উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে শুভ ফল পাবে। কর্মপ্রার্থীদের ... বিশদ
হরিচাঁদ দিন ধার্য্য করে দিলেন। হরিচাঁদের শ্রীমুখের আদেশ পাওয়া মাত্র স্বরূপ মহোৎসবের আয়োজনে ব্যস্ত হলেন। যেখানে যত হরিভক্ত আছেন তিনি একযোগে সকলকে আমন্ত্রণ জানালেন। নির্ধারিত দিনে হরিচাঁদ দেড়শতাধিক হরিভক্ত সঙ্গে নিয়ে পাইকডাঙ্গা অভিমুখে যাত্রা করলেন। মৃত্যুঞ্জয় দশরথ, গোলক, হীরামন গোস্বামী প্রমুখ প্রধান প্রধান ভক্তগণ অগ্রে অগ্রে চলেছেন। নামের প্লাবনে দেশ গ্রাম প্লাবিত করে তাঁরা ফুকুরা গ্রামে এসে উপস্থিত হলেন। সেই গ্রামে ঈশ্বর অধিকারী নামে একজন ব্রাহ্মণ ভক্ত বাস করেন, তিনি একখণ্ড ছিন্ন কন্থা গলায় দিয়ে দন্তে একগাছি তৃণ ধারণ করে অবারিত অশ্রু ধারায় বক্ষ স্থল প্লাবিত করে প্রভুর গমন পথে দীনহীন কাঙাল ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। মুখে তাঁর কোন ভাষা নেই কিন্তু তাঁর মনোবাসনা ভক্তবৃন্দ নিয়ে প্রভু তাঁর গৃহে পদার্পণ করুন। তাঁর সেই ভাষাহীন কাতর আবেদনে প্রভুর মনে দয়ার সঞ্চার হল। তিনি ভক্তগণের নিকট জিজ্ঞাসা করলেন তোরা বলতো কি করি, ঠাকুর বাড়ীতে কি যাওয়া উচিৎ। ঠাকুরের আজ্ঞা পেয়ে ভক্তগণ উল্লাসে হরিধ্বনি দিয়ে সংকীর্তনরতাবস্থায় অধিকারী গোস্বামীর গৃহ প্রাঙ্গণে উঠে নাম সংকীর্তনে মত্ত হলেন। অধিকারীর গলায় যে ছেঁড়া কাঁথা ছিল হীরামন সেই কাঁথা নিজ মস্তকে বেঁধে হরিবোল হরিবোল বলে নৃত্য ফিরতে লাগলেন। কীর্তন সাঙ্গ হলে জলযোগান্তে সকলে পুনরায় পাইকডাঙ্গা যাত্রার উদ্যোগ করতে লাগলেন। হরিচাঁদ ভক্তগণে ডেকে বলেন, ওরে হীরামনের মনোভাব বুঝিস কিছু? অধিকারীর ছিল্লকন্থা মস্তকে বেঁধে দীনহীন সেজে নৃত্য করে ফিরছে। ওর মনের ভাব আমি প্রভুর দাসানুদাস, পথচলার বাধা বিপত্তি আমার উপর দিয়েই যাক প্রভু নিশ্চিন্তে পশ্চাতে আসুন। আমি প্রভুর দীনহীন বার্তাবাহক তাই’ত মস্তকে ছিন্নকন্থা বেঁধে নিজের দৈন্যতার বার্তা দিচ্ছে। হীরামন তাঁর ইচ্ছানুযায়ী অগ্রে গমন করুক, তদ্পশ্চাতে অধিকারীর পশ্চাতে আমি আনন্দিত মনে গমন করি। আমার পশ্চাতে দশরথ, মৃত্যুঞ্জয় তদ্পশ্চাতে ভক্তগণ নেচে গেয়ে আসুক, গোলক চলুক তাঁর ইচ্ছামত। তিনি বলেন, অধিকারী তুমি আমার অগ্রে থেকে তুমি গান শুরু করো, ভক্তগণ তোমার সঙ্গে দোহারী করে নেচে গেয়ে চলুক। এই ভাবে সকলে স্বরূপের গৃহে গিয়ে উপস্থিত হও। হরিচাঁদের নির্দেশ মত অধিকারী তাঁর সুমধুর উচ্চ কণ্ঠে গান ধরলেন এবং পশ্চাতের ভক্তগণ সেই সংগীতের সঙ্গে সুর মিলিয়ে গাইতে লাগলেন।
শ্রীমতী মীরা হালদারের ‘শ্রী শ্রী হরিলীলা কথামৃত’ থেকে