উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে শুভ ফল পাবে। কর্মপ্রার্থীদের ... বিশদ
অনেকে মনে করেন যে, যে বিষয় অথবা যে ভাষা শ্রোতার বোধের অগোচর তাহা শ্রবণ করিয়া কোন প্রকার ফল লাভ হইতে পারে না। লৌকিক জগতে ইহা খুব সত্য কথা। কিন্তু অধ্যাত্ম ক্ষেত্রে সাধক শ্রোতার শ্রবণরূপ সাধনা তাহার বুদ্ধি অথবা বিচার শক্তির সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে না। বেদ-বাক্য অপৌরুষেয়, মহাজন বাক্য অপৌরুষেয় না হইলেও মহাজ্ঞানী ঋষিমুনিদিগের নিজ মুখে উচ্চারিত। এই প্রকার অন্যান্য সিদ্ধবচনও বুঝিতে হইবে। এই সকল শব্দের মধ্যে প্রচ্ছন্নভাবে চৈতন্যশক্তি নিহিত রহিয়াছে। এই শব্দগুলির কেবলমাত্র লৌকিক শব্দ নহে, যদিও সাধারণ শ্রোতার নিকট ইহারা সাধারণ শব্দরূপে প্রতীত হয়।
এই সকল শব্দের অন্তঃস্থিত শক্তির প্রভাবে মানুষের জীবন প্রভাবিত এমন কি পরিবর্তিত হইয়া থাকে। কিন্তু ঐ গুপ্ত শক্তিকে কার্যকরী রূপ পাইতে হইলে পূর্ণ শ্রদ্ধার সহিত ঐ সকল বাক্য শ্রবণ করিতে হয়। বিশুদ্ধ শ্রদ্ধার ফলে ঐ সকল শব্দ জাগিয়া উঠে অর্থাৎ চৈতন্যময়ী শক্তিরূপে আত্মপ্রকাশ করে। এই চৈতন্যময়ী শক্তির প্রভাবে দেহ, প্রাণ ও মনের যাবতীয় শৃঙ্খল ক্রমশঃ ছিন্ন হইয়া যায়। এই জন্য বুদ্ধিদ্বারা বুঝিতে না পারিলেও ভগবদ্বাণী অথবা মহাজনের বাণী শ্রবণ করিতে হয়। অনেক সময় বুদ্ধিপূর্বক শ্রবণের পরিবর্তে ঐ প্রকার সরল ও সাদর শ্রবণের ফলে সাধকের অন্তঃকরণের আবরণ খুলিয়া যায় এবং সাধক জ্ঞান ও অজ্ঞান উভয়ের অতীত নিজস্বরূপে স্থিতি লাভ করিতে সমর্থ হয়। সুতরাং অনুভবে না আসিলেই যে সৎকথা ও সৎপ্রসঙ্গ শ্রবণ করিবে না ইহা সত্য নহে, কারণ অনুভবে না আসিলেও শুধু শ্রবণের ফলে অনুভবের পথ খুলিয়া যায়। তা’ই মা বলিয়াছেন, ‘‘এইসব কথা শুনতে শুনতে ধীরে ধীরে ঐ দিকের রাস্তা খোলে। জল প’ড়ে প’ড়ে যেমন পাথরে ছিদ্র হয়।’’
গ্রন্থপাঠ, সৎকথা এবং কীর্তন এই তিনটি স্থূলত পৃথক্ পৃথক্ মনে হইলেও বিষয় গুণে অভিন্ন। কারণ সর্বত্রই ভগবৎ-প্রসঙ্গই একমাত্র অবলম্বন।