উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
ঠাকুরের শরীরত্যাগের পর বৃন্দাবনে আছি। সকলেই তাঁর শোকে কাতর। একদিন রাত্রে ঠাকুর বলছেন, ‘তোমরা অত কাঁদছ কেন? আমি আর গেছি কোথা? এঘর আর ওঘর বৈ তো নয়?’ তখন কত হাঁটতে পারতুম। ঠাকুরের দেহ রাখার পর বৃন্দাবনে গিয়েছিলুম। তা হেঁটে হেঁটেই সব দর্শন করতুম। আহা, যোগেন ও আমরা বৃন্দাবনে কি আনন্দে কত জপ করতুম! চোখে মুখে মাছি বসে ঘা করে দিত—হুঁশ হত না। (বৃন্দাবনে) আমি রাধারমণের কাছে প্রার্থনা করেছিলুম, ‘ঠাকুর, আমার দোষদৃষ্টি ঘুচিয়ে দাও। আমি যেন কখনও কারও দোষ না দেখি।’ দোষ তো মানুষ করবেই। ও দেখতে নেই। ওতে নিজেরই ক্ষতি হয়। দোষ দেখতে দেখতে শেষে দোষই দেখে।
বৃন্দাবনে রেল থেকে নামছি। ছেলেরা আগে নেমেছে। গোলাপ গাড়ী থেকে জিনিসপত্র নামিয়ে দিচ্ছে। লাটুর হুঁকো-কলকেগুলো পড়েছিল, আমার হাতে দিয়েছে। লক্ষ্মী বলছে, ‘এই তোমার হুঁকো-কলকে ধরা হয়ে গেল।’ আমিও ‘ঠাকুর, ঠাকুর, এই আমার হুঁকো-কলকে ধরা হয়ে গেল’ বলে ধুপ করে মাটিতে ফেলে দিয়েছি। একদিন ঠাকুর ছেলে-যোগেনকে দীক্ষা দেবার কথা বললেন। শুনে আমার কেমন একটু ভয় হল, লজ্জাও করতে লাগল। প্রথম দিন দেখে ভাবলুম, এ আবার কি? লোকেই বা মনে করবে কি? সকলে বলবে, ‘মা এরই মধ্যে শিষ্য করতে লাগলেন।’ ওপর ওপর তিনদিন ঠাকুর ঐ একই কথা বলেন, ‘আমি ওকে দীক্ষা দিইনি, তুমি দাও।’ কি মন্ত্র দিতে হবে তাও বলে দিলেন। আমি তখন ছেলে-যোগেনের সঙ্গে কথা কই না। ঠাকুর মেয়ে-যোগেনকে দিয়ে তাকে বলতে বললেন। আমি তখন মেয়ে-যোগেনকে ঐকথা বলি। সে ছেলে-যোগেনকে জিজ্ঞাসা করে জানে যে, ঠাকুর তাকে মন্ত্র দেননি।ঠাকুর ছেলে-যোগেনকেও দেখা দিয়ে আমার কাছে মন্ত্র নিতে বলেছেন। সে ঐকথা আমার কাছে বলতে সাহস করেনি। যখন দেখলুম দুজনকেই বলেছেন, তখন তাকে মন্ত্র দিই। এই ছেলে-যোগেন হতে আমার দীক্ষা দেওয়া আরম্ভ হয়। ছেলে-যোগেন আমার খুব সেবা করেছে; তেমনটি আর কেউ করতে পারবে না।
ঠাকুরের শরীরত্যাগের পর আমি যখন কাশী এসেছিলুম তখন বেণীমাধবের ধ্বজার উপর উঠেছিলুম। হরিদ্বারে চণ্ডীর পাহাড় আর পুষ্করে সাবিত্রী পাহাড়েও উঠেছিলুম।
অভয়া দাশগুপ্ত সংকলিত ‘শ্রীশ্রীসারদাদেবী : আত্মকথা’ থেকে