উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে শুভ ফল পাবে। কর্মপ্রার্থীদের ... বিশদ
ঠাকুরের পথে আসতে গেলে নানারকম বাধা আসবে। শরীর যাবে, মন যাবে, নানাভাবে মারের আক্রমণ হবে। যে এইসব বাধা অতিক্রম ক’রে ঠাকুরকে ভালবাসতে পারবে ও ঠাকুরের দেওয়া পথকে গ্রহণ করতে পারবে, সে-ই সার্থক জীবন লাভ করবে।
শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলেছেন, ‘ঈশ্বর আছেন, তাঁর জগৎ দেখলে বোঝা যায়।’ এ কথাটা যে কত গভীর এবং এর ভেতর যে কত দ্যোতনা রয়েছে সেটা একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা যায়। মানুষের ক্ষেত্রেও দেখা যায় ইতিহাসের পাতায় সে বিশেষভাবে চিহ্নিত হয় তার activities-এর মাধ্যমে। সাধারণ একটি লোক গতানুগতিক জীবনযাপন করছে, তার অস্তিত্ব তার মৃত্যুর সঙ্গেই মুছে যাবে। শত বৎসর বাঁচলেও ইতিহাস তাকে চিহ্নিত করবে না। বাল্মিকী, কালিদাস তাঁদের প্রতিভার মাধ্যমেই ঐতিহাসিক পুরুষ হলেন। তাঁদের প্রতিভা না থাকলে কেউ কি চিনতো!
অবতারপুরুষও তাঁর জীবনকে কোন সীমিত গণ্ডীর ভেতর বন্দী ক’রে রাখেন না। তিনি সৃষ্টি ক’রে নেন একটি বিরাট গোষ্ঠীর, এবং যুগ অনুযায়ী তাঁকে নানা ধরণের প্রকাশের মাধ্যম খুঁজে নিতে হয়। তাঁর সেই বিচিত্র activities-ই তাঁকে সর্বজনীন বলে প্রকাশ করে।
এর মধ্যে আর একটা কথা আসে— ঠাকুর তো আসেন তাঁর লীলার রাজ্যে, কিন্তু সেখানেও তো অনেক গোলমাল। সেখানে ভালই তো সব থাকে না, অনেক মন্দও জুটে যায়, যা সাধারণের কাছে বিশেষ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। এই গোলমালও কি তাঁর activities-এর মধ্যে পড়ে? আমরা বলব— হ্যাঁ, কারণ, সেগুলিও তাঁর অস্তিত্বের প্রমাণ দিচ্ছে। জগতের ভালমন্দ সবকিছু ঈশ্বরের প্রমাণ দিয়ে থাকে।
একটানা ভাল থাকলে হয়তো মনে হ’ত প্রাকৃতিক একটা নিয়মে জগৎ চলেছে। কিন্তু বিপরীত ভাবের বৈচিত্র্য আছে বলে মানুষের মনে দ্বন্দ্ব আসছে, যার থেকে সৃষ্টি হচ্ছে প্রশ্নের। আর সে প্রশ্নের উত্তর আসছে তার নিজের ভেতর থেকেই। সেটি হচ্ছে তাঁর অস্তিত্বে বিশ্বাস। অবতারের ক্ষেত্রেও মন্দের অবস্থিতিটি লীলাপোষ্টাই-এর কাজ করে এবং তাঁর মহৎ সৃষ্টি গুলিকে আরো প্রকট করে তোলে। কথামৃতে ঠাকুর তো বলেছেন, জটিলা কুটিলার প্রয়োজনীয়তার কথা। তাই ঈশ্বর অবতাররূপেও যখন নেমে আসেন তখন তাঁকেও নানা বিচিত্র লীলার সৃষ্টি করতে হয়। তাঁর অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে সাধারণ মানুষের মতই তিনি আসেন। আসেন একটি গৃহে, একটি পরিবারের মধ্যে।
Situation বা পরিস্থিতিই নিয়ম তৈরী করে। কারণ, জীবনের অর্থই হ’ল নানা বিচিত্র পথ ধরে চলা। কাজেই আবহমানকাল ধরে একই নিয়মে একটানা চলা কোনও মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। সাধারণভাবে একটি মানুষকে দিয়েও যদি আমরা বিচার করি, দেখতে পাব—শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত তার দ্রুত দৈহিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। তার সঙ্গে সঙ্গে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অদ্ভুতভাবে বদলে যাচ্ছে। খাওয়া-পরা, আচার-ব্যবহার, সবকিছুই। তেমনি সমাজজীবনে এবং সংঘজীবনেও নানান ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে চলতে গিয়ে বিচিত্র অবস্থার সৃষ্টি হয়। তখন কোনও মতেই সম্ভব নয় একই নিয়মে জীবনটাকে চালানো। সেক্ষেত্রে Situation বা পরিস্থিতি অনুযায়ী নতুন নিয়ম আপনিই সৃষ্টি হয়ে যায় বা করে নিতে হয়।
শ্রীঅর্চনাপুরী মাতার ‘ছড়ানো মুক্তো’ থেকে