উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
বিশ্বনাথবাবুর বয়স এখন ৬৮। এখন অবসর যাপনের জীবন। রামবাবুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ছলছল চোখে তিনি বলেন, অভাবের তাড়নায় একসময়ে অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়েছিলাম। তাতে সামান্য কিছু টাকা যেমন পাওয়া যেত, তেমনই নেশার জিনিস কেনার টাকাও জুটে যেত। তাঁর কথায়, তখন ডানলপ কারখানা বন্ধ। ওই কারখানা খোলার জন্য আন্দোলন চলছিল। যোগ দিয়েছিলাম তাতে। পায়ে গুলি লাগল। চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন রামবাবু। পরিচয় হয় সেখান থেকেই। সেই সময় গঙ্গার দু’পাড়ে কারখানা খোলা রাখার জন্য মালিকপক্ষের সঙ্গে লড়াই করতে দেখেছি ওই নেতাকে। একবার তারকেশ্বরে ভোট প্রচারে বেরিয়েছিলেন মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের এই প্রার্থী। বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, ভোটটা দিবি তো? উত্তরে বলেছিলাম, আপনি ছাড়া ভোট দেব কাকে? দিন কয়েক পরে তারকেশ্বরে বিড়লা ধর্মশালায় আমাকে ডাকলেন তিনি। জিজ্ঞাসা করলেন নাম। সব শুনে বললেন, তোকে চাকরি করতে হবে। পড়াশোনা জানি না, কী করে চাকরি পাব! একদিন ওনার বাড়িতে যেতে বললেন। পরে দেখা করতে বললেন অফিসে। বারাকপুর জেলাশাসকের দপ্তরে গ্রুপ ডি পদে মিলল চাকরির নিয়োগপত্র।
বিশ্বনাথবাবু বললেন, সেই চাকরির চিঠিটাই বদলে দিল আমার জীবন। অন্ধকার জগতের মোহ কাটিয়ে ফিরে এলাম মূলস্রোতে। শুধু আমার নয়, তারকেশ্বরের বহু মানুষকে চাকরি দিয়েছেন রামবাবুর। বাঁচতে শিখিয়েছেন মাথা উঁচু করে।
রামবাবু যখন অসুস্থ, তখন একদিন কলকাতায় গিয়েছিলাম তাঁকে দেখতে। নিরাপত্তার কড়াকড়ি, হাসপাতালের দোতলায় কাউকেই উঠতে দেওয়া হচ্ছিল না। পুরনো বিদ্যা কাজে লাগিয়ে পাইপ বেয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করি। ধরে ফেলেন নিরাপত্তা কর্মীরা। কীভাবে যেন খবর যায় রামবাবুর কানে। তিনি তারপর লোক পাঠিয়ে ডেকে পাঠান। তারকেশ্বর মন্দিরের চরণামৃত নিয়ে হাজির হয়েছিলাম সেদিন। ১৯৮৬ সালের ৬ জুলাই রামবাবুর মৃত্যু হয়। তবে আমার কাছে তিনি আজও জীবন্ত। প্রতিদিন ঠাকুরের আসনে ফুল, ধূপ দিয়ে পুজো করি তাঁকে। একই কারণে আজও তারকেশ্বরের অনেক বাসিন্দা তাঁকে দেবতা রূপে পুজো করেন।