবং অসুর-সংগ্রামী বিজয়ী।
স্বামী জগদীশ্বরানন্দ সম্পাদিত ‘শ্রীশ্রীচণ্ডী’ থেকে