উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
কিন্তু কী অদ্ভুত! আজ যে মোদি বলছেন বাংলার উন্নয়নে তিনি দিনরাত্রি পরিশ্রম করতে রাজি, তিনি নির্লিপ্ত কেন? তাহলে একটাই প্রশ্ন, একটা কলমের খোঁচায় তিনি এখনই চাইলে পারতেন এরকম
৫৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পুনরায় বাঁচিয়ে এই রাজ্যের শিল্পায়নের ব্যবস্থা নিতে। সত্যিই বলছি, এটা যদি তিনি করতেন তাহলে বাংলায় এখনই নানা ভাবে
এক লাখের বেশি কর্মসংস্থান হতে পারত।
বারবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তার জন্য অনুরোধও জানিয়েছিল। কিন্তু কেন বাংলার কাজ হারানো শ্রমিক আর বেকার যুবকদের মুখের দিকে তাকিয়ে এটা করা হল না?
ভোট এলে নাটকীয় ভঙ্গিতে নরেন্দ্র মোদি যা বলেন, পরে তথ্য নিয়ে মেলাতে গেলে দেখা যাবে, সব গোল! গোল পাকিয়ে দেবে মোদির বক্তব্য, আর তাঁর কাজের ফারাক। তিনি বলছেন, ক্ষমতায় এলে তিনি বাংলার মানুষের জন্য আয়ুষ্মান ভারতের সুবিধা দেবেন। মোদিজি, বিনীতভাবে জানতে চাই, কাদের জন্য আপনি এই সুবিধা দেবেন? আয়ুষ্মান ভারতের সুবিধা তারা পাবে যাদের কোনও স্মার্ট ফোন নেই, নিজের ঘরবাড়ি নেই। বাংলার সব মানুষ যেখানে যার আয় যতই হোক, ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সকলেই কিন্তু স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা পাচ্ছে। বিজেপি ক্ষমতায় এসে যদি তার বদলে আয়ুষ্মান ভারতের সুবিধা দেয় আর স্বাস্থ্যসাথী বাতিল করে (কথা শুনে তাই মনে হচ্ছে) তাহলে তো বাঙালির সর্বনাশ! তাহলে কেন বলা হল, আয়ুষ্মান ভারতের কথা? স্বাস্থ্যসাথী সকলের জন্য। আয়ুষ্মান কেবল অতি গরিবের জন্য। তাই না?
এরপর আসা যাক উন্নয়ন নিয়ে মোদি সরকারের মনোভাবে। দেশের মধ্যে সেরা হওয়া সত্ত্বেও বেঙ্গল কেমিক্যাল বন্ধ করার কথা বলা হচ্ছে। কেন?
এই গোটা রাজ্যের অর্থনীতির ভোল পাল্টে বিএসএনএল পুনরায় দাঁড়িয়ে যেত শুধু গভীর সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত মেগা ডাটা কেবল ও ওই প্রজেক্টের কাজটা করতে দেওয়া হলে। কেন হলো না? বদলে সেটা দেওয়া হলো রিলায়েন্সকে? তাতে তো রাজ্যের উন্নয়নে কেন্দ্র একটা বড় ভূমিকা নিতে পারত? বহু ছেলেমেয়ের চাকরি হতো!
আসলে কিছু সত্যিই করতে গেলে মন থেকে ভেবে বলতে হয়। দেখতে হয় কী করা যেতে পারে। মাত্র ৬৫০ কোটি টাকা খরচ করে রাজ্যের ৯২টি ক্ষুদ্র মাঝারি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে চাঙ্গা করতে পারতেন মোদিজি। কিন্তু সেটার জন্য কোনও উদ্যোগ নেওয়া হল না, আগেও নেওয়া হয়নি। আজও সেই উদ্যোগ নেওয়ার কথা ব্রিগেড থেকে বলা যেত। কিন্তু বলা হল না। চা বাগানের শ্রমিক থেকে পাট শিল্প বাঁচিয়ে তোলা নিয়ে মোদি কিছুই বললেন না। বাংলার এই সব শিল্পের পুনরুজ্জীবন কি বাংলার উন্নয়নে কাজে আসে না? আত্মনির্ভর ভারতের অঙ্গ নয়? তাহলে একবারের জন্য এসব কথা কেন আসে না?
শুধু ‘ভাইপো’ আর ‘পিসি’র সমালোচনা করলে প্রমাণ হয় না যে বিজেপি সত্যিই কিছু করে দেখাতে পারবে। শুধু নাটকীয় ভঙ্গিতে সোনার বাংলা গড়ে দেব বললে মাটির বাংলাও যে গড়া যাবে না, সেটা বাঙালি জানে। তাই দরকার স্পষ্ট কর্মসূচি ঘোষণা, নির্বাচনী ইস্তাহারে একটা অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের বিকল্প পরিকল্পনা। মোদিজি যা বলে গেলেন, তাতে মনে প্রশ্ন জাগছে, তিনি সত্যিই কি এই রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে ভাবছেন? তাহলে সেজন্য কী কী করবেন সেটা আগে জানান। আর কেন এতদিন কেন্দ্র রাজ্যের উন্নয়নে বাধা দিয়েছে, সেটাও জানাবেন। প্রিয় বাংলার উন্নয়নে কয়লার সেসের টাকাটা পর্যন্ত সময়মতো দেওয়া হয় না কেন্দ্রের তরফে। বাংলার মতই একটা ঋণ জর্জর রাজ্যের হাতে সেটা ছাড়াও দেওয়ার আরও কিছু ছিল। এই রাজ্য ধান, পাট, তামাক চাষে দেশে এক নম্বর। কৃষিতে ফসল উৎপাদনে সবচাইতে এগিয়ে বাংলা, দেশের মধ্যে এক নম্বর স্থানে এই রাজ্য। অসংগঠিত ক্ষেত্রেও এক নম্বর। একমাত্র উত্তরপ্রদেশের মতো
বড় রাজ্য আর শিল্পোন্নত গুজরাত ছাড়া দেশে
বিজেপি শাসিত সমস্ত রাজ্যের আয় পশ্চিমবঙ্গের থেকে কম। আর উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত আয়ে এগিয়ে থাকলেও সেখানকার মানুষ সরকারের কল্যাণ কর্মসূচিতে পায় সামান্যই। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সামাজিক কল্যাণেও দেশের সেরা। এরপরে এসে আর কীসে বাংলাকে এগিয়ে দেবেন? শিল্পে? সেটা নিয়েও তো খামোকা রাজনীতি করে কেন্দ্র। অন্তত ৩২টি সরকারি সংস্থা যারা যথেষ্ট ভালো অবস্থায় ছিল তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান না দিয়ে। সেটা হলে এই রাজ্য শিল্পে এগিয়ে যেত আরও। তাহলে তা কেন করা হয় না?
রাজ্যে এসে আর কী করবেন মোদিজি? বরং কেন্দ্রের তথ্য আর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রকাশিত তথ্য দেখাচ্ছে, প্রতিটা বিজেপি শাসিত রাজ্যের উন্নয়নের হার কমছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে এই বছরেও বেড়েছে। তাহলে বাঙালির ভালো করতে কী প্রয়োজন? বাংলার শিল্প বিকাশে বাধা না দিয়ে, রাজনীতি না করে, দ্রুত প্রতিটা প্রকল্পের জন্য ছাড় দেওয়া! শুধু সেটা করলেই হবে। আর রাজ্যের প্রকৃত উন্নয়ন যদি বিজেপি চায় তাহলে কথা দিক, রাজ্যের ক্ষমতায় আসুক বা না আসুক, এরাজ্যে অবস্থিত একটাও কেন্দ্রীয় সংস্থার বেসরকারিকরণ হবে না, কর্মী ছাঁটাই করবে না কেন্দ্র। কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থা বন্ধ হবে না। শুধু এইটুকু প্রতিশ্রুতি দিন মোদিজি, ব্যস এইটুকু! বাকি উন্নয়ন নিয়ে না হয় পরে কথা হবে।