উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
সৎকাজ এত কম হয় কেন জানো? কোন ভদ্রমহিলা একটি বস্তিতে গেলেন।...তিনি কয়েকটি টাকা দিয়া বলিলেন, ‘আহা, গরীব বেচারীরা! ইহা লইয়া সুখী হও।’...আবার কোন সুন্দরী হয়তো রাস্তা দিয়া যাইতে যাইতে একজন দরিদ্রকে দেখিলেন এবং কয়েকটি পয়সা তাহার সম্মুখে ছুঁড়িয়া দিলেন। ভাবো দেখি, ইহা কিরূপ নিন্দনীয়! আমরা ধন্য যে, এই বিষয়ে তোমাদের বাইবেলে ভগবান্ আমাদিগকে উপদেশ দিয়াছেন। যীশু বলিতেছেন, ‘তোমরা আমার এই ভ্রাতৃগণের মধ্যে দীনতম ব্যক্তির জন্য ইহা করিয়াছ বলিয়া ইহা আমারই জন্য করা হইয়াছে। তুমি কাহাকেও সাহায্য করিতে পারো, এইরূপ চিন্তা করাও অধর্ম। প্রথমত: সাহায্য করার ভাবটি মন হইতে উৎপাটিত কর, তারপর উপাসনা করিতে যাও। ঈশ্বরের সন্তানসন্ততি যে তোমার প্রভুরই সন্তান। (আর সন্তান তো পিতারই ভিন্ন ভিন্ন মূর্তি।) তুমি তো তাঁহার সেবক।...জীবন্ত ঈশ্বরের সেবা কর! ঈশ্বর তোমার নিকটে অন্ধ, খঞ্জ, দরিদ্র, দুর্বল বা পাপীর মূর্তিতে আসেন। তোমার জন্য উপাসনার কী চমৎকার সুযোগ! যে-মুহূর্তে চিন্তা কর যে, তুমি ‘সাহায্য’ করিতেছ, তখনই সমস্ত আদর্শটি নষ্ট করিয়া নিজেকে অবনত করিয়া ফেলিয়াছ। এইটি জানিয়া কাজ কর। প্রশ্ন করিবে, ‘তার পর?’ তোমাকে আর হৃদয়ভেদী ভয়ানক দুঃখে পড়িতে হইবে না।...তখন কর্ম আর বন্ধন হইবে না। কর্ম খেলা হইয়া যাইবে, আনন্দে পরিণত হইবে। কর্ম কর। অনাসক্ত হও। ইহাই সম্পূর্ণ কর্মরহস্য। যদি আসক্ত হও, দুঃখ আসিবে।...জীবনে আমরা যাহাই করিতে যাই, তাহার সঙ্গে নিজেদের এক করিয়া ফেলি। এই লোকটি কটু কথা বলিল, আমার মনে ক্রোধের সঞ্চার হইল। কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যে ক্রোধের সঙ্গে আমি এক হইয়া গেলাম—তারপরই আসে দুঃখ। নিজেকে ভগবানের সঙ্গে যুক্ত কর, আর কিছুর সঙ্গে নয়; কারণ আর সব কিছুই অসত্য। অনিত্য অসত্যের প্রতি আসক্তিই দুঃখ আনে। একমাত্র সৎস্বরূপই সত্য; তিনিই একমাত্র জীবন, তাঁহাতে বিষয়-বিষয়ী (object and subject)-বোধ নাই।
স্বামী বিবেকানন্দের ‘মহাপুরুষ প্রসঙ্গ’ থেকে